সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়

দুই দশকের সফল যাত্রা

ফিচার প্রতিবেদক

সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

২০০২ সালের জানুয়ারিতে মাত্র ১০৭ ছাত্রছাত্রী নিয়ে যাত্রা করে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার ২০তম বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজারেরও বেশি। দুই দশক আগে প্রতিষ্ঠিত সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় আর আজকের সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় এক নয়। দেশের টপ র‍্যাংকিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি। সম্প্রতি সিমাগো নামে একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন র‍্যাংকিং প্রতিষ্ঠান গবেষণার দৃষ্টিকোণ থেকে সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে নাম্বার ওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দিয়েছে। শুরুতে পাঁচটি প্রোগ্রাম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা করলেও বর্তমানে ১৬টি প্রোগ্রামে পাঠদান চলছে। হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম, সাংবাদিকতা, নার্সিং টেকনোলজি, হেলথ কেয়ার ম্যানেজমেন্ট, পাবলিক হেলথের মতো যুগোপযোগী আরো প্রোগ্রাম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। আন্তর্জাতিক মানের কোর্স কারিকুলাম, দক্ষ, অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষকমণ্ডলী, সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, প্রতিটি বিভাগে স্বতন্ত্র ল্যাব সুবিধা, ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুবিধা, ধূমপান রাজনীতিমুক্ত পরিবেশ, সবকিছুই সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে পৌঁছে দিয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়।

ঢাকার প্রাণকেন্দ্র তেজগাঁওয়ে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসে চলতি মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে তিনটি অনুষদ। সাউথইস্ট বিজনেস স্কুলে চার বছর মেয়াদি বিবিএ, এমবিএ এবং রয়েছে এক্সিকিউটিভ ইএমবিএ। মেজর হিসেবে পড়ানো হয় টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং, মার্কেটিং, অ্যাকাউন্টিং, ফাইন্যান্স, এইচ আর এম। স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ইন সিএসই, বিএসসি ইন ইইই, বিএসসি ইন ফার্মেসি, বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি দেয়া হয়।

এছাড়া স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড সোস্যাল সায়েন্সে এলএলবি (অনার্স), বিএ (অনার্স) ইন ইংলিশ, বিএ (অনার্স) ইন বাংলা, বিএসএস (অনার্স) ইন ইকোনমিক্স, এলএলএম ( বছর), এমএ ইন ইংলিশ ( বছর), এমএ ইন বাংলা ( বছর) এবং মাস্টার্স অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ( বছর মাস) ডিগ্রি দেয়া হয়।

সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে পিএইচডিধারীসহ প্রায় ৪০০ জন শিক্ষক রয়েছে। প্রতি বছর তিনটি সেমিস্টার করে চার বছরে মোট ১২টি সেমিস্টারে অনার্স কোর্সগুলো পড়ানো হয়। শুধু ফার্মেসি আইন বিভাগে বছরে দুটি সেমিস্টারে চার বছরে আটটি সেমিস্টারে অনার্স কোর্সে শিক্ষাদান করা হয়। শেষ সেমিস্টারে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ইন্টার্নশিপ বাধ্যতামূলক। প্রতিটি বিষয়ে মিডটার্ম ফাইনাল পরীক্ষা নেয়া হয়। ক্লাসের শুরুতেই কোর্স আউটলাইন, সিলেবাস, বইয়ের নাম, গ্রুপ ডিসকাশন, লেকচার সিট প্রদান, কেস স্টাডি অ্যাসাইনমেন্ট প্রদান এবং প্রেজেন্টেশন পদ্ধতি অনুসরণ করে শিক্ষা দেয়া হয়। এছাড়া একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি বাস্তব জ্ঞানলাভের জন্য টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজসহ বিভিন্ন করপোরেট অফিস পরিদর্শন করা হয়ে থাকে। সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ২০১৩ সালে ফল সেমিস্টার হতে সব ছাত্রছাত্রীদের জন্য ওপেন ক্রেডিট সিস্টেম চালু করা হয়েছে। ফলে ছাত্রছাত্রীরা তাদের পছন্দমতো কোর্স সম্পন্ন করে স্বল্প সময়েই তাদের ডিগ্রি লাভ করতে পারবে।

সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক পাঠ চর্চার জন্যে একটি আধুনিক সমৃদ্ধ লাইব্রেরি রয়েছে। এখানে ব্যবসায় প্রশাসন, কম্পিউটার সায়েন্স, ইংরেজি ভাষা সাহিত্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি, সমাজতত্ত্ব, আইন, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মেসি, অর্থনীতি বিষয়ক পর্যাপ্ত বই রয়েছে। এছাড়া লাইব্রেরিতে রয়েছে জাতীয় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নাল, বিদেশী অসংখ্য অনলাইন জার্নাল দৈনিক পত্রিকা। ছাত্রছাত্রীদের নিরবচ্ছিন্নভাবে পাঠাভ্যাসের জন্য লাইব্রেরি সপ্তাহের সাতদিনই খোলা থাকে। ওয়েব বেইজড লাইব্রেরিতে ইন্টারনেট সংযোগে সরাসরি বই ডাউনলোড করে সেখানেই পড়ার সুযোগ রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক রকম বৃত্তি সুবিধা চালু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। রয়েছে এইচএসসি এবং -লেভেল ফলাফলের ওপর বৃত্তি, মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য বৃত্তি, সেমিস্টার ভালো ফলাফলের জন্য বৃত্তি, নারী শিক্ষার্থী বৃত্তি, উপজাতিদের জন্য বৃত্তি রকম প্রায় ১২টি বৃত্তি চালু রয়েছে এখানে। বিশ্ববিদ্যালয়টি বছরে প্রায় ১২ কোটি টাকা বৃত্তি দিয়ে থাকে। কিছু বিষয়ে ভর্তুকিও দিয়ে থাকে। মেয়েদের জন্য রয়েছে মহিলা হোস্টেল যেগুলো ছাত্রীদের সুবিধার্থে ভর্তুকি দিয়ে চালু রাখা হয়েছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দেশে প্রথম ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বীমা পলিসি সুবিধা চালু করে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়। পিপলস পার্সোনাল অ্যাক্সিডেন্ট ইন্স্্যুরেন্স পলিসি শীর্ষক পলিসির আওতায় শিক্ষার্থীরা যেকোনো দুর্ঘটনার শিকার হলে আর্থিক সহায়তা পাবেন এবং নির্বিঘ্নে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে মোট সাত হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে বীমা সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে সব শিক্ষার্থীকে পলিসির আওতায় আসবেন। লক্ষ্যে জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে পলিসি হস্তান্তর করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু একাডেমিক দক্ষতার ওপরই জোর দেয়া হয় না, ছাত্রদের আত্মবিশ্বাস নেতৃত্বের গুণ বিকাশের লক্ষ্যে কো-কারিকুলাম এক্সট্রা কারিকুলাম কার্যক্রমের ওপরও জোর দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ১৯টি ক্লাব সোসাইটি। এরই মধ্যে এখানকার কতিপয় ক্লাব জাতীয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ সুখ্যাতি অর্জন করেছে। আইন বিভাগের মুট কোর্ট সোসাইটি জাতীয়ভাবে বেশ কয়েকবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। ক্রিকেট টিম গত ক্লেমন ইউনি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ২০২২ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন