সহজ প্রক্রিয়ায় দেশেই মিলবে গ্রিন বিল্ডিং সনদ

আল ফাতাহ মামুন

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবেলার চিন্তা থেকে আসে গ্রিন বিল্ডিংয়ের ধারণা। একটি ভবন সেখানে ব্যবহূত এনার্জি থেকে স্বাভাবিক পরিমাণের চেয়ে কম কার্বন নিঃসরণই গ্রিন বিল্ডিংয়ের টার্গেট। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যক্তি খাতের উদ্যোগে নির্দিষ্ট মানমাত্রা ঠিক রেখে চারটি ক্যাটাগরিতে গ্রিন বিল্ডিং সনদ দেয়া শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের অধীনে গ্রিন বিল্ডিংয়ের সনদ তথা লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইনের (লিড) খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে লিড সনদের যাত্রা শুরু। বর্তমানে দেশে গ্রিন বিল্ডিংয়ের সংখ্যা ৩৫০ ছাড়িয়েছে। পরিবেশ সুরক্ষায় গ্রিন বিল্ডিংকে উৎসাহ দিতে এবার দেশেই মিলবে সনদ। এজন্য টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) একটি নীতিমালা তৈরি করছে। আগামী ডিসেম্বরে নীতিমালাটি সবার জন্য উন্মুুক্ত হবে।

স্রেডা সূত্রে জানা গিয়েছে, উন্নয়নশীল বাংলাদেশে পরিবেশ ঝুঁকি কমানোর জন্য সরকারি উদ্যোগে গ্রিন বিল্ডিং সনদের নীতিমালা তৈরি করছে। নীতিমালটি কার্যকর হলে শিল্পমালিকরা খুব সহজেই গ্রিন বিল্ডিং সনদের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া দেশীয় প্রতিষ্ঠান থেকে সনদের আবেদন করার ফলে খরচ কম হওয়ার পাশাপাশি আবেদন প্রক্রিয়াটিও হবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে।

স্রেডার গ্রিন বিল্ডিং নীতিমালাটির (কোড) নাম দেয়া হয়েছে বিল্ডিং এনার্জি এফিশিয়েন্ট  অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রেটিং (বিয়ার) অর্থাৎ স্রেডা থেকে কোনো প্রতিষ্ঠান গ্রিন বিল্ডিং সনদ নেয়া হলে সেটি বিয়ার সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বলে গণ্য হবে। বিয়ার সনদপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের পরিস্থিতি মাথায় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

স্রেডা সূত্র জানিয়েছে, বিয়ার সনদের কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী ডিসেম্বরে জনসাধারণের উদ্দেশে প্রকাশ করা টার্গেট রয়েছে। বিয়ার সনদ প্রণয়নের বিষয়টি ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের দেশে নিজস্ব গ্রিন বিল্ডিং কোড হচ্ছে এটা ইতিবাচক। এর ফলে দেশে গ্রিন বিল্ডিংয়ের পরিমাণ বাড়বে। পরিবেশের ওপর চাপ করবে। জ্বালানি সাশ্রয়ী হবে। যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান দেশের বাইরে থেকে সার্টিফিকেট নিত তারা দেশ থেকেই এখন সার্টিফিকেট নিতে পারবে। তবে আমাদের দাবি, সার্টিফিকেট যেন আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে করা হয়। যদি আন্তর্জাতিক মান বজায় না রাখা হয় তাহলে এটা করা আর না করা একই কথা হবে। 

বিয়ার সনদের মান আন্তর্জাতিক কিনা এটা যাচাইবাছাইয়ের কাজ করছে শ্রীলংকার কনসালট্যান্ট ফার্ম এবং ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের সদস্য এনার্জি সলভ ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মাহেন্দ্র জায়ালাথ বণিক বার্তাকে বলেন, স্রেডা প্রণীত বিয়ার সনদের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে আমরা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছি। এক্ষেত্রে আমরা দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছি। প্রথমত, আমরা এটি সহজ করার চেষ্টা করেছি। যেন বিপুল পরিমাণ মানুষ সনদ নিতে আগ্রহী হয়। কারণে অনলাইন আবেদনটি আমরা যথেষ্ট সহজ করেছি। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের পরিস্থিতি মাথায় রেখেছি।

আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে মাহেন্দ্র জায়ালাথ বলেন, বিয়ারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এর আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন। আগে থেকেই লিড সনদ এখানে সুনামের অবস্থানে আছে। বর্তমানে অসংখ্য সার্টিফিকেশন প্রতিষ্ঠান এসে পড়েছে। সেক্ষেত্রে স্রেডার প্রচার-প্রসার বাড়াতে পারলে বিয়ারের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পেতে সমস্যা হবে না।

দেশের অন্যতম লিড সনদপ্রাপ্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্ল্যামি ফ্যাশন লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, সরকারি উদ্যোগে গ্রিন বিল্ডিং সনদ দেয়ার উদ্যোগটি আমরা ভালো মনে করছি। তবে চ্যালেঞ্জিং বিষয় হলো এর আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্রেডার সাবেক কর্মকর্তা এবং হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই) সিনিয়র রিসার্চ আর্কিটেক্ট হাউজিং ডিভিশনের প্রধান মো. নাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা কোডটি প্রণয়ন করেছি জ্বালানি সাশ্রয়ের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা কাজ শুরু করতে পারব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন