কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম বিচারক নিশি আক্তার

ফিচার প্রতিবেদক

মেঘনা নদী অববাহিকায় বাড়ি নিশি আক্তারের। সেজন্যই হয়তো নদীর মতোই শান্ত মেয়েটি। তার পড়াশোনায় সাফল্যও নদীর মতোই নিরবধি বয়ে চলে, জানান দেয়। মেঘনাপাড়ের কমলনগর উপজেলা থেকে যেখানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার যাত্রাটাই প্রতিকূল, সেখানে নিজ বিভাগের কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অংশ হওয়া তো গৌরবেরই। নিশি আক্তার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শিক্ষার্থী, যিনি বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন (বিজেএসসি) পরীক্ষার মাধ্যমে সহকারী জজ হিসেবে প্রথম সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

তো গেল ইতিহাসের অংশ হওয়ার কথা, খবর পাওয়ার ক্ষণটিও নিশির কাছে নাটকীয়। ১৪তম সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ফলাফল যেদিন প্রকাশিত হয়, সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের স্নাতকোত্তর (এলএলএম) পরীক্ষার হলে নিশি। পরীক্ষার হলেই আসে এমন সুখবর। এর আগে নিশি আক্তার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৫-১৬ সেশনে আইন বিভাগ থেকে স্নাতকে সিজিপিএ .৭৩ পেয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। হাতছানি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার, সে আশা এখনো ফিকে হয়ে যায়নি। তবে শুরু থেকেই বিচারক হওয়ার মনোবাসনাকেই সামনে রেখেছেন লক্ষ্মীপুরের মেয়ে নিশি।

লক্ষ্মীপুর সদরের চন্দ্রগঞ্জ থানার কুশাখালী ইউনিয়নের নিশি স্কুলজীবন থেকেই মেধার স্বাক্ষর রেখে আসছেন। ২০১২ সালে গোল্ডেন প্লাস পেয়ে এসএসসিতে উত্তীর্ণ হন। এরপর ২০১৪ সালে এইচএসসিতেও গোল্ডেন প্লাস পান। পরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন।

প্রথমবারেই বাজিমাত, এক চেষ্টাতেই সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া নিশি আক্তারের জীবন এখনো ঘোরের মধ্যে, নিজের এমন ঈর্ষণীয় ফলকে যেন নিজের চোখেই বিশ্বাস হচ্ছে না। ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত এর চেয়ে বড় পাওয়া আমার জীবনে কিছু ছিল না। আমি কখনই আশা করিনি এত সহজে বিচারক হওয়ার সিঁড়ি পেরোতে পারব। আমার কাছে অর্জন জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া। সাফল্যে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে আমার বড় ভাই দীপু। ওর দিকনির্দেশনায় আমার পর্যন্ত আসা। ওর প্রতি আমি সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ। তাছাড়া আমার বাবা-মা, ভাই-আপুরা তো আছেই।

পরিবার, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগের শিক্ষকদের বাইরে বন্ধুদের পাশে থাকাকেও বিশাল মনে করেন তরুণী। বলেন, আমার বিজেএসসি ভাইভার জন্য সেমিস্টারের পরীক্ষা এক মাস পিছিয়েছে আমার ব্যাচমেটরা। সাফল্যে ওদের অবদানও অনেক। পড়াশোনা যখন করতাম তখন তো মনে ইচ্ছা ছিলই। এটা মাথায় রেখেই পড়েছি। তবে প্রথমেই যে হয়ে যাবে এটা ভাবিনি। ফলাফলের দিন মাস্টার্সের শেষ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাটি ছিল। সঙ্গে ছিল তিনটা মিডটার্ম পরীক্ষা। দুটা মিডটার্ম দেয়ার পরে জুডিশিয়ারির ফল প্রকাশিত হয়েছিল। সবাই তখন আমাকে রোল জিজ্ঞাসা করছিল। কিন্তু আমি স্তব্ধ হয়ে ছিলাম। হাত পা কাঁপা শুরু করেছিল। সময় আমার এক বান্ধবী সুমাইয়া খান, যে আমার সঙ্গে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছে, সে জানত আমার রোল। সে এসে বলল, আমার হয়েছে। এরপর আমি নিজে দেখে নিশ্চিত হলাম। এরই মধ্যে আমাদের তৃতীয় মিডটার্মের খাতা দিয়ে দিয়েছিল। পরীক্ষা দিয়েই প্রথমে আম্মু-আব্বু, ভাইয়াকে ফোন দিলাম। আমার আব্বু তো খুশিতে প্রায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন।

অনুজদের জন্য পরামর্শ হিসেবে নিশি আক্তার বলেন, জুডিশিয়ারি পরীক্ষার পথচলা অনেক কঠিন। তবে ধারাবাহিকভাবে পরিশ্রম করে গেলে পথচলাটা বেশ মসৃণ হয়ে যায়। অনুজদের এটাই বলব, ডিপার্টমেন্টের পড়াশোনা ভালোভাবে করতে। কারণ ডিপার্টমেন্টের পড়া ভালোভাবে পড়লেই জুডিশিয়ারির অনেকটা প্রিপারেশন নেয়া হয়ে যায়। আমার বিশ্বাস, আমার অনুজরা আমার থেকেও ভালো করবে ভবিষ্যতে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন