পথ দেখিয়েছে নর্থ সাউথ

আরফিন শরিয়ত

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

দেশের প্রথম অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভাসিটি (এনএসইউ) নর্থ সাউথ অনুমোদনের পর তিন দশকে আরো ১০৮ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে। অগ্রজ নর্থ সাউথ গুণগত উচ্চশিক্ষা গবেষণা এবং উন্নত অবকাঠামো নিশ্চিত করে পরবর্তীদের পথ বাতলে দিয়েছে। স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তোলা থেকে শুরু করে বৈশ্বিক র‍্যাংকিংয়ে অবস্থান, সর্বোপরি স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সব ক্ষেত্রেই বেসরকারি খাতের উচ্চশিক্ষাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে এনএসইউ।

নব্বইয়ের দশকের কথা, দেশে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান বলতে ছিল মাত্র সাতটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সুযোগ পেত তারাই একমাত্র উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারত। আর কারো পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ ছিল না। তখনই কিছু মানুষ বেসরকারি খাতের উচ্চশিক্ষার ধারণা নিয়ে এল। গড়ে তুললেন ফাউন্ডেশন ফর প্রমোশন অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এফপিইআর) এই প্লাটফর্ম। সেই এফপিইআরের প্রচেষ্টায় ১৯৯২ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠা পায় দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি।

আশির দশকের শেষ দিকে বেসরকারি খাতে উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল বেশ কয়েকজন স্বপ্নচারী ব্যক্তি। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অধ্যাপক মুসলেহ উদ্দিন। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরিকল্পনা প্রস্তুত। যদিও ছিল না কোনো আইন কিংবা নীতিমালা। তখন এনএসইউ ফাউন্ডেশনের ব্যক্তিরাই নিজের উদ্যোগে এগিয়ে এসেছিল। প্রাসঙ্গিক আইন প্রণয়ন আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে তৎকালীন সরকারকে সহায়তা করার জন্য তাদের প্রচেষ্টা ছিল। পরবর্তী সময়ে সরকার প্রণীত নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন (পিইউএ) ১৯৯২ অনুসারে এনএসইউ প্রতিষ্ঠার অনুমোদন পায়। ১৯৯৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছিল। পরে ২০১২ সালে এনএসইউ ফাউন্ডেশন, পিইউএ ২০১০-এর আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের নির্দেশ অনুসারে ফাউন্ডেশনের মতো একই ধরনের ব্যক্তিদের নিয়ে এনএসইউ ট্রাস্ট গঠন হয়।

শুধু পথ দেখিয়ে থেমে থাকেনি নর্থ সাউথ। সে পথকে কীভাবে আরো গতিশীল করা যায়, কীভাবে আরো আধুনিক, যুগোপযোগী করা যায় তার চেষ্টাও ছিল নর্থ সাউথের। যার অংশীদার এখন নর্থ সাউথ। বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে অধ্যয়ন শেষে শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য যাচ্ছেন। উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে হার্ভার্ড, কর্নেল, ইয়র্ক, পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা শুধু বিদেশ যাচ্ছে, এমন নয়। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, চীন নানা দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসছে এখানে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, এফপিইআরের উদ্যোগের কারণে দেশে শিক্ষার নতুন একটি জগ উন্মোচন হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস কয়েকশ বছরের পুরনো। বাংলাদেশ মাত্র খাতে কাজ শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কমপক্ষে ১৫টিই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। যেমন হার্ভার্ড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৬৩৬, ইয়েল ১৭০১, প্রিন্সটন ১৭৪৬ সালে কিংবা কলাম্বিয়া ১৭৫৪ সালে ইত্যাদি। দেশে সেই ইতিহাস মাত্র ৩০ বছরের। এর মধ্যে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে স্থান করে নিয়েছে। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

১৯৯২ সালে পথ দেখানো শুরুর পর তিন দশকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। তিন দশকের ব্যবধানে এখন দেশের ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের ২০২১ সালের সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশের ১০৮টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা লাখ ১০ হাজার ১০৭। এর মধ্যে ছাত্র লাখ ১৫ হাজার ৯০ জন ছাত্রী সংখ্যা ৯৫ হাজার ১৭। একই সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে শিক্ষক সংখ্যাও। এসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ হাজার ৩৯৩ শিক্ষক পাঠদান গবেষণার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

আধুনিক ক্যাম্পাস আর উন্নত দেশগুলোর মতো শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর পরই দেশব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। দেশে শিক্ষার্থীর তুলনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সিটের সংখ্যা পর্যাপ্ত না থাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়টি হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার অন্যতম ভরসার জায়গা। দিনে দিনে বিশ্ববিদ্যালয়টি এতটাই জনপ্রিয়তা পায় যে এর শিক্ষার মান ছাড়িয়ে যায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন