অভিমত

ফিনল্যান্ড-সুইডেনের ন্যাটোয় প্রবেশ রাশিয়ার নতুন নিরাপত্তা সংকট

বদিরুজ্জামান

ছবি : বণিক বার্তা

রাশিয়ার ক্রাইমিয়া অধিগ্রহণ ও পরবর্তী সময়ে ইউক্রেন আক্রমণ-স্নায়ুযুদ্ধ-উত্তরকালে ইউরোপীয়দের আবারো নিজেদের নিরাপত্তা কাঠামো ও ঐক্যবদ্ধ ইউরোপের ধারণাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এই শঙ্কা বা দুশ্চিন্তা বা নিরাপত্তাহীনতা বেশি গ্রাস করেছে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দেশগুলোকে। এমনকি পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অনুসারী হলেও দীর্ঘদিনের নন-মিলিটারি বা অসামরিক নীতি/পন্থা অনুসারী ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের মতো নর্ডিক দেশও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তবে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের নিরপেক্ষ সামরিক নীতিকে পেছনে ফেলে ন্যাটোর মতো সামরিক জোটে অংশ হওয়ার পথটি অনেক দীর্ঘ, যার সূচনা নব্বইয়ের দশকে, যখন ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন সামরিক মহড়ায় এই দুই নর্ডিক দেশ ধারাবাহিকভাবে অংশ নিতে থাকে।

তবে এই নর্ডিক দেশ দুটির ন্যাটোয় যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে যে জনসমর্থনের প্রয়োজন ছিল, রাশিয়ার ক্রাইমিয়া দখল ও ইউক্রেন আক্রমণ সে সমর্থনের পথকে মসৃণ করে। ফলে নর্ডিক দেশ দুটি, ২০২২ সালে ন্যাটো জোটভুক্ত হওয়ার আবেদন জানায়। অবশেষে বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ২০২৩ সালের এপ্রিলে এবং ২০২৪ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে যথাক্রমে ন্যাটো জোটের ৩১ ও ৩২তম সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। তবে ফিনল্যান্ডের ন্যাটোয় অংশগ্রহণের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কড়া হুঁশিয়ারি জানালেও, সুইডেনের ন্যাটোয় অংশগ্রহনের পরিপ্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত রাশিয়া থেকে তেমন জোরাল কোনো বাক্য উচ্চারিত হয়নি। এই চুপ করে থাকার একটি কারণ হতে পারে ভ্লাদিমির পুতিনের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকা। যা হোক এই প্রবন্ধে আমরা ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোয় প্রবেশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরব, পাশাপাশি এই অন্তর্ভুক্তি ইউরোপের নিরাপত্তা কাঠামোয় কেমন পরিবর্তন আনতে পারে এবং এই অন্তর্ভুক্তি রাশিয়া কীভাবে দেখছে বা রাশিয়া কী প্রতিক্রিয়া জানাবে তা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব।  

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপকতা ও ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পতনে বিশ্বরাজনীতিতে ক্ষমতার রূপান্তর ঘটে। অর্থাৎ বিশ্বরাজনীতিতে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মান ও জাপানের পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাশক্তিধর হয়ে ওঠে। ক্রমেই সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের আদর্শগত (সমাজতন্ত্র বনাম পুঁজিবাদ) বৈপরীত্য রাজনৈতিক সমীকরণে রূপ নেয়। এই মহাশক্তিধরেরা ইউরোপে সামরিক আধিপত্য বিস্তারের খেলায় মেতে ওঠে। তখন যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা ও দশটি ইউরোপিয়ান দেশকে সঙ্গে নিয়ে ট্রান্স-আটলান্টিক অঞ্চলে এক সমন্বিত সামরিক নিরাপত্তা বলয় তৈরির লক্ষ্যে ১৯৪৯ সালের এপ্রিলে নর্থ আটলান্টিক ট্রিইটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) গঠন করে। 

পরবর্তী সময়ে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নও পারমাণবিক শক্তিধর হয়ে ওঠে, তখন উভয়ের মাঝে এই মরণাস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পায়। ফলে ইউরোপকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বা শক্তির ভারসাম্যহীনতা ক্রমেই বাড়তে থাকে। এক্ষেত্রে ন্যাটো স্নায়ুযুদ্ধের ভারসাম্যহীন শক্তির বিপরীতে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় শক্তি ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় প্রধান ভূমিকা পালন করে। এই শক্তি ভারসাম্য ন্যাটোভুক্ত দেশের স্বার্থ ও টিকে থাকা উভয় নিশ্চিত করে। সে বিবেচনায় সুইডেন ও ফিনল্যান্ড রাশিয়ার সামরিক আক্রমণ বা হুমকি থেকে টিকে থাকতে বা রাশিয়ার হুমকির বিপরীতে নিজেদের স্বার্থ/নিরাপত্তা অর্জন করতেই ন্যাটোয় যুক্ত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার সীমান্তবর্তী তিনটি বাল্টিক রাষ্ট্র (লাটভিয়া, এস্তোনিয়া ও লিথুনিয়া) এবং নর্ডিক রাষ্ট্র ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে রাশিয়ার বিপক্ষে বা রাশিয়াকে কনটেইন বা কোণঠাসা করে রাখার ক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট প্রক্সি হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে। সেই প্রেক্ষিতে, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই নর্ডিক দেশ দুটি অনেকটাই ন্যাটোঘেঁষা হয়ে ওঠে। দেশ দুটি ন্যাটোর বিভিন্ন সামরিক ও নৌ মহড়ায় স্বেচ্ছাধীনভাবে অংশগ্রহণ করতে থাকে। পরবর্তী সময়ে ২০০৯ সালে, নর্ডেফকো নামক রাজনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা চুক্তির আদলে এই নর্ডিক দেশ দুটি ন্যাটো বলয়ের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যায়। ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রাইমিয়া দখলের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ দেশ দুটি ন্যাটোর যুগ্ম সামরিক মহড়ার আয়োজক হওয়ার অভিপ্রায়ে ন্যাটোর সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এছাড়া ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র, ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ত্রিপাক্ষীয় নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। 

রাশিয়ার ক্রাইমিয়া অধিগ্রহণে ফিনল্যান্ডের জনমনে নিরাপত্তাহীনতা বাসা বাধে, এবং ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোভুক্ত করার জন্য অভ্যন্তরীণ চাপ বৃদ্ধি পায়। তবে রাশিয়ার মতো বৃহৎ শক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে ন্যাটোভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক হিসাব-নিকাষ কসতে হয়েছে ফিনিশ রাজনীতিবিদদের। রাশিয়া প্রথম থেকেই তার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ন্যাটোর উপস্থিতিকে রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখেছে এবং সীমান্তবর্তী দেশগুলোকে ধারাবাহিকভাবে হুঁশিয়ারির সুরে সাবধান করেছে। তবে এই নর্ডিক দেশ দুটির ন্যাটোভুক্ত হওয়ার পেছনে কারণ যে শুধু রাশিয়ার ক্রাইমিয়া দখল ও ইউক্রেন যুদ্ধ তা কিন্তু নয়, বরং প্রথম থেকে নর্ডিক দেশ দুটিকে ইইউর নিরাপত্তা ও বৈদেশিক নীতি: সিএফএসপির উদ্দেশ্য ও প্রকৃতি নিয়ে সন্দিহান হওয়ায় তারা সিএফএসপি থেকে সরে ন্যাটোর প্রতি ঝুঁকতে বাধ্য হয়েছে। কারণ ইইউ-এর নিরাপত্তা ও বৈদেশিক নীতি সিএফএসপি মোটা দাগে সামরিক সক্ষমতাকে গুরুত্ব না দিয়ে, পশ্চিমা আদর্শ ও মূল্যবোধ ইত্যাদিকে নিরাপত্তা ও বৈদেশিক নীতির জায়গায় স্থান দিয়েছে। ফলে বাস্তবতার নিরিখে নর্ডিক দেশ দুটি এ আদর্শের বদলে সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে ন্যাটোভুক্ত হতে চেয়েছে। কারণ রাশিয়ার মতো মহাশক্তির আগ্রাসন থেকে বাঁচতে এই সামরিক সক্ষমতা-ই বেশি কার্যকর হবে। 

ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত বিবেচনায় ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের ন্যাটোভুক্ত হওয়া ইউরোপিয়ান নিরাপত্তা কাঠামোর ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়ার ক্রাইমিয়া দখল ও ইউক্রেন আক্রমণ ইউরোপীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মনোযোগ দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ইউরোপের নর্ডিক ও বাল্টিক অঞ্চলের দিকে ফিরিয়েছে। ইউরোপের প্রান্তিক ও প্রতিবেশী অঞ্চলের নিরাপত্তা সংকটকে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব না দেয়ায় প্রথম থেকে ইইউর সংঘাত বা সংকট সমাধানের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি ইইউকে দেখিয়ে দিয়েছে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য তাদের কোথায় বেশি জোর দিতে, কোন কোন দেশ সে নিরাপত্তা জোরদারে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে সে বিবেচনায় নর্ডিক ও বাল্টিক দেশগুলো যারা রাশিয়ার সীমান্তবর্তী তারা সামরিক জোট হিসেবে ইইউ ও রাশিয়ার মাঝে কার্যকর বাফার হিসেবে কাজ করতে পারে। এছাড়াও ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোভুক্ত হওয়া ইইউয়ের অন্য চারটি দেশ (অস্ট্রিয়া, আয়ারল্যান্ড, সাইপ্রাস ও মাল্টা) যারা এখনো ন্যাটোয় যুক্ত হয়নি তাদেরও এই বলয়ে অন্তর্ভুক্তি হতে সাহায্য করবে। এছাড়া ইইউ ও ন্যাটোর মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয়কে ত্বরান্বিত করতে পারে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন। এবং, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী, বিশেষত সুইডেনের দক্ষ নৌ-বাহিনী বাল্টিক অঞ্চলে ন্যাটোর উপস্থিতিকে আরো শক্তিশালী করবে।  

তবে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোয় যোগদান স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়ার আঞ্চলিক স্বার্থ ও নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করবে। পুতিন এই দুই নর্ডিক রাষ্ট্রের ন্যাটোয় যুক্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে উভয় রাষ্ট্রকেই রাশিয়ার সীমান্তে সামরিক মহড়া বা স্থাপনা তৈরি প্রভৃতির ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছে এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বলা হয়েছে সুইডেনের ন্যাটোয় যুক্ত হওয়ার বিষয়টি রাশিয়া খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করবে এবং প্রয়োজন অনুসারে ব্যবস্থা নেবে। তবে বিশেষজ্ঞদের ভাষায় এই নর্ডিক রাষ্ট্র দুটি রাশিয়ার উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নিরাপত্তায় বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। যেহেতু তারা ন্যাটোয় যুক্ত হয়েছে, এই অঞ্চলের রাশিয়ার সীমান্ত পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি নড়বড়ে হয়ে উঠতে পারে। বিশেষত, রাশিয়ার সাবেক রাজধানী ও গুরুত্বপূর্ণ শহর ‘সেন্ট পিটারসবার্গ’ ও রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানির প্রধান পথ ‘কোলা উপদ্বীপের’ সঙ্গে ফিনল্যান্ডের বৃহৎ সীমানা থাকার জন্য ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোয় যুক্ত না হওয়ার ব্যাপারে পুতিন বরাবরই হুঁশিয়ারি দিয়ে এসেছে। ফিনল্যান্ডের উত্তর সীমান্তের ‘কোলা উপদ্বীপ’কে রাশিয়া তার সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তার অংশ হিসেবে বিবেচনা করে, এবং এই দ্বীপের সুরক্ষায় রাশিয়া সাবমেরিক পারমাণবিক অস্ত্র জোন তৈরি করেছে। ফলে ফিনল্যান্ডে ন্যাটোর সামরিক উপস্থিতি রাশিয়াকে ধৈর্যের পরীক্ষা ফেলবে যার ফল ফিনল্যান্ডের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হতে পারে। একইভাবে ফিনল্যান্ডকে ন্যাটো জোট এই বলে আশ্বস্ত করে যে ফিনল্যান্ড শুধু ন্যাটোভুক্ত হওয়ার বদৌলতে ইউক্রেনের মতো রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন থেকে বেঁচে আছে। এছাড়াও বাল্টিক সাগরে সুইডেনের সামরিক সক্ষমতা অন্যান্য বাল্টিক দেশের তুলনায় বেশি হওয়ায়, সুইডেনের ন্যাটোভুক্ত হওয়া রাশিয়ার বাল্টিক ভূখণ্ড কালিনগ্রাদকে ব্যবহার করে অন্যান্য সাগরে প্রবেশ ও সামরিক কার্যাবলির পথকে অনেকটাই বাধাগ্রস্ত করবে। বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত দিক বিবেচনায় আগের তুলনায় অনেকটা একঘরে ও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে রাশিয়া। কারণ ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোয় অংশগ্রহণ ন্যাটোর নিরাপত্তা বলয়কে আরো বেশিমাত্রায় রাশিয়াঘেঁষা করে তুলবে যা স্বভাবতই রাশিয়ার সীমানায় সামরিক উপস্থিতি আগের তুলনায় বৃদ্ধি করবে। 

তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সদস্যরাও এটা আঁচ করতে পারে যে রাশিয়ার সীমানায় ন্যাটো সামরিক উপস্থিতিকে রাশিয়া শুধু হুঁশিয়ারির মাধ্যমেই এড়িয়ে যাবে না, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোভুক্ত হওয়ায় রাশিয়া স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। এই দুই নর্ডিক রাষ্ট্র ন্যাটোভুক্ত হওয়ায় রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে অনেক সৈন্য তার উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে নিয়োগ দিতে পারে। ফলে এই শূন্যস্থান পূরণে রাশিয়া আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিতে পারে। ড্রোন ও সাবমেরিন প্রভৃতির মাধ্যমে বাল্টিক ও নর্ডিক অঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে রাশিয়া টার্গেট করতে পারে। যেমন নরওয়ে, গ্যাস ও তেলের খনি এরই মধ্যেই রাশিয়ার ড্রোনের অধীনে এসেছে, যা ন্যাটোকে রাশিয়ার নর্ডস্ট্রিম পাইপলাইনের ধারেকাছে ঘেঁষার ক্ষেত্রে এক ধরনের পরোক্ষ হুমকি দেয়ার শামিল। এছাড়া রাশিয়া স্বল্পকালীন প্রতিক্রিয়া হিসেবে তার সীমান্তবর্তী ন্যাটো সদস্যদের সামরিক কার্যক্রমকে সীমাবদ্ধ রাখতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে হুমকি দিতে পারে এবং এই পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারের হুমকির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে রাশিয়ার সীমানায় যেকোনো ধরনের সামরিক মহড়া বা স্থাপনা তৈরি থেকে নর্ডিক দেশ দুটিকে বিরত রাখতে পারে। পাশাপাশি রাশিয়ার আঞ্চলিক শক্তিমত্তা বজায় রাখতে নর্ডিক, বাল্টিক ও আর্কটিক অঞ্চলে ন্যাটোর সামরিক উপস্থিতির বিপরীতে রাশিয়া অ্যাগ্রেসিভ সামরিক কলাকৌশল এবং আধুনিক অস্ত্র ব্যবহারের হার বৃদ্ধি করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে রাশিয়ার সীমান্ত ও রাশিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নিরাপদ ও হুমকিমুক্ত রাখতে ন্যাটোয় ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ভূমিকা কতটুকু হবে তা স্পষ্ট করে দিতে পারে এবং ন্যাটোর সঙ্গে শক্তি ভারসাম্য রক্ষায় এবং ন্যাটোকে রাশিয়ার সীমানায় অনুপ্রবেশ না করার শর্তে রাশিয়া তার সীমান্তবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে যেকোনো চুক্তি করতে পারে। তবে ইউক্রেন ও জর্জিয়ার অভিজ্ঞতাকে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী এই নর্ডিক ও বাল্টিক দেশগুলো কাজে লাগাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করে। কারণ, ঐতিহাসিকভাবে নিজ সীমানায় অন্য কোনো রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠানের সামরিক অনুপ্রবেশ রাশিয়া কখনো সহজভাবে নেয়নি। সীমান্তে সামরিক উপস্থিতির প্রতিক্রিয়াস্বরূপ রাশিয়া সীমান্ত নিরাপত্তায়নে সামরিকভাবে অবতীর্ণ হয়েছে বহুবার।     

বদিরুজ্জামান: রিসার্চ অফিসার, বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (বিইআই)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন