বেতন-বোনাস নিয়ে উদ্বেগ ৪১৬ শিল্প-কারখানায়

ঈদের আগেই বেতন-বোনাস পরিশোধে উদ্যোগ নেয়া হোক

ছবি : বণিক বার্তা

বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলাম ধর্মাবলম্বীর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। কয়েক দিন পরই দেশব্যাপী উদযাপন হবে ঈদুল ফিতর। উৎসবকে কেন্দ্র করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় বোনাস দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু দেশের ৪১৬ শিল্প-কারখানার নির্ধারিত বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। যথাসময়ে বেতন-বোনাস পরিশোধ করা না হলে দেখা দিতে পারে শ্রম অসন্তোষ। মালিক পক্ষকে সঠিক সময়ে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। 

বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঈদের আগে বেতন-বোনাসকে কেন্দ্র করে আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা, কুমিল্লা ও সিলেটের ৪১৬টি কারখানায় সমস্যা হতে পারে। শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে এ কারখানাগুলো নিয়ে এরই মধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তারা মালিকদের প্রতি ঈদ বোনাস এপ্রিলের শুরুতে দেয়া এবং ঈদের ছুটির আগেই মার্চের বেতন পরিশোধের আহ্বান জানিয়েছে। 

ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে সংশয় তৈরি হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। উৎসবের আগে নির্ধারিত সময়ে পোশাক কারখানায় বেতন-বোনাস না হওয়ার বিষয়টি পুরনো। কোনো বছরই এক্ষেত্রে শতভাগ সাফল্য অর্জন করা যায়নি। সরকার-মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে তারিখ নির্ধারিত হলেও অনেক কারখানা তা পরিপালন করে না। এর জন্য অবশ্য দায়ী তদারকির দুর্বলতা ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হওয়ার প্রবণতা। এক্ষেত্রে ঈদের আগেই সব পোশাক কারখানায় বকেয়া বেতন পরিশোধ এবং যথাযথ ভাতা ও বোনাসের ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখা দরকার, ঈদ উপলক্ষেই শ্রমিক অসন্তোষের সৃষ্টি হতো আগে। পোশাক কারখানার মালিকদের গড়িমসিতে আবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়। আমরা আশা করি, মালিকদের সংগঠনগুলো এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। 

আসন্ন ঈদে শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সরকার অবশ্য নির্দেশ দিয়েছে ঈদের সরকারি ছুটি শুরু হওয়ার আগেই তৈরি পোশাকসহ সব খাতের শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধের। বেতন-বোনাস পরিশোধে মালিকরা গড়িমসি করছেন। এমন ঘটনা প্রতি বছর দেখা যায়। অথচ বিভিন্ন অর্থনৈতিক অজুহাতে সরকার শিল্প মালিকদের আর্থিক সহায়তা দেয়। কিন্তু দেখা যায়, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে অনিশ্চয়তা লেগেই থাকে। করোনার সময়ে সংকটে পড়ে অনেক শিল্প। তবে সরকার ওই সময়ে সংকটকালীন শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছে। শ্রমিকরা যেন সঠিক সময়ে তাদের বেতন বুঝে নিতে পারেন মালিকদের সংগঠনগুলো সেটি তদারকও করেছে। তার পরও অনেক কারখানায় বেতন-বোনাস সঠিক সময়ে হয়নি, যা ছিল দুঃখজনক। এবার যেন একই অবস্থা তৈরি না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখা জরুরি। অনেক চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে কয়েক দশকের পথপরিক্রমায় দেশের শিল্প খাত আজকের এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। যেকোনো দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা নিঃসন্দেহে সে দেশের শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। তাই নিশ্চিত করতে হবে শ্রমিকদের চাকরির নিরাপত্তা ও বেতনের নিশ্চয়তা। এবার বেতন-বোনাস সময়মতো পরিশোধ করতে না পারলে আবারো শ্রমিক অসন্তোষ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে শ্রমিকদের ব্যয় বাড়লেও আয় বাড়ছে না। ফলে তারা নানামুখী চাপে রয়েছেন। এ সময়ে পরিবার নিয়ে জীবনযাপনই কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই সঠিক সময়ে বেতন-বোনাস পরিশোধ করা প্রয়োজন। অন্যথায় তাদের পরিবার নিয়ে জীবনযাপন আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। 

মোট কথা, সময়টাও খুবই স্পর্শকাতর। মালিক পক্ষকে ঈদের আগেই শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। যথাসময়ে বেতন-বোনাস দেয়ার ব্যর্থতায় ঘটে যেতে পারে শ্রম অসন্তোষ।

আইন অনুযায়ী মাসের প্রথম ১০ দিনের মধ্যে আগের মাসের বেতন পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদিও তা কখনই যথাযথভাবে পরিপালন হতে দেখা যায় না। ঈদের আগে শিল্প মালিকরা সাধারণত ছুটির আগের দিন পর্যন্ত বেতন-ভাতা ও বোনাস পরিশোধ করেন। এ বছরের চিত্রটিও একই রকম।

শিল্পের প্রাণ যে শ্রমিক, তাকে বঞ্চিত রেখে আমরা কোনোভাবেই আমাদের কাঙ্ক্ষিত শিল্পের উন্নতি ঘটাতে পারব না। তাই শ্রমিকের স্বার্থ বিবেচনা করে ঈদের আগে তাদের বেতন-বোনাস সঠিক সময়ে দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করতে পারত, কিন্তু কখনই তেমন উদাহরণ আমরা দেখতে পাই না। ঈদ ও উৎসবে সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বোনাস ও উৎসব ভাতা পাচ্ছেন। সরকারের সঙ্গে বেসরকারি উদ্যোক্তারাও তাদের কর্মীদের উৎসব ভাতা দিচ্ছেন। গার্মেন্টসহ সব শিল্পে এটি চালু হয়েছে। শ্রমিকদের একটা অংশ তাদের ন্যায্য পাওনা পাচ্ছেন না। শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে হেলাফেলা কাম্য নয়। সরকারের পক্ষ থেকে পোশাক শিল্প মালিকরা নানা ধরনের বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাদেরও উচিত শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করা। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন। সরকারকেও শ্রমিকদের পাওনা পেতে সহযোগী হওয়া উচিত।

দেশের শিল্প-কারখানা এখন একটি নিয়মনীতির মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে। বিদেশী ক্রেতা সংগঠন ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার নজরদারিও রয়েছে। আবার কেউ যাতে শ্রমিকদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে। ঈদের আগেই গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য জেলার কারখানার শ্রমিকদের উৎসব ভাতা পরিশোধ করা প্রয়োজন। এজন্য সরকার ও মালিকদের সংগঠনগুলোকে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশে শিল্প খাতে বিপুল সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে সরকার। তাদের জন্য সরকারি ঋণ ও জমি সহজলভ্য। তাদের মুনাফা আসে ডলারের হিসাবে। তার পরও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ধন্য এ শিল্পের শ্রমিকদের বেতন কেন বকেয়া থাকবে বা নির্ধারিত মজুরি দেয়া হবে না, এটি কোনোভাবেই বোধগম্য নয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন