ঈদুল আজহার ছুটির পর রাজধানীতে ফেরার জন্য হাতে সময় ছিল মাত্র একদিন। যেহেতু গতকাল সকাল ৬টা থেকে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশে কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে সরকার, তাই বৃহস্পতিবার শেষরাত পর্যন্ত ঢাকায় ফিরেছে মানুষ। বিধিনিষেধের কারণে গতকাল ভোর থেকে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঢাকায় ফিরেই বিপাকে পড়েছেন অনেকেই। যানবাহন না পেয়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়েছে বেশির ভাগ রাজধানীবাসীকে।
গতকাল সকাল থেকেই ঢাকার সড়কগুলোতে বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের যানবাহন। হাতে গোনা কয়েকটি রিকশা চোখে পড়ে কেবল। সকালে সায়েদাবাদ, পান্থপথ, শাহবাগ, ফার্মগেট, কল্যাণপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেক মানুষকে মালপত্র নিয়ে হাঁটতে দেখা যায়। মোড়ে মোড়ে ছিল যানবাহনের অপেক্ষায় থাকা মানুষের ভিড়। তাদের বেশির ভাগই ঈদ উদযাপন শেষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভোরেই ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন।
রশিদ শিকদার নামে এক কর্মজীবী জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে ফরিদপুরের বাড়ি থেকে বের হয়েছেন তিনি। গাড়ি পেতে রাত হয়ে গেছে। ঢাকায় পৌঁছেছেন ফজরের নামাজের সময়। কিন্তু বাসায় যাওয়ার জন্য কোনো বাহন পাননি। অগত্যা একটি রিকশাভ্যান ঠিক করে তাতে চড়ে পরিবার নিয়ে আজিমপুর যাচ্ছেন। তার অফিস বন্ধ না থাকায় দুর্ভোগ মাথায় নিয়েই ঢাকা ফেরার কথা জানালেন তিনি।
কক্সবাজার থেকে ভোরে ঢাকায় ফিরেছেন মামুন। রাজধানীতে ফেরার দুর্ভোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার বাসা রাজধানীর কলাবাগান এলাকায়। কক্সবাজার থেকে ভোরে ঢাকায় এসে পৌঁছেছি। সায়েদাবাদ থেকে কোনো গাড়ি না পেয়ে হেঁটেই রওনা দিই। সঙ্গে তিন সহকর্মী। রিকশাওয়ালা ৪০০ টাকা ভাড়া চায়। ভাবলাম কয়েকজন আছি, গল্প করতে করতে হেঁটেই চলে যাওয়া যাবে।
সরকার চাইলে ঈদফেরত মানুষদের জন্য আরো দুটো দিন গণপরিবহন চালু রাখতে পারত বলে মনে করেন আরেক কর্মজীবী হোসনা আক্তার। তিনি বলেন, শুক্র-শনিবার গণপরিবহন চালু থাকলে সবাই শান্তিপূর্ণভাবে ঢাকায় ফিরতে পারতেন। সবকিছুই কেমন যেন অপরিকল্পিত হয়ে যাচ্ছে। যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি নেই এমন মানুষ ডাবল ভাড়া দিয়ে হলেও ঢাকায় ফিরছে।
বিধিনিষেধের কারণে ঈদের পরদিনই ঢাকাফেরত মানুষের ঢল নামে। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ১৫ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত আটদিনে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মোবাইল অপারেটরদের গ্রাহকের একটি হিসাব তুলে ধরেন। এতে দেখা যায়, এ আটদিনে ১ কোটি ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৬৮৩ সিমধারী ঢাকা ছাড়েন। আর ঈদুল আজহার পরের দিন বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফেরেন ৮ লাখ ২০ হাজার ৫১৬ জন সিমধারী।
এবারের ঈদুল আজহায় গণপরিবহন চলার সুযোগ দেয়া হলেও ঢাকা ছাড়া মানুষের সংখ্যা গত ঈদুল ফিতরের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে প্রায় ৬৫ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছিল। একটি মোবাইল অপারেটর তাদের তথ্যভাণ্ডার ও কল প্রবণতা বিশ্লেষণ করে এ হিসাব জানিয়েছিল। সংখ্যাটি হিসাব করা হয়েছিল ইউনিক ইউজার ধরে। অর্থাৎ এক ব্যক্তির একাধিক সিম থাকলেও তাকে একজন গ্রাহক হিসেবেই গণ্য করা হয়েছিল।
ঈদুল আজহার সময় মানুষের চলাচল ও পশুরহাটে কেনাবেচার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করেছিল সরকার। এ সময়সীমা শেষ হওয়ার পর গতকাল সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় কঠোর বিধিনিষেধ। এ সময়ের জন্য কিছু শর্ত দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছিলেন, ঈদের পরের লকডাউন কঠোর থেকে কঠোরতর হবে। আগের লকডাউনে গার্মেন্টস খোলা থাকলেও এবার সবকিছু বন্ধ। এবার বন্ধ রয়েছে গার্মেন্টস, শিল্প-কলকারখানাসহ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান।