কেন পড়ব আইন?

নাজমুস সাকিব

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুট কোর্ট সোসাইটির একটি সেশন ছবি: মারুফ হাসান তমাল

আইন বিষয়ের গুরুত্ব বিবেচনায় যুগ যুগ ধরেই আইনশাস্ত্র জ্ঞান জগতের অপরিহার্য শাখা হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। আধুনিক সময়ে এসেও সে গুরুত্ব ফিকে হয়নি, বরং দেশে-বিদেশে উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে এটি অন্যতম অগ্রাধিকার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। দেশে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই আইন পড়ানো হয়। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত দুই বছরের সান্ধ্যকালীন এলএলবি পড়ানোর পর ১৯৭৩-৭৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে তা তিন বছরের এলএলবি অনার্স কোর্স চালু হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৭ সাল থেকে চার বছরের এলএলবি পড়ানো শুরু হয়।

বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক আইন শিক্ষার ইতিহাস সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম সারোয়ার জানান, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় তিনটি অনুষদ নিয়ে। এগুলো হলো কলা, বিজ্ঞান আইন। আইন বিষয়টি স্পেশালাইজড সাবজেক্ট হওয়ায় পৃথিবীজুড়েই স্ট্যান্ডার্ড হলো একটি বিষয় নিয়েই একটি অনুষদ হবে। সে অনুযায়ী শিক্ষাদান কার্যক্রম চলে আসছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই আইন শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, এআইইউবিসহ বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও আইন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের উচ্চতর পড়াশোনা করতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় বিষয়টি। আইন বিষয়ে দেশে পড়ালেখা ছাড়াও উচ্চতর পড়াশোনার জন্য বিদেশে যান, এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়।

আইন কারা পড়বেন, কেন পড়বেন প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সহকারী অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যায় সব ডিসিপ্লিন থেকেই আইন পড়ার সুযোগ রয়েছে। সায়েন্স, কমার্স, হিউম্যানিটিজ যেকোনো ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থী বিষয় হিসেবে আইন বেছে নিতে পারেন। তবে এসএসসি এইচএসসি লেভেলে আইনের বেসিক বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেয়া থাকলে ভালো হতো। তাহলে তখন থেকেই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ত। সংকটটা হয় যখন কেউ কেউ অন্য বিভাগে সুযোগ না পেয়ে পড়ে। এজন্য বলব, যাদের আগ্রহ আছে তাদেরই বিষয়ে পড়া উচিত।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খাদেমুল ইসলাম জানান, আইন পেশায় আসতে হলে শিক্ষার্থীর ব্যাকগ্রাউন্ড বড় কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়। শুধু প্রয়োজন পেশার প্রতি আগ্রহ ধৈর্যের। অন্য ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেও আইন পেশায় ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বহু নজির আছে। যেকোনো বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেও কেউ চাইলে আইন পড়তে পারে এবং সেক্টরে ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারে।

আইন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ার অন্যতম কারণ সামাজিক সম্মান ভালো আয়ের সুযোগ। বর্তমান সময়ে আদালত ছাড়াও বিস্তর কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে আইন বিষয়ে স্নাতকদের। সরকারি-বেসরকারি বড় প্রতিষ্ঠান তো বটেই মাঝারি এমনকি ছোটখাটো প্রতিষ্ঠানগুলোও আইনি বিষয়গুলো দেখভালের জন্য বিষয়ে ডিগ্রিধারীদের নিয়োগ করে।

আইনজীবী হিসেবে সফল ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা তো আছেই। এছাড়া সহকারী জজ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সরকারি চাকরির সুযোগ আছে। বিসিএসে পররাষ্ট্র, প্রশাসন, পুলিশ, কাস্টমস ইত্যাদি নন-টেকনিক্যাল ক্যাডার হওয়া যাবে। কমিশনড অফিসার পদমর্যাদায় সেনা, নৌ বিমানবাহিনীতে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জাজ অ্যাডভোকেট জেনারেল হিসেবে চাকরির সুযোগ রয়েছে। আইন, বিচার সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে সহকারী আইন সচিব হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার কথাও ভাবতে পারেন কেউ কেউ।

বিদেশী দূতাবাস, ব্যাংক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে অফিসার হিসেবে কাজ করতে পারেন অনেকে।

চাইলে কেউ দেশের বাইরেও বিষয়ে পড়াশোনা ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে এলএলবি সম্পন্ন করে সিনিয়র কোর্টস অব ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসের সলিসিটর মুহাম্মদ সাঈদ (বাকি) জানান, যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রয়েছে এলএলবি, এমফিল পিএইচডি করার অবারিত সুযোগ। কেউ চাইলে ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইনটেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টি, বিজনেস , সমুদ্র আইন, সাইবার ক্রাইম, পরিবেশ আইন ইত্যাদি বিষয়ে এলএলএম করতে পারেন।

ব্রিটেনে কেউ যদি আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেলে ভর্তির জন্য আবেদন করতে চায়, তাহলে দরকার লেভেল বা  এইচএসসি ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার প্রমাণ মাস্টার্স অব লয়ে পড়ালেখা করতে চায়, তাহলে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি, ইংরেজি ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণ, পার্সোনাল স্টেটমেন্ট জমা দিতে হয়। সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ  ভর্তির জন্যে আবেদন জমা দিতে হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করে অফার লেটার ইস্যু করে।

আইনের শিক্ষক গোলাম সারওয়ার জানান, দায়িত্ববোধসম্পন্ন নাগরিক হওয়ার জন্য আইন পড়াটা দারুণ কাজের। আইনের শিক্ষার্থীরা শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে অগ্রণী "মিকা রাখতে পারে, যা বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নকে টেকসই করতেও সহায়ক হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন