জৈব জ্বালানির চাহিদায় তীব্র হচ্ছে ভোজ্যতেলের সংকট

বণিক বার্তা ডেস্ক

জৈব জ্বালানির কারণে প্রভাবিত হচ্ছে ভোজ্যতেলের বাজার ছবি: রয়টার্স

বিশ্বব্যাপী জৈব জ্বালানির চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এর প্রভাবে তীব্র হচ্ছে ভোজ্যতেলের সংকট। আকাশ ও সড়ক পরিবহন খাতেও এখন জৈব জ্বালানির ব্যবহার বাড়ছে। পাম থেকে ভোজ্যতেলের পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে উড়োজাহাজের জ্বালানিও। এ অবস্থায় বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সামনের দিনগুলোয় জৈব উপাদান থেকে ভোজ্যতেলের উৎপাদন বাড়বে নাকি জ্বালানির। 

ফ্রিমালয়েশিয়াটুডের এক খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়ার সরকার এরই মধ্যে জ্বালানি হিসেবে সয়াবিন, ক্যানোলা ও প্রাণিজ চর্বির ব্যবহার শুরু করেছে। মূলত জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা ও কার্বন নিঃসরণ কমাতে এ উদ্যোগ। এ কারণে পাম অয়েলের মতো উদ্ভিজ্জ তেলের চাহিদাও বাড়ছে। পিৎজা, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, চকোলেট ও শ্যাম্পোর মতো পণ্য তৈরিতে এ তেল ব্যবহার করা হয়।

বিশ্বব্যাপী এ প্রবণতা পাম অয়েলের জন্য সুবিধাজনক। কয়েক বছর ধরেই পাম অয়েলের উৎপাদন কমে আসছিল। জৈব জ্বালানির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার অন্যান্য তেলবীজের মতো পাম অয়েলকেও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে বলে মনে করেন অক্সফোর্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এলএমসি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান জেমস ফ্রাই।

একদিকে যুদ্ধ ও প্রতিকূল আবহাওয়া কমিয়ে দিয়েছে উদ্ভিজ্জ তেলের সরবরাহ। বিশ্বের প্রধান সয়াবিন উৎপাদনকারী দেশ আর্জেন্টিনা খরায় বিধ্বস্ত। ইউরোপে উৎপাদন সূচক নিম্নমুখী। অন্যদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান কমিয়ে দিয়েছে সূর্যমুখী তেলের রফতানি। সে সুযোগে চাহিদা বেড়েছে পাম ও সয়াবিন তেলের। মূল্যও নাগালের বাইরে। এমন সময় জৈব জ্বালানির চাহিদা সূচকও ঊর্ধ্বমুখী। অতিরিক্ত চাহিদার জোগান দিতে উৎপাদনকারীরা কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন রান্নার তেল ও পাম অয়েলের অবশিষ্টাংশ।

ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার উৎপাদন বৈশ্বিক সরবরাহের ৮৫ শতাংশ। ফসল চাষে বিলম্ব, অনুৎপাদনশীল আগাছা, প্রতিকূল আবহাওয়া, বৃক্ষনিধন সেখানে বিস্তৃতিতে বড় সংকট তৈরি করেছে। আর উৎপাদন সংকট মানেই সরবরাহ সংকট। 

উদ্ভিজ্জ তেলের বাজারে বেশ বড় একটা অংশ জৈব জ্বালানি। কিন্তু জ্বালানি চাহিদায় পূরণে এর অংশগ্রহণ বেশ অল্পই। জৈব জ্বালানি সেটাই করছে, বিশ্ববাজারে যেটা তেল ও চর্বি করত। ফলে জৈব জ্বালানির দিকে ঝোঁক সার্বিকভাবে ভোজ্যতেলের বাজারে প্রভাব ফেলছে। যদিও নবায়নযোগ্য ডিজেল ও উড়োজাহাজে জ্বালানি হিসেবে জৈব জ্বালানির ব্যবহারের পেছনে দায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়ার।

সয়াবিন তেল ও রাই সরিষা তেল প্রস্তুতিতে কাঁচামাল ব্যবহার হয়, তাদের মিশ্রণই পরবর্তী সময়ে জৈব জ্বালানি তৈরিতে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপ জৈব জ্বালানি তৈরি করে বর্জ্য ও সরিষা তেল থেকে। ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েল ব্যবহার মাধ্যমে তৈরি করে বায়োডিজেল। আর ব্রাজিল নির্ভর করে সয়াবিনের ওপর। উদ্ভিজ্জ তেলের উৎপাদন কমে আসার সঙ্গে চলতি বছরের দ্বিতীয়াংশে জৈব জ্বালানি ঘাটতি দখল করে নিতে পারে বলে মনে করেন হামবুর্গভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘‌অয়েল ওয়ার্ল্ড’-এর নির্বাহী পরিচালক থমাস মিয়েলকে।

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা জৈব জ্বালানি সম্পর্কে সম্প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে। জৈব জ্বালানির চাহিদা বৃদ্ধি ও কাঁচামালের ঘাটতিকে যদি চিহ্নিত করা না যায়, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জৈব জ্বালানি ব্যবহারের তাৎপর্য। কার্বন নিঃসরণ কমানোর যে প্রচেষ্টা, সেটিও থমকে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন