ছবি : সংগৃহীত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গতকাল গণভবনে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ সহযোগিতা কামনা করেন। সরকারপ্রধান বলেছেন, ‘পদ্মা সেতুর মাধ্যমে এরই মধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। আমি চাই বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে চীন সহায়তা করুক।’
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনা রাষ্ট্রদূতকে বলেছেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চল এতদিন অবহেলিত ছিল। কারণ আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো সরকারই এ এলাকার উন্নয়নে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
এ সময় চীনের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। সেই সঙ্গে শেখ হাসিনাকে আগামী জুলাইয়ে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানালে প্রধানমন্ত্রী তা গ্রহণ করেন।
চীন বাংলাদেশের বিশাল উন্নয়ন সহযোগী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, দুই দেশের মধ্যে যে সহযোগিতা চলছে তা আগামীতে আরো জোরদার হবে। পায়রায় একটি গভীর সমুদ্র বন্দর হবে এবং চীন সে সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে।
দক্ষিণাঞ্চলকে দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ এলাকায় কয়েকটি বড় নদী রয়েছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবও অনেক বেশি। আমরা এখন ওই অঞ্চলের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’
গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিভিন্ন দিক থেকে এটি একটি চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন ছিল। আমরা তা কাটিয়ে উঠে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করেছি। আমরা একটি টেকসই সরকার গঠন করেছি এবং দেশে একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সরকার দেশের উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিতে চায়।’ বিশ্বস্ত বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে চীন বাংলাদেশকে সাহায্য করবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়নে চীন বাংলাদেশকে সহায়তা করবে, যেগুলো এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পন্ন করছেন। ২০৪১ সাল নাগাদ শেখ হাসিনার “স্মার্ট বাংলাদেশ” গড়ার রূপকল্প বাস্তবায়নে চীন বাংলাদেশের পাশে থাকবে।’
জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফর সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘আশা করা যায় বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিশেষ করে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। দুই দেশের মধ্যে উন্নয়ন অংশীদারত্ব আরো জোরদার হবে।’ রাষ্ট্রদূত এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে তার আসন্ন চীন সফরে বাংলাদেশ বিমানের ঢাকা-বেইজিং ফ্লাইটের প্রথম ফ্লাইটটি ব্যবহারেরও অনুরোধ জানান।
ওয়েন আরো বলেন, ‘চীন বাংলাদেশকে কৃষি, গ্রিন এনার্জি, আইসিটি ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে বিনিয়োগ ও সাহায্য করতে চায়। সেই সঙ্গে আম, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং চামড়াজাত পণ্য আমদানি করতে আগ্রহী চীন।’
চীনের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে মেট্রোরেলের জন্য অংশীদারত্ব করতে তার দেশের আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং যুবক, তরুণ নেতা, নারী নেত্রী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়েও আগ্রহ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে সহযোগিতা জোরদার হবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চীন কাজ করছে।’
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল অ্যান্ড নার্সিং কলেজের ব্যবস্থাপনা টিম গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে যায়। কেপিজে হেলথকেয়ার বেরহাদ সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক চিন কিট চুয়ান দলের নেতৃত্ব দেন। এ সময় যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সরকারের বিভিন্ন বাস্তবমুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশে দারিদ্র্য হারের পাশাপাশি শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে সক্ষম হয়েছে। মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলো নিশ্চিত করার জন্য আমরা সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেছি। এর ফলে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। শিল্পাঞ্চলে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যাতে এলাকার শ্রমিক ও মানুষ সহজে মেডিকেয়ার সুবিধা পেতে পারে।’
হাসপাতালটি বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এবং আমার বোন শেখ রেহানা জনগণের স্বার্থে আমাদের সব সম্পত্তি ট্রাস্টকে দান করে দিয়েছি। আমাদের কেউ নেই এবং আমরা জনগণের কল্যাণে আমাদের সম্পত্তি দান করেছি।’
