বাংলাদেশে অতীতে মহামারী হিসেবে কলেরা, নিপাহভাইরাস, চিকুনগুনিয়া, জিকা ও ডেঙ্গু দেখা দিয়েছিল। বর্তমানে কভিড-১৯ অতিমারীর প্রাদুর্ভাব তাই মহামারী হিসেবে মোটেই প্রথম নয়। কিন্তু যেকোনো মহামারীর সময় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর বাস্তব স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার চিত্র প্রায় সবারই কিছুটা পরিচিত এবং সহজেই অনুমেয়। শুধু কভিড-১৯ মহামারী নয়, বর্তমান ও ভবিষ্যতে যেকোনো মহামারীই দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য এক বিশাল বড় চ্যালেঞ্জ। আর সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য পরিচর্যার জন্য শুধু স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নই যথেষ্ট নয়, বরং সেই সাথে স্বাস্থ্য অবকাঠামোগুলো তথা হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রভৃতি স্থাপনা সঠিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাসহ মানুষকে কতখানি মানসম্মত সেবা দিতে পারছে তা নিয়ে সতর্ক হওয়া এখন সময়ের দাবি। একটা সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে তাল মিলিয়ে দেশের মানুষের চাহিদা ছিল ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’, কিন্তু এখন দিন বদলেছে। বিশ্বব্যাপী মানুষের চাহিদার সাথে মিলিয়ে তাই এখন শব্দগুলোকেও সাজাতে হয়েছে নতুন করে। আর তা হলো ‘সবার জন্য সহজলভ্য ও মানসম্মত স্বাস্থ্য’। অর্থনৈতিকভাবে খুব একটা সমৃদ্ধ না হলেও স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি রয়েছে।
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকেও স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার জন্য দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের একটি বিশাল বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা বর্তমানে ৬৫৪ এবং বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৫ হাজার ৫৫। এছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন সাব-সেন্টার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রভৃতি মিলিয়ে গ্রামাঞ্চল ও শহরের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া এখন কিছুটা সহজ হয়েছে। গ্রামীণ পর্যায়ে স্বাস্থ্য খাতে এবং নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর অবস্থাও আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে, কিন্তু মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার নানা অসংগতি ও সীমাবদ্ধতা বরাবরই অবহেলিত রয়ে গেছে।
সুচিকিৎসা ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মূল শর্ত হচ্ছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা আর তাই সর্বপ্রথম দরকার হচ্ছে হাসপাতাল ভবনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন সুসংগঠিত করা। সাম্প্রতিক কভিড-১৯ মহামারী স্পষ্টভাবে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর অবকাঠামোগত দুর্বলতা, অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতা সবার সামনে তুলে ধরেছে এবং বুঝিয়ে দিয়েছে যেকোনো মহামারীর কাছে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কতখানি ভঙ্গুর ও অসহায়।
হাসপাতাল ও সেবাকেন্দ্রগুলো মূলত সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান আর যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপনার ওপর সেই প্রতিষ্ঠানের সফলতা ও মান নির্ভর করে। স্বাস্থ্য খাতের অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রচুর আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন ও ভবনগুলোকে মানসম্মত সেবাদানের উপযোগী করে তোলার ব্যপারে খুব একটা কথা বলতে দেখা যায় না। বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতাল বলতেই রোগীদের উপচে পড়া ভিড়, বহুদিনের পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, জরাজীর্ণ ডাক্তারের চেম্বার, স্যাঁতসেঁতে দেয়াল, রোগীদের অপরিচ্ছন্ন বিছানা, নোংরা পরিবেশ, দুর্গন্ধযুক্ত টয়লেট, হাসপাতালের বর্জ্য নিষ্কাশনের অব্যবস্থাপনা—এসব চিত্রই ভেসে ওঠে চোখের সামনে। কভিড-১৯ মহামারীর স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ভিড়ে দাঁড়ানোটাও দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছিল। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে বলা হলেও মহামারীর সময় প্রয়োজনীয় ডাক্তার-নার্সসহ সেবাকর্মীদের অভাব, আইসিইউ সংকট, স্বাস্থ্যবিধি না মানতে পারার সীমাবদ্ধতাগুলো, চিকিৎসা উপকরণের সংকট—এসব বিষয় অবকাঠামোগত দুর্বলতাগুলোকে আরো প্রকটভাবে প্রকাশ করেছে। হাসপাতাল ও সেবাকেন্দ্রগুলো সংখ্যায় বেড়েছে, কিন্তু সুচিকিৎসা ও সেবার গুণগত মান নিশ্চিত করতে সেই সংখ্যা অত্যন্ত অপ্রতুল। বর্তমানে অনেক নান্দনিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু সেগুলোর ব্যবস্থাপনা ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। বাংলাদেশের হাতে গোনা কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাদে প্রায় কোনো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানেরই মহামারী চলাকালীন যে সেবা প্রদানের চাহিদা তৈরি হয় তা মোকাবেলা করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বা অবকাঠামোগত প্রস্তুতি নেই। এছাড়া কভিড-১৯ মহামারীর সময় দেখা গেছে, অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো। অবকাঠামোগত প্রস্তুতির অভাবে কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের স্থান সংকুলান ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দেয়া তো দূরের কথা, বরং অন্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা পড়ে গিয়েছে সংকটের মুখে।
রোগীদের সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের উন্নত মানের জন্য হাসপাতাল ভবন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। রোগীকে সুচিকিৎসার অভিজ্ঞতা দিতে হলে নান্দনিক, পরিচ্ছন্ন ও উন্নত মানের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। হাসপাতাল জীবন রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান বিধায় সেখানে প্রবেশের সাথে সাথেই রোগী যেন সুচিকিৎসার ব্যাপারে আশ্বস্ত হতে পারে এবং সুন্দর পরিবেশ দেখে চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখতে পারে সেজন্য সঠিক ভবন নির্মাণ পরিকল্পনা ও জরুরি বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে নকশা প্রণয়ন করতে হবে। বাংলাদেশের অধিকাংশ হাসপাতাল নির্মাণের ক্ষেত্রে এ জরুরি ব্যাপারটি প্রায় উপেক্ষিতই থাকে। হাসপাতালের জন্য প্রশস্ত রাস্তাসহ পর্যাপ্ত পার্কিং সুবিধা ও রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, গাড়ি ও অন্য সব যানবাহন যেন সহজেই হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ঢুকতে ও বেরিয়ে যেতে পারে সেদিকে নজর রাখা জরুরি। নির্ভরশীল ও নিরাপদ চিকিৎসা সেবার জন্য হাসপাতাল ভবনের নির্মাণ কৌশলও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হাসপাতাল ভবনের কোন জায়গায় কোন সার্ভিসটি দেয়া হবে তার ওপর হাসপাতালের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে সেটি নির্ভর করে। হাসপাতালে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা উপকরণ থাকে বলে সম্পূর্ণ ভবনের নিরাপত্তার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। হাসপাতালের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির নিয়মিত ও সুষ্ঠু নিরীক্ষণের পাশাপাশি অগ্নিনিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ও তত্ক্ষণাৎ কার্যকর ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। বেশির ভাগ হাসপাতালে এসব বিষয় উপেক্ষা করা হয় বলে প্রায়ই দুর্ঘটনার খবর শোনা যায়।
হাসপাতালের পরিচ্ছন্ন ও নান্দনিক পরিবেশ যে শুধু রোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা নয়, এমনকি হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য সেবা প্রদানকারী ব্যক্তির জন্যও এটি সমান গুরুত্বপূর্ণ। হাসপাতালের কর্মচারীদের মধ্যে ইতিবাচক কর্মোদ্দীপনা তৈরি করার জন্য কর্মস্থলের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর পরিবেশ ভালো ভূমিকা রাখে। অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে দেখা যায় বহির্বিভাগে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। এছাড়া হাসপাতালের ডাক্তারদের চেম্বারগুলো অত্যন্ত স্বল্প জায়গা নিয়ে নির্মিত। সেখানে ডাক্তারের সামনে রোগী ঠিকমতো বসে কথা বলার সুযোগ ও পায় না। ডাক্তার ও রোগী দুই পক্ষেরই মনোবল এতে ক্ষুণ্ন হয়।
হাসপাতালের রিসেপশন ও তথ্য ডেস্ক, বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ, ভর্তি বিভাগ, অ্যাকাউন্টস, কাস্টমার কেয়ার বিভাগ, হিউম্যান রিসোর্স, স্যাম্পল কালেকশনের জায়গা প্রভৃতি সুপরিকল্পিত নকশার সাহায্যে উপযুক্ত জায়গায় স্থাপন করা উচিত। দেশের হাসপাতালগুলোতে এসব থাকলেও সেগুলো সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী নকশা করে বাস্তবায়ন করা হয় না। এছাড়া হাসপাতালে অবস্থিত টয়লেটগুলো কর্তৃপক্ষের অযত্নে ও অব্যবস্থাপনায় ব্যবহারের অযোগ্য ও নোংরা অবস্থায়ই ব্যবহারকারীরা ব্যবহার করে। টয়লেট রোগ-জীবাণু ছড়ানোর মাধ্যম। তাই টয়লেটগুলোকে পরিচ্ছন্ন রাখার দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন।
হাসপাতালে বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগ-ব্যাধি নিয়ে রোগীরা আসে। এসব সংক্রামক রোগী থেকে রোগ-জীবাণু সুস্থ মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। কভিড-১৯ মহামারীর ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি প্রায় সারা বিশ্বের সব হাসপাতালই অবলোকন করেছে। এ ধরনের মহামারী সংক্রমণ রোধে হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণ পরিকল্পনার শুরুতেই দ্রুত সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সম্পূর্ণ পৃথক একটি বিভাগ গড়ে তোলা জরুরি, যেখানে রোগীদের সেবা প্রদানের জন্য আইসোলেশন এরিয়া, বিছানা, কেবিন ও আইসিইউ সুবিধাসহ পৃথক ডাক্তার-নার্স ও অন্যান্য সেবাকর্মী নিযুক্ত থাকবেন। এ বিভাগের যাতায়াত ব্যবস্থাও হবে মূল হাসপাতালের যাতায়াত ব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। নিরাপদ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা ও সুচিকিৎসা নির্ধারণের অন্যতম শর্ত হচ্ছে হাসপাতালের অন্যান্য সংক্রামক রোগ থেকে বেঁচে থাকা। তা না হলে হাসপাতালে আরোগ্যের জন্য চিকিৎসা নিতে এসে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে এবং তা শুধু রোগী নয়; ডাক্তার ও অন্যান্য সেবাকর্মীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এ ধরনের সংক্রামক রোগের জন্য রোগী ও তার সাথে থাকা পরিবারের লোকজনের ভয়-উদ্বেগেও চিকিৎসা খরচ বেড়ে যায়। রোগী আর্থিক, মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বাংলাদেশের হাসপাতালগুলো আসা নারী-শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য উপযোগী করে তোলার জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। অথচ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে সর্বজনীন ও সবার জন্য প্রবেশগম্য করে তোলার জন্য এ বিষয়গুলোতে নজরদারি প্রয়োজন। যেমন প্রতিবন্ধী ও চলাচলে অক্ষম রোগীদের জন্য তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী র্যাম্প, লিফট প্রভৃতির ব্যবস্থা করা। হাসপাতালের সর্বস্তরে সর্বজনীন গম্যতা নিশ্চিত করার জন্য দরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া।
হাসপাতালের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়নের চাবিকাঠি হচ্ছে সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের সঠিক পরিকল্পনা। বাংলাদেশের খুব কম হাসপাতালই একই ছাদের নিচে সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করার ক্ষমতা রাখে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যবস্থা প্রায় নেই বললেই চলে। সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবার অভাবে রোগীকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের জন্য ছোটাছুটি করতে হয়। তাই যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি হাসপাতালগুলোকে সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার চেষ্টা করা উচিত।
বর্তমানে সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ব্যবস্থার সাথে যুক্ত হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর হাসপাতাল বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর জন্য এখন মামুলি ব্যাপার, কিন্তু বাংলাদেশে এখনো হাসপাতাল খাতে প্রযুক্তির ছোঁয়া উল্লেখযোগ্যভাবে দেখা যায়নি। অনেক হাসপাতাল সাধারণ চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবেও সঠিক চিকিৎসা সেবা দিতে পারছে না। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে হাসপাতাল অবকাঠামোর প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিকায়ন এখন সময়ের দাবি।
হাসপাতালের অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য আরেকটি জরুরি বিষয় হলো হাসপাতালের সরঞ্জামাদির ব্যবস্থাপনা। হাসপাতালের ওষুধ, অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি, যন্ত্রপাতি, উপকরণ ইত্যাদি প্রয়োজনমতো হাতের কাছে পাওয়া ডাক্তার ও সেবাকর্মীদের জন্য একটি অপরিহার্য বিষয়। তাই এসব প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির সঠিক ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণ ও ব্যবহার উপযোগী করে রাখার জন্য হাসপাতালে সঠিক জায়গা নির্ধারণ করা দরকার।
হাসপাতালের অবকাঠামো উন্নয়নে আরেকটি মূল শর্ত হলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। হাসপাতালে আসা-যাওয়া করে এমন সব ব্যক্তির স্বাস্থ্যনিরাপত্তার জন্য হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা এখনো অনেক দুর্বল। অনেক হাসপাতালে বিষয়টিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়। হাসপাতালের বর্জ্যের সাথে সংক্রামক, ধারালো, প্লাস্টিক ও বায়োমেডিকেল বর্জ্য থাকে। এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে, যেন তারা নিয়মিত বিষয়টি অনুশীলন করার মাধ্যমে এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেন। অনেক হাসপাতাল তরল বর্জ্য সরাসরি শহরের সুয়ারেজ লাইনের সাথে যুক্ত করে দেয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালগুলোর অবকাঠামো বিনির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে নানাবিধ অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনাকে নজরে এনে দক্ষ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে আন্তরিক চিকিৎসা সেবা পাওয়া এখনো প্রাসঙ্গিক। তবু কভিড-১৯-এর মতো মহামারী বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে যেভাবে চ্যালেঞ্জ করেছে, তাতে এখনই ভবিষ্যতের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামোগুলোকে ঢেলে সাজানোর সুবর্ণ সুযোগ, নতুবা পরবর্তী মহামারী সামাল দেয়া হয়তো দুঃসাধ্য হবে।
নাজিয়া জাহান: স্থপতি
