ব্যাংকের ঋণ নিয়ে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা সংসদের প্রকাশের দাবি এ. কে. আজাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : এফবিসিসিআই

ব্যাংক ঋণ নিয়ে দেশের বাইরে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা সংসদে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ কে আজাদ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান ও আওয়ামী লীগের ইশতেহার উদ্বৃত করে তিনি বলেন, সবার আগে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সোমবার সংসদের বৈঠকে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপরে আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। 

ফরিদপুর-৩ আসন থেকে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরে গতকালই তিনি প্রথমবারের মতো সংসদে বক্তব্য রাখেন। এসময় তিনি ব্যাংক খাতের সংস্কারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পথনকশাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। প্রকৃতপক্ষে এটা আরো বেশি। কিন্তু অবলেপনের মাধ্যমে ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দেখানো হয়। যারা ঋণ নিয়ে কলকারখানায় বিনিয়োগ করে ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের ছাড় দেয়া যেতে পারে। কিন্তু যারা ঋণ নিয়ে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেননি, পাচার করেছেন, বিদেশে বেগম পাড়া-সেকেন্ড হোম বানিয়েছেন, তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিচারের আওতায় আনা এবং সংসদে তাদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানাই। 

স্বতন্ত্র এ এমপি বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও মূল্যস্ফীতির জন্য যারা ব্যাংক লুট করেছে তারা দায়ী। একক কোন প্রতিষ্ঠান দায়ী নয়। এদের আইনের আওতায় আনা না গেলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ. কে. আজাদ বলেন, বিবিএসের ২০২২ সালের প্রতিবেদন মতে, দেশের প্রায় ৪১ শতাংশ তরুণ নিষ্ক্রিয়। তারা পড়াশোনায় নেই, কর্মসংস্থানেও নেই; এমনকি কোনো কাজের প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন না। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সসীমার এ নিষ্ক্রিয় তরুণের সংখ্যা প্রায় এক কোটি ২৯ লাখ। অন্যদিকে গত ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত দেশে কর্মরত বিদেশী নাগরিকের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৭ হাজার ১৬৭ জন। মানবসম্পদকে উপযুক্ত করে প্রশিক্ষিত করতে পারলে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে তেমনি দেশ থেকে রেমিট্যান্স চলে যাওয়াও ঠেকানো যাবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১৫ বছর বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। সেই লক্ষ্য অর্জনে ব্যাংকিং খাতে সংস্কার, কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানো, রফতানিতে বৈচিত্র্য আনা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে সকলের মনযোগী আকর্ষণ করেন এ সংসদ সদস্য।

ফরিদপুর সদর আসনের এমপি এ. কে. আজাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাহসী নেতৃত্ব ছাড়া পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হতো না। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগও এক যুগান্তকারী ঘটনা। ঢাকা থেকে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত যে উন্নয়ন হয়েছে, তার সঙ্গে ফরিদপুর শহরকে যুক্ত করা দরকার। 

ফরিদপুরকে আধুনিক, উৎপাদনশীল এবং স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি ফরিদপুর পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করার দাবি তুলে ধরেন। একই সঙ্গে ফরিদপুর-বরিশাল সড়ককে চার লেনে উন্নীত করারও দাবি জানান।

ফরিদপুর-৩ আসনের এ এমপি বলেন, দেশের বেশিরভাগ জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও ফরিদপুরে এখনো একটি বিশ্ববিদ্যালয় হয়নি। উচ্চশিক্ষা বিস্তারে সরকারের আন্তরিকতার প্রতিফলন হতে পারে ফরিদপুরে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। ফরিদপুরের ৪১৫ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কের মধ্যে ২৫০ কিমি সড়কের অবস্থা নাজুক। দ্রুত এর মেরামত হওয়া দরকার বলেও দাবি জানান তিনি। 

এ সংসদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে, ভোটারদের কাছে জবাবদিহি করতে চান জানিয়ে এ. কে. আজাদ বলেন, গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে সংসদকে কার্যকর ও প্রাণবন্ত করতে চান। এ ব্যাপারে তিনি স্পিকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য। কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি ফরিদপুর-৩ আসনের ৪ লক্ষাধিক ভোটারসহ সর্বস্তরের জনগণকে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন