যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন

প্রতারণা নিয়ে সতর্ক করে মার্কিন দূতাবাসের মামলা

নিহাল হাসনাইন

ইউএসএ ট্যুর ফেয়ার নামের একটি ভিসা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা সম্পর্কে সতর্ক করে মামলা করেছে মার্কিন দূতাবাস। মামলায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ইউএসএ লটারি নামে বিশেষ এক ধরনের ফরম পূরণ করিয়ে অন্তত ২০ হাজার অভিবাসন প্রার্থীর কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে।

নিজস্ব অনুসন্ধানে অভিবাসনের নামে প্রতারণার সত্যতা পেয়ে ইউএসএ ট্যুর ফেয়ারের স্বত্বাধিকারী জাহিদ হোসেনকে গত বুধবার থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস। সেদিনই দূতাবাসের পক্ষ থেকে -সংক্রান্ত মামলাটি করা হয়। পরে জাহিদ হোসেনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা হলেন মো. সোলাইমান মুকুল।

মার্কিন দূতাবাসের অভিযোগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দিয়ে অভিবাসন প্রার্থীদের প্রলুব্ধ করছে ইউএসএ ট্যুর ফেয়ার। বিজ্ঞাপনটি বেশ কিছুদিন ধরে ফেসবুক ইউটিউবে ঘুরছে।

বিজ্ঞাপনটিতে বলা হয়, ২৫ ডলার বা হাজার ১০০ টাকা দিয়ে ইউএসএ লটারিতে অংশ নেয়া যাবে। ৩০ এপ্রিল রাত ১০টায় ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে লটারি বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। লটারিতে বিজয়ী ১০ জন কোম্পানির খরচে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পাবেন। বাকি ৯০ জন মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ইন্দোনেশিয়ায় ছয়দিনের ট্যুর করতে পারবেন।

বিষয়ে মার্কিন দূতাবাসের বক্তব্য হলো, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) প্রোগ্রাম বন্ধ রয়েছে ২০১২ সাল থেকে। ওই লটারিতে অংশ নিতে কারো কাছ থেকে অর্থও নেয়া হয় না। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দিয়ে থাকে মার্কিন সরকার। বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান ভিসার নিশ্চয়তা কোনোভাবেই দিতে পারে না।

ইউএসএ ট্যুর ফেয়ারের বিজ্ঞাপন সম্পর্কে জানতে পেরে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ শুরু করে মার্কিন দূতাবাস। পরে দূতাবাসের পক্ষ থেকে ধরনের অভিবাসন প্রতারণার ফাঁদ সম্পর্কে আগাম সতর্ক করে সম্প্রতি একটি মামলা করা হয়। দূতাবাসের কর্মকর্তা মাইকেল লি বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলাটি করেছেন। মামলা নম্বর ৪৭। মামলায় আসামি করা হয়েছে ইউএসএ ট্যুর ফেয়ারের স্বত্বাধিকারী জাহিদ হোসেনসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ঢাকার মার্কিন দূতাবাস ইউএসএ ট্যুর ফেয়ার নামের একটি ভিসা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের অভিবাসন প্রতারণায় সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে। ২০১২ সাল থেকে ডিভি লটারি ড্র বাতিল করেছে আমেরিকা। কিন্তু ইউএসএ ট্যুর ফেয়ার নামের বাংলাদেশী ভিসা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি ডিভি লটারি ড্র প্রচারের জন্য একটি ওয়েবসাইট, একটি ইউটিউব চ্যানেল, একটি ফেসবুক পেজ একটি গুগল প্লে অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে। ইউএসএ ট্যুর ফেয়ার বাংলাদেশী নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের জন্য ভিসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি জাল ডিভি লটারি ড্র প্রচার করেছে।

প্রতারণামূলকভাবে অর্থ আত্মসাতের প্রক্রিয়া তুলে ধরে মার্কিন দূতাবাস বলছে, ইউএসএ ট্যুর ফেয়ার বাংলাদেশী নাগরিকদের গুগল প্লে অ্যাপ ব্যবহার করে একটি আবেদন জমা দিতে এবং হাজার ১০০ টাকা ফি দিতে বলেছে। ইউএসএ ট্যুর ফেয়ার ডিভি লটারি ড্রয়ের বিজয়ীদের নাম ঘোষণার জন্য আগামী ৩০ এপ্রিল (শনিবার) ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে একটি ইভেন্ট করার ঘোষণা দিয়েছে। পরে হোটেল কর্তৃপক্ষ ইভেন্টের বিষয়ে ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসকে বিস্তারিত জানায়। ডিভি বা ইউএসএ লটারি ড্রয়ের জন্য ওয়েস্টিন হোটেলে একটি বলরুম বুকিং করেছিলেন জাহিদ হোসেন।

মার্কিন দূতাবাসের ভাষ্যমতে, জাহিদ হোসেন প্রতারণামূলকভাবে জাল ইউএস ডাইভারসিটি ভিসা লটারি ড্রয়ের জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। তিনি লটারির জন্য এরই মধ্যে অভিবাসন প্রার্থীদের কাছ টাকা নিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করেছেন। জাহিদ হোসেন এবং ইউএসএ ট্যুর ফেয়ারের  আমেরিকায় অভিবাসন সংক্রান্ত সব দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা। লটারির মাধ্যমে বিজয়ীদের স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগ করে দেয়ার কথা বলা হলেও তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ভিজিট ভিসা দিয়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া হতো। পরবর্তী সময়ে তারা অভিবাসনের নামে মানব পাচারের শিকার হতেন।

তদন্তের অগ্রগতি জানতে যোগাযোগ করা হয় গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মামুন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ইউএসএ ট্যুর ফেয়ারের স্বত্বাধিকারী জাহিদ হোসেনকে গ্রেফতারের পর তিনি সোলাইমান মুকুল সম্পর্কে তথ্য দেন। পরে তাদের দুজনকেও গ্রেফতার করা হয়। তারা মূলত সদস্য সংগ্রহের কাজ করতেন। পরে তাদের আদালতে তুলে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন