এআই নীতি প্রণয়নে সব অংশীজনকে সম্পৃক্তের আহ্বান টিআইবি ও আর্টিকেল নাইনটিনের

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নীতি ২০২৪ খসড়া প্রণয়নে উদ্যোগী হওয়াকে স্বাগত জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও আর্টিকেল নাইনটিন। তবে দেশের নাগরিকদের ওপর সুদূরপ্রসারী ও ব্যাপক বিস্তৃত প্রভাব রয়েছে এমন একটি নীতির খসড়া প্রস্তুত ও পর্যালোচনা প্রক্রিয়ায় আগে নাগরিক অধিকার ও আইনের শাসন নিয়ে কাজ করে এমন কোনো নাগরিক সংস্থাকে যুক্ত না করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক এ সংস্থা দুটি।

একইসঙ্গে বুধবার (৩ এপ্রিল) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতির খসড়া নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনায় মানবাধিকার ও সুশাসন নিয়ে কর্মরত সংস্থাগুলোকে উপেক্ষার বিষয়েও হতাশা প্রকাশ করেছে সংস্থা দুটি। জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতি প্রণয়নের প্রতিটি ধাপে নাগরিক অধিকার সংস্থাসহ সব অংশীজনকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি ও আর্টিকেল নাইনটিন।

যৌথ বিবৃতিতে সংস্থা দুটির পক্ষ থেকে বলা হয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতির খসড়া মূলত বিভিন্ন দেশের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকেন্দ্রিক অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকারি সেবা, শাসন ও বিচারিক ব্যবস্থা, টেলিযোগাযোগ, ডেটা গভর্ন্যান্স, নজরদারি ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হলেও, এ নীতির ফলে দেশের নাগরিকের ওপর বহুমুখী প্রভাব সম্পর্কে সুস্পষ্ট আলোচনা করা হয়নি। এমনকি, এই খসড়া প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে সম্পৃক্তের বিষয়টি স্রেফ উপেক্ষা করা হয়েছে।

খসড়ার মূলনীতির অংশ হিসেবে ৩.৬ অনুচ্ছেদে আইনের শাসন ও মানবাধিকার উল্লেখিত হওয়াকে উৎসাহব্যঞ্জক বিবেচনা করে টিআইবি ও আর্টিকেল নাইনটিন উদ্বেগ প্রকাশ করছে যে নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত প্রাধান্যের ক্ষেত্র, বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আইনের শাসন ও মানবাধিকারসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো গুরুত্ব দেয়া হয়নি। যা ঝুঁকিপূর্ণ ও অগ্রহণযোগ্য।

অন্যদিকে জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নীতি ২০২৪ খসড়া অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট দফতর ও সংস্থাগুলোকে নিয়ে স্বাধীন জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হবে। জাতীয় এআই উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের কথাও বলা হয়েছে সংস্থায়। কিন্তু এ পরিষদের উপদেষ্টা, চেয়ারম্যানসহ প্রায় সব সদস্যই সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি। ফলে এই পরিষদের স্বাধীনতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন থেকে যায়, একইভাবে মানবাধিকার বা নাগরিকের তথ্যসহ সব সুরক্ষার বিষয় গৌণ হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায়, জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নীতি ২০২৪ খসড়া পর্যালোচনা ও নীতি প্রণয়নে একটি সময়াবদ্ধ কর্মকৌশল তৈরি, নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে ও এআই উপদেষ্টা পরিষদ গঠনে বিশেষজ্ঞসহ নাগরিক অধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি ও আর্টিকেল নাইনটিন।

হ্যাকিং, স্প্যামিংয়ের পাশাপাশি মিথ্যা বা ভুয়া তথ্য প্রচার, ভুয়া ভিডিও বানানোর মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বা রাষ্ট্রীয় নজরদারিতে এআই-এর ব্যাপক ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। ফলে তা নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা, গোপনীয়তার বিষয়গুলোর প্রতি হুমকি হয়ে উঠতে পারে। খসড়া নীতিমালার ৪.২.৬ ধারায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে নজরদারি ব্যবস্থা চালুর কথা বলা হয়েছে।

মূলত জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে এ নজরদারির ব্যবস্থা সৃষ্টির কথা বলা হলেও, তা নাগরিকের তথ্য বিশ্লেষণ ও রাষ্ট্রীয় নজরদারির মাধ্যমে ‘পুলিশি রাষ্ট্র’ কায়েমের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। আরো আশঙ্কা এই যে, সরকার একটি নীতির প্রণয়নের মাধ্যমে তার নাগরিকের ওপর নজরদারির বিষয়টি স্বীকারও করছে, যা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। নজরদারির প্রবণতা থেকে সরে এসে আইনের শাসন ও মানবাধিকার নিশ্চিতের উপযোগী করার জন্য খসড়াটিকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন