প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহ না থাকলে সিএসই পড়তে আসা উচিত না

অধ্যাপক . সালেকুল ইসলাম দায়িত্ব পালন করছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রকৌশল বিভাগের (সিএসই) প্রধান হিসেবে। পাশাপাশি বোর্ড অব অ্যাক্রেডিটেশন ফর ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনিক্যাল এডুকেশনের তিনটি টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য পদে রয়েছেন বুয়েটের গ্র্যাজুয়েট। পিএইচডি করেছেন কানাডার কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। সিএসই বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাইফ সুজন

দেশের উচ্চশিক্ষায় বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সিএসই নিয়ে পড়ার বিষয়ে বিপুল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এর কারণ কী?

দেশে বিজ্ঞান প্রকৌশল বিষয়ে পড়ালেখার ক্ষেত্রে বুয়েটের (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) ভূমিকা প্রভাব অনেক বেশি। শিক্ষার্থী তাদের অভিভাবকরা অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠানটিকে অনুসরণ করে। সিএসই পড়ার ক্ষেত্রে যে ব্যাপক আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে, সেখানেও বুয়েটের ভূমিকা রয়েছে। আপনি যদি বুয়েটের ভর্তির দিকে তাকান, দেখা যাচ্ছে সেখানে ভর্তিচ্ছুদের মধ্যে সিএসইকে প্রথম পছন্দ হিসেবে বেছে নিচ্ছে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী। এছাড়া চাকরির বাজারও একটি বড় প্রভাবক। বর্তমানে এমন কোনো খাত নেই, যেখানে কম্পিউটারসংক্রান্ত কর্মসংস্থান নেই। দেশের পাশাপাশি চাকরির বৈশ্বিক বাজারেও কম্পিউটার বিজ্ঞানের স্নাতকদের বেশ চাহিদা রয়েছে। এসব প্রেক্ষাপটই শিক্ষার্থীদের সিএসই পড়ার ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করছে।

সিএসই পড়তে চাইলে গণিতে ভালো হতে হয়এমন একটি কথা অনেককেই বলতে শোনা যায়। আসলে কি তাই?

হ্যাঁ, রকম একটা বক্তব্য আমরাও প্রায় শুনি। সিএসই গণিতের মধ্যে প্রত্যক্ষভাবে অনেক বেশি সম্পর্ক রয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। তবে যে শিক্ষার্থী মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভালোভাবে গণিত বুঝে আসে, আমরা মনে করি, তার মধ্যে প্রবলেম সলভিং ক্যাপাবিলিটি ভালো, যা সিএসই পড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক। এজন্যই এটা বলা হয়। আবার ভিন্ন ধারণাও রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, সিএসই পড়তে পদার্থ বিজ্ঞান গণিতের দরকার নেই, যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। আমার মতে, সিএসই পড়ার জন্য গণিতে পাণ্ডিত্যের দরকার নেই, সেটা ঠিক আছে। তবে যখন একজন শিক্ষার্থী গণিত ভালো পারে, তখন আমরা ধরে নিই তার মাথাটা অ্যানালিটিক্যাল চিন্তার জন্য সে প্রস্তুত।

যারা সিএসই বিষয়ে পড়তে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা সিএসইর শিক্ষার্থীদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই ভালো করতে পারছে না। এর বড় কারণ ছেলেমেয়েরা আসলে জানেই না, সে সিএসইর জন্য উপযুক্ত কিনা। অত্যুৎসাহী হয়ে সিএসইতে ভর্তি হয়ে অনেকেই বিপাকে পড়ছে। ফলে তাদের বড় একটা অংশ প্রোগ্রামিং বা ব্যবহারিক বিষয়গুলো না শিখে কোনোমতে সিজিপিএ ধরে রাখছে। অনেক গ্র্যাজুয়েটকে দেখা যায়, আত্মবিশ্বাস না থাকায় কম্পিটার রিলেটেড পেশায় না গিয়ে অন্যান্য পেশায় যুক্ত হচ্ছে। তাই আমি বলব, কেউ যদি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখার প্রতি নিজে থেকে আগ্রহী না হয়, তাহলে তার সিএসই পড়তে আসাই উচিত না। আমাদের দেশে ভালো ছাত্রের বৈশিষ্ট্য দুটিভালো মুখস্থ করতে পারা হাতের সুন্দর লেখা। কিন্তু সিএসই এমন না। এখানে বাস্তবভিত্তিক পড়াশোনা হাতেকলমে শেখার প্রতি আগ্রহ থাকতে হয়।

দেশে প্রতি বছর যেসব প্রকৌশলী গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছেন, তার উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই সিএসইর। চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে গ্র্যাজুয়েটদের মান নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। আপনাদের পর্যবেক্ষণ কী?

সবার মান খারাপ, তা বলা যাবে না। কারণ আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে অনেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পাচ্ছে। দেশের চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা অনেক ক্ষেত্রেই অতি প্রত্যাশার মধ্যে বাস করেন। তারা মনে করেন, একজন গ্র্যাজুয়েট বিশেষজ্ঞ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হন। আসলে বিষয়টি তেমন নয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীকে সব বিষয়ে মৌলিক ধারণা দেয়া হয়। চাকরির বাজারে গিয়ে কাজের মধ্য দিয়ে তার এক্সপার্টাইজ তৈরি হয়। এছাড়া বিদ্যালয় কলেজ পর্যায়ে আইসিটি (তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি) যুক্ত করা হয়েছিল একটি ভালো উদ্দেশ্যে, এখন দেখা যাচ্ছে, এটা আরো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ কম্পিউটার হাতেকলমে শেখানোর বিষয় হলেও স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের বইয়ের মাধ্যমে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখানো হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, আইসিটিতে সর্বোচ্চ গ্রেড নিয়ে আসা শিক্ষার্থীদেরও কম্পিউটারের ওপর বাস্তব জ্ঞান নেই। এমনকি অনেকে জীবনে কম্পিউটার ছুঁয়েও দেখেনি।

বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কম্পিউটার বিজ্ঞান কম্পিউটার প্রকৌশল আলাদা ডিগ্রি হিসেবে পড়ানো হয়। বাংলাদেশে কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রকৌশল একসঙ্গে পড়ানো হয়। এর কারণ কী?

প্রথম বুয়েটে নাম ব্যবহার করা হয়। কারণ ইঞ্জিনিয়ারিং না থাকলে সেখানে কোনো সাবজেক্ট খোলা যায় না। তাই এখানে হার্ডওয়্যার সফটওয়্যার উভয়ের ওপরই গুরুত্বারোপ করা হয়। কিন্তু বিদেশে এটা করে না। সব জায়গায় বলা হয় শুধু কম্পিউটার সায়েন্স। সেখানে সফটওয়্যার পড়ানো হয় এবং সামান্য পরিমাণে হার্ডওয়্যার পড়ানো হয়। আর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য বাইরের দেশে একটা আলাদা ডিগ্রি আছে, যাকে বলা হয় ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) এখানে প্রধানতম হার্ডওয়্যার নিয়ে কাজ করে। আমরা হার্ডওয়্যার কম পড়াই, কারণ আমাদের দেশে তেমন শিল্পপ্রতিষ্ঠান নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন