প্রতিকূল পরিবেশেও আইডিএলসির আমানতের গ্রাহকসংখ্যা এবং পোর্টফোলিও ঊর্ধ্বমুখী

এম জামাল উদ্দিন

প্রায় ৩৮ বছর আইডিএলসি দেশের আর্থিক খাতে সুনাম দক্ষতার সঙ্গে গ্রাহককে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আইডিএলসির সবচেয়ে বড় সক্ষমতার দিক হচ্ছে, বর্তমানে মুদ্রা বাজারে যে তারল্য প্রবাহে কিছুটা ঘাটতি চলছে সেটি আমাদের তেমন প্রভাবিত করতে পারেনি। আমাদের দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে গত দেড় থেকে দুই বছর ধরে আমানতের সুদের হার বেশ কমে গেছে। অবস্থায় অনেক আমানতকারী কিছুটা বেশি লাভের আশায় পুঁজিবাজার কিংবা অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করেছে। যার কারণে এনবিএফআই খাতে আমানতের পরিমাণ বাড়েনি বরং গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষ পর্যন্ত শতাংশের মতো কমেছে (২০২১-এর সেপ্টেম্বরের সঙ্গে ২০২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তুলনা) ডিপোজিটের ক্রান্তিকালীন সময়েও আইডিএলসির আমানত বেড়েছে দশমিক শতাংশ। যেটা প্রমাণ করে আমানতকারীদের কাছে আইডিএলসির গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। আমরা গ্রাহকের আমানতের বিপরীতে খুব বেশি রিটার্ন অফার করি না বরং তাদের আমানতকে সুরক্ষার দিকে বেশি খেয়াল রাখি। আমরা সবসময় দেশের প্রথম সারির কয়েকটি ব্যাংকের সুদের হারের সঙ্গে মিল রেখে একটি প্রতিযোগিতামূলক সুদহার নির্ধারণ করে থাকি। তা সত্ত্বেও শুধু আস্থার কারণে এবং দীর্ঘদিনের রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্টের কারণে আমরা আমাদের চাহিদা মোতাবেক গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত পাচ্ছি। কোনো ব্যাংক কিংবা এনবিএফআইয়ে যখন একজন আমানতকারী তার কষ্টার্জিত আমানত রাখেন তখন প্রথম যে বিষয়টি তাকে মাথায় রাখতে হবে যে তিনি যেন টাকাটা ফেরত পান। তারপর আসবে আমানতের বিপরীতে লভ্যাংশ কিংবা রিটার্নের বিষয়টি। আমানতের ক্ষেত্রে কিন্তু জামানত কিংবা বীমার মতো কিছু নেই। ফলে যে প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখা হবে সেটির পারফরম্যান্স এবং সুনাম কেমন আমানতকারীদের সেটি যাচাই করে দেখতে হবে। গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সেটি কোথায় বিনিয়োগ করা হচ্ছে সেটিও দেখতে হবে। মন্দ ঋণের হার দেখতে হবে। বিনিয়োগের বিপরীতে রিটার্ন কেমন সেটিও বিবেচ্য বিষয়। বিষয়গুলো দেখে যদি কেউ আমানত রাখেন তাহলে সেটি নিরাপদ থাকবে এবং লাভজনক হবে। ব্যাংক এনবিএফআইয়ের ব্যবসা হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি। তাই টাকা নিয়ে কখনো ফেরত দেবে নাএমনটা কেউ- চাইবে না, যদি না ওই ব্যাংক আর্থিক ক্ষতির সন্মুখীন না হয়।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমরা গ্রাহকের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছি। তাদের আইডিএলসির মতো ভালো প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখার জন্য উদ্বুদ্ধ করছি, যেখানে গচ্ছিত অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। আমাদের বিত্তশালী যেসব গ্রাহক রয়েছেন, যারা বেশি পরিমাণে টাকা রাখেন তাদের আমরা নিয়মিতই সামগ্রিক অর্থনৈতিক তথ্য সরবরাহ করে থাকি। যেসব গ্রাহকের আমানতের মেয়াদ শেষে তাদের টাকাটা তুলে না নিয়ে যাতে আমাদের কাছেই রাখেন, আমরা সেই আস্থার জায়গাটা তৈরি করেছি। তবে যখনই কোনো গ্রাহকের টাকার প্রয়োজন হচ্ছে আমরা কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই তাকে টাকা দিয়ে দিচ্ছি। এর ফল কিন্তু বেশ ভালো। আইডিএলসির গ্রাহকের প্রায় ৮০ শতাংশই কিন্তু মেয়াদ শেষে আমানতের অর্থ তুলে না নিয়ে আমাদের কাছেই তার কষ্টার্জিত টাকা জমা রাখছেন। যেখানে এনবিএফআই খাতে এর হার হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ।

নতুন কিছু পণ্য নিয়েও আমরা কাজ করছি। আমাদের তিন মাস, ১০০ দিন কিংবা ৫০০ দিন, মাসিক ফিক্সড ডিপোজিট স্কিম, ইন্টারেস্ট ফার্স্ট ডিপোজিট, আইডিএলসি ডিপোজিট প্লাস, আইডিএলসি ইনকাম ফান্ড, ডাবল মানি ডিপোজিট, ট্রিপল মানি ডিপোজিটসহ বিভিন্ন ধরনের স্কিম রয়েছে। বিকাশের সঙ্গে আমাদের অনলাইন ডিপিএস স্কিম রয়েছে। এক্ষেত্রে একজন গ্রাহক প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা বিকাশের মাধ্যমে আমাদের কাছে আমানত হিসাবে রাখতে পারবেন। গত দেড় বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে স্কিমে আমাদের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ ছাড়িয়েছে। প্রডাক্টের মাধ্যমে আমরা এখন পর্যন্ত প্রায় ১২৫ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি। স্কিমের মাধ্যমে আইডিএলসি অনেক বেশিসংখ্যক মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে নিয়ে আসতে এবং একইভাবে মানুষের মাঝে সঞ্চয়প্রবণতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। আপনি চাইলে অনলাইনেও আমাদের এখানে স্বল্প কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে সরাসরি ডিপোজিট করতে পারবেন। সব মিলিয়ে আমরা একটি ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে চাইছি যার মাধ্যমে সমাজের সবস্তরের গ্রাহক সহজেই আমাদের কাছে তাদের আমানত রাখতে এবং প্রয়োজনমতো তুলতে পারেন।

 

এম জামাল উদ্দিন: প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন