চৌকস বিজনেস গ্র্যাজুয়েট তৈরিতে সেরা আইবিএ

শফিকুল ইসলাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ

একবিংশ শতাব্দীর ব্যবসা-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব তৈরির পাঠশালা ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়দেশে তিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএ রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর অবস্থান সবার শীর্ষে। এখানকার গ্র্যাজুয়েটদের চাহিদা চাকরির বাজারে সবচেয়ে বেশি। সূচনার পর থেকে এই ইনস্টিটিউট দক্ষ বিজনেস গ্র্যাজুয়েট তৈরির একটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, যা নিয়োগকর্তা সংস্থার প্রয়োজনীয়তা এবং আধুনিক ব্যবসায়িক বিশ্বের চাহিদা অনুসারে শিক্ষিত এবং দক্ষ মানবসম্পদ প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। করপোরেট থেকে শুরু করে বিভিন্ন বড় বড় জায়গায় শীর্ষপদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেখানকার গ্র্যাজুয়েটরা। চাকরিদাতারা যে ধরনের দক্ষ, পেশাদার, চৌকস, প্রস্তুত কর্মী খোঁজেন তার সবই পাওয়া যায় একজন বিজনেস গ্র্যাজুয়েটের মধ্যে।

আইবিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইবিএর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৬৬ সালে। দুই বছরের মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এমবিএ ডিগ্রি দিয়ে যাত্রা করে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি ব্লুমিংটনের সঙ্গে অংশীদারত্বে গড়ে তোলা আইবিএ। ১৯৯৩ সালে শুরু হয় ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) ২০০৭ সালে চালু হয় এক্সিকিউটিভ এমবিএ। ঢাবির আইবিএতে ফাইন্যান্স, অ্যাকাউন্টিং, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং, ইনফরমেশন সিস্টেম এবং টেকনোলজি অ্যান্ড অপারেশন্সের ওপর বিবিএ মেজর করা যায়। আইবিএতে বিবিএ করার জন্য বাণিজ্য, মানবিক বিজ্ঞান যেকোনো শাখার শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারেন। আসন সংখ্যা ১২০। লিখিত পরীক্ষার পর সাধারণত ১৬০-১৮০ জন শিক্ষার্থী বেছে নেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ পান ১২০ জন। ভর্তির যোগ্যতা মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক মিলিয়ে সর্বনিম্ন জিপিএ . নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এসএসসি এইচএসসিতে আলাদাভাবে জিপিএ . পেতে হবে। ভর্তি পরীক্ষার দুটি ধাপ লিখিত মৌখিক। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়া যায়। লিখিত পরীক্ষারও রয়েছে দুটি অংশ বহুনির্বাচনী রচনামূলক। নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার সময় ৯০ মিনিট। অংশে মোট নম্বর হলো ৭৫। এতে তিনটি অংশ থাকেইংরেজি (৩০ মার্কস), গণিত (৩০ মার্কস), অ্যানালিটিক্যাল (বিশ্লেষণী) (১৫ মার্কস) ইংরেজি, গণিত, অ্যানালিটিক্যাল প্রত্যেকটি অংশ আলাদা আলাদাভাবে পাস করতে হবে। বেশির ভাগ অংশে ফুল মার্কস পেয়েও কোনো একটি অংশে যদি কেউ ফেল করে তাহলে অনুত্তীর্ণ। আর রচনামূলক পরীক্ষার সময় ৩০ মিনিট। এক্ষেত্রে সাধারণত নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে ইংরেজি বাংলায় দুটি অনুচ্ছেদ লিখতে দেয়া হয়।

আইবিএ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন চালু হয় ১৯৯১ সালে। বিবিএতে পড়তে চাইলে ইউনিট থেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। বাণিজ্য, বিজ্ঞান মানবিক সব বিভাগের শিক্ষার্থীরাই ভর্তি হতে পারবেন। তবে আসন সংখ্যা মাত্র ৫০টি। মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক দুই পরীক্ষা মিলে চতুর্থ বিষয়সহ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রদের মোট জিপিএ থাকতে হবে এবং মানবিক বাণিজ্যের শিক্ষার্থীদের জিপিএ .৫০ থাকা বাধ্যতামূলক। ইংরেজি, গণিত, বাংলা এবং সমসাময়িক ব্যবসায়ের ওপর সাধারণ জ্ঞানে মোট ৮০ মার্কসের ভর্তি পরীক্ষা হয়। বাকি ২০ মার্কস মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকের জিপিএর ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়। ইনস্টিটিউটের অধীনে আছে ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ), মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) এবং এক্সিকিউটিভ এমবিএ (ইএমবিএ) পিএইচডি এবং এম.ফিল প্রোগ্রাম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ-জেইউ) পরিচালক অধ্যাপক . কেএম জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের কো-কারিকুলাম গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডে করা এবং সিলেবাস যেটা ডিজাইন করা হয়েছে তা করপোরেট হাউজগুলোর চাহিদা অনুযায়ী। এবং দেশে-বিদেশে যে রকম চাহিদা রয়েছে আমরা সেভাবে গ্র্যাজুয়েটদের তৈরি করি। আমরা ছাত্রদের ক্যাপাসিটি জাজ করার জন্য চাকরি মেলার আয়োজন করি এবং টেকনোলজি ড্রাইভিং যুগে গ্র্যাজুয়েটদের আমরা সেভাবেই তৈরি করি। বিদেশী নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিলেবাস পর্যালোচনা করে আমরা নতুন নতুন কনটেক্সট যুক্ত করি। এছাড়া প্রতি সেমিস্টারে ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টদের এনে তাদের চাহিদার কথা আমরা শুনি এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়াংরি সেশন আয়োজন করা হয়।

আইবিএ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট ২০০২ সালে যাত্রা করে এমবিএ (সান্ধ্য) প্রোগ্রাম শুরুর মাধ্যমে। ২০১৫-১৬ সেশন থেকে আইবিএর নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী স্বতন্ত্রভাবে ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) কোর্স চালু হয়। তবে আসন সংখ্যা মাত্র ৫০। এর মধ্যে বাণিজ্য থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য ৩০টি আসন এবং বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য ২০টি আসন। তবে মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) করতে চাইলে যেকোনো বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এমবিএ বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। ব্যবসায় শিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে তিনটি এমবিএ প্রোগ্রামএমবিএ (ডে) প্রোগ্রাম, এক্সিকিউটিভ এমবিএ প্রোগ্রাম এবং এমবিএ ফর বিবিএ গ্র্যাজুয়েটস প্রোগ্রাম চালু করেছে ইনস্টিটিউট। রাবি আইবিএর অধ্যাপক হাসনাত আলী বলেন, একাডেমিক বিষয়গুলো অর্গানাইজডভাবে পরিচালনা করা হয়। ছাত্ররা ক্লাসে যাওয়ার আগেই তাদের একাডেমিক কারিকুলাম হাতে দেয়া হয়, কখন টি ক্লাস হবে, কখন পরীক্ষা হবে, কবে প্রেজেন্টেশন হবে। এমনকি রেজাল্ট কবে পাবলিক হবে এবং পরের সেমিস্টারে কবে ক্লাস কখন শুরু হবেএটাও আগে জানিয়ে দেয়া হয়। ২০০৪ সালে আমি জয়েন করেছি, এখন পর্যন্ত কোনো ক্লাস, পরীক্ষা, রেজাল্ট প্রকাশের শিডিউল ব্রেক হয়েছে রকম কোনো রেকর্ড নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন