করোনা
মহামারীর কারণে
প্রায় ১৪
মাস ধরে
বন্ধ রয়েছে
দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এ অবস্থায়
শিক্ষা ব্যবস্থা
এগিয়ে নিতে
নানামুখী পদক্ষেপ
নেয়া হলেও
তা তেমন
কাজে আসেনি।
তাই সবকিছু
বিবেচনায় রেখে
সর্বশেষ ২
মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
খোলার ঘোষণা
হয়েছিল, কিন্তু
বাংলাদেশসহ সারা
বিশ্বে চলমান
কভিড-১৯
অতিমারীতে সংক্রমণের
ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত
হওয়ায় শিক্ষার্থী,
শিক্ষক, কর্মচারী
ও অভিভাবকদের
স্বাস্থ্য সুরক্ষা
ও সার্বিক
নিরাপত্তা বিবেচনায়
এবং কভিড-১৯
সংক্রান্ত জাতীয়
পরামর্শক কমিটির
সঙ্গে পরামর্শক্রমে
মাধ্যমিক ও
উচ্চ মাধ্যমিক
পর্যায়ের সব
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান
ছুটি ২৯
মে পর্যন্ত
বৃদ্ধি করা
হলো। ভবিষ্যৎ
প্রজন্ম এভাবে
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা
থেকে কতদিন
বঞ্চিত থাকবে?
আর বিলম্ব
না করে
অপ্রাতিষ্ঠানিক এবং
বিকল্প কী
হতে পারে
তা ভাবতে
এবং করতে
হবে।
বেসরকারি গবেষণা
সংস্থা পাওয়ার
অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি
রিসার্চ সেন্টার
(পিপিআরসি) ও
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট
অব ডেভেলপমেন্ট
অ্যান্ড গভর্ন্যান্স
(বিআইজিডি) যৌথভাবে
একটি গবেষণা
করেছে, যেখানে
দেখা যায়,
প্রাথমিক পর্যায়ে
১৯ ও
মাধ্যমিক পর্যায়ে
২৫ শতাংশ
শিক্ষার্থী পড়াশোনার
বাইরে চলে
গেছে বলে
তথ্য উঠে
এসেছে। এমন
পরিস্থিতিতে মহামারীর
চেয়েও সন্তানদের
শিক্ষাজীবন নিয়ে
উদ্বিগ্ন হয়ে
পড়েছেন অভিভাবকরা।
তারা ব্যাপকভাবে
শিক্ষার্থী ঝরে
পড়া ঠেকাতে
দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
খুলে দেয়ারও
সুপারিশ করেছেন।
করোনায় দেশে
দারিদ্র্যের রূপ
কীভাবে পরিবর্তিত
হচ্ছে, তা
জানাতে দেশজুড়ে
তিন ধাপে
একটি টেলিফোন
জরিপ করে
পিপিআরসি ও
বিআইজিডি। ২০২০
সালের এপ্রিল
থেকে ২০২১
সালের মার্চ
পর্যন্ত এটি
পরিচালিত হয়।
গবেষণার তৃতীয়
ধাপের দ্বিতীয়
অংশ হলো,
‘কভিড
ইমপ্যাক্ট অন
এডুকেশন লাইফ
অব চিলড্রেন’।
শহর ও
গ্রামের ৬
হাজার ৯৯টি
পরিবারের মধ্যে
জরিপটি করা
হয়। প্রতিটি
ক্ষেত্রে তিনটি
বিষয়কে গুরুত্ব
দেয়া হয়েছে।
সেগুলো হলো
স্কুলের ধরন,
স্থান ও
লিঙ্গ। হতদরিদ্র,
মাঝারি দরিদ্র,
ঝুঁকিপূর্ণ দরিদ্র
এবং দরিদ্র
নয়, এমন
পরিবারগুলোর ওপর
এ গবেষণা
করা হয়।
যেসব শিশু
সমাজের দরিদ্র
শ্রেণীভুক্ত, তাদের
অবস্থা মহামারীতে
সংকটাপন্ন। দীর্ঘদিন
ধরে স্কুল
বন্ধ থাকার
ফলে শিক্ষায়
ঘাটতি, শিক্ষার্থীদের
ঝরে পড়া,
মানসিক ও
অর্থনৈতিক সমস্যাসহ
দীর্ঘমেয়াদি নানা
ঝুঁকি বৃদ্ধি
পাচ্ছে।
করোনা মহামারী
শুরুর আগে
মাধ্যমিক স্কুলগামী
শিক্ষার্থীদের ২১
ও প্রাথমিক
স্কুলগামী শিশুদের
১৪ শতাংশ
ঝরে যেত।
গ্রামের চেয়ে
শহরের বস্তিতে
থাকা প্রাথমিক
ও মাধ্যমিক
পর্যায়ের শিশুদের
মাঝে ঝরে
পড়ার হার
বেশি। যারা
স্কুলে ভর্তি
হয়েছিল, মহামারীতে
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ
থাকায় তাদের
সব রুটিন
এলোমেলো হয়ে
গেছে। যদিও
অনেকেই পড়াশোনা
বন্ধ করতে
বাধ্য হয়েছে,
তবুও অধিকাংশ
শিক্ষার্থী ছয়টি
উপায়ে তাদের
পড়াশোনা চালিয়েছে।
এগুলো হলো
তদারকবিহীন নিজস্ব
পড়াশোনা, পরিবারের
সহায়তায় পড়াশোনা,
অনলাইনে বা
টিভির মাধ্যমে
দূরবর্তী শিক্ষণ,
কোচিং-প্রাইভেট
এবং স্কুল
থেকে মাদ্রাসায়
ভর্তি। তবে
এসব ক্ষেত্রেও
অনেক অনিয়ম
ছিল। গবেষণায়
শহরের শিক্ষার্থীদের
মাঝে শিক্ষণ
ঘাটতির ঝুঁকি
বেশি বলে
পরিলক্ষিত হয়েছে,
মেয়েদের ২৬
ও ছেলে
শিক্ষার্থীদের ৩০
শতাংশ এ
ঝুঁকিতে রয়েছে।
দরিদ্র শ্রেণীর
মানুষদের মাঝে
যারা অতিদরিদ্র,
সেসব পরিবারের
মাধ্যমিক স্কুলগামী
৩৩ শতাংশ
ছেলে শিক্ষার্থীর
করোনাসৃষ্ট অর্থনৈতিক
ধাক্কায় স্কুল
ছেড়ে দেয়ার
আশঙ্কা রয়েছে।
ফলাফলে আরো
দেখা গেছে
দূরবর্তী শিক্ষণের
জন্য যেসব
সুবিধা থাকা
দরকার, তা
আছে বা
ব্যবহার করছে
মাত্র ১০
শতাংশ শিক্ষার্থী।
ফলে সরকারি
ও বেসরকারি
চ্যানেলের মাধ্যমে
লেখাপড়া শেখার
হার খুব
কম। অবশ্য
যারা দরিদ্র
নয় এবং
শহরের বস্তিতে
থাকে, মাধ্যমিক
পর্যায়ের সেসব
শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে
এ হার
একটু বেশি।
একই সঙ্গে
কোচিংয়ে বা
প্রাইভেট টিউশনে
যাওয়ার প্রবণতা
মাধ্যমিক স্তরের
শিক্ষার্থীদের মাঝে
৬১ শতাংশ,
তবে যারা
দরিদ্র নয়,
তাদের মাঝে
এ হার
৭৪ শতাংশ।
আবার শহরের
বস্তি এলাকায়
খরচ বেশি
হওয়ায় কোচিংয়ে
যুক্ত হওয়ার
হার কম।
পড়াশোনায় যুক্ত
থাকার আরেকটি
পদ্ধতি হলো
পিতা-মাতা
বা ভাইবোনের
সহায়তায় পড়া।
যদিও প্রাথমিক
পর্যায়ের চেয়ে
মাধ্যমিক পর্যায়ে
এ সহায়তাপ্রাপ্তির
হার কম।
মাদ্রাসায় বদলি
হওয়ার প্রবণতা
বেড়ে আগের
চেয়ে চার
গুণ হয়েছে
এবং মাধ্যমিকের
চেয়ে প্রাথমিক
শিক্ষার্থীদের জন্য
মাদ্রাসায় ভর্তি
হওয়ার খরচ
বেড়েছে দ্বিগুণ।
গবেষণায় বলা
হয়, যদিও
৯৫ শতাংশ
অভিভাবক তাদের
সন্তানদের স্কুলে
পুনরায় পাঠাতে
আগ্রহী, তবুও
অর্থনৈতিক অবস্থাটি
এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ
একটি বিষয়।
২০২০ সালের
জুন থেকে
২০২১ সালের
মার্চ অবধি
শিক্ষা খরচ
বেড়েছে ১২
গুণ। ফলে
শিক্ষার সুযোগ
সীমিত হয়েছে।
স্কুলগামী ছেলেশিশুদের
৮ ও
মেয়েশিশুদের ৩
শতাংশ কোনো
না কোনো
উপার্জন প্রক্রিয়ায়
জড়িয়ে পড়েছে।
গ্রামীণ অঞ্চলে
যেখানে শহরের
তুলনায় মানুষের
আয় পুনরুদ্ধারের
ও কাজের
ভালো সুযোগ
রয়েছে, সেখানেও
এ হার
বেশি। মহামারীতে
শিক্ষার্থীদের মানসিক
স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে
গবেষণা বলছে,
শহরে বসবাসরত
১০ থেকে
২০ বছর
বয়সী শিক্ষার্থীদের
১৫ দশমিক
৭ ও
গ্রামের ৮
দশমিক ৪
শতাংশ শিক্ষার্থী
দ্বিগুণ মানসিক
চাপে রয়েছে।
অভিভাবকদের দেয়া
তথ্যানুযায়ী, এই
মানসিক চাপের
লক্ষণগুলো হলো
অধৈর্য ভাব
প্রকাশ, রাগ
বা উগ্র
ভাব এবং
বাইরে যেতে
ভয় পাওয়া।
ঘরের বাইরে
যেতে ভয়
পাওয়ার ব্যাপারটা
আবার গ্রামের
চেয়ে শহরের
তরুণদের মাঝে
বেশি। গবেষণায়
পিতা-মাতার
ব্যবহার ও
সম্পৃক্ততাও পর্যবেক্ষণ
করা হয়েছে।
এতে দেখা
যায়, ৪৮
শতাংশ অভিভাবক
শিক্ষার ঘাটতি
এবং ৫৯
শতাংশ অভিভাবক
শিশুদের পড়াশোনায়
অনুৎসাহ নিয়ে
দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। ৪৬
শতাংশ অভিভাবক
শিক্ষার ব্যয়ভার
নিয়ে শঙ্কিত।
এর তুলনায়
মাত্র ১৪
শতাংশ অভিভাবক
করোনাভাইরাস সংক্রমণ
নিয়ে চিন্তিত।
যদিও অর্ধেক
অভিভাবক বিলম্বিত
বা স্নাতক
পাস সম্পর্কে
উদ্বিগ্ন, প্রায়
৪৪ শতাংশ
স্থগিত পরীক্ষা
সম্পর্কে উদ্বিগ্ন
এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে
পাস হলে
ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান
সম্পর্কে সন্দেহ
প্রকাশ করছেন
৩১ শতাংশ
অভিভাবক। ৫১
শতাংশ প্রাথমিক
ও ৬১
শতাংশ মাধ্যমিক
শিক্ষার্থী পড়াশোনার
ক্ষতি এড়াতে
কোচিং ও
গৃহশিক্ষকের মাধ্যমে
পড়ালেখা চালিয়ে
নেয়ার সুযোগ
পেয়েছে।
শিক্ষণ ঘাটতি,
শিক্ষাব্যয় বৃদ্ধি
ও বিভিন্ন
স্তরের সামাজিক
দূরত্ব বেড়ে
গেছে বিদ্যালয়
বন্ধ থাকার
ফলে। শিক্ষায়
অনাগ্রহ কমাতে
এবং অভিভাবকদের
শিক্ষাসংক্রান্ত আশঙ্কা
দূর করতে
পুনরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
খুলে দেয়া
দরকার। শিক্ষার
ঘাটতি পূরণে
এবং পরিবর্তিত
পরিস্থিতির সঙ্গে
শিশুদের খাপ
খাওয়াতে পুনরায়
স্কুল খোলার
সময় প্রতিকারমূলক
ব্যবস্থার একটি
মিশ্র পদ্ধতি
গ্রহণ করা
দরকার।’ তদারকি
ছাড়া নিজে
নিজেই পড়া
ও অনিয়মিত
পড়ার কারণে
ঝুঁকি তৈরি
হয়েছে। শহরের
শিক্ষার্থীদের মাঝে
শিক্ষণ ঘাটতির
ঝুঁকি বেশি
বলে পরিলক্ষিত
হয়েছে, নারীদের
২৬ শতাংশ
এবং পুরুষদের
৩০ শতাংশ
রয়েছে এ
ঝুঁকিতে। দরিদ্র
শ্রেণীর মানুষদের
মাঝে যারা
অতিদরিদ্র, সেসব
পরিবারের মাধ্যমিক
স্কুলগামী ৩৩
শতাংশ পুরুষ
শিক্ষার্থীর করোনাসৃষ্ট
অর্থনৈতিক ধাক্কায়
স্কুল ছেড়ে
দেয়ার আশঙ্কা
রয়েছে। এ
অবস্থায় আগামী
বাজেটে প্রাথমিকের
শিক্ষার্থীপ্রতি মাসিক
৫০০ টাকা
করে মোট
২ হাজার
৯৬০ কোটি
টাকা নগদ
সহায়তা প্রদানের
জন্য সরকারের
কাছে সুপারিশ
করেছে পিপিআরসি
ও বিআইজিডি।
সরকার মাধ্যমিক
ও প্রাথমিকের
রেকর্ড করা
ক্লাস সংসদ
টেলিভিশনে প্রচার
করছে এবং
প্রাথমিক ও
গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের
জরিপ অনুযায়ী
পঞ্চম শ্রেণীর
ক্লাস ৫৬
শতাংশ শিক্ষার্থী
আর ক্যাম্পের
জরিপে দেখা
যায় ৪৯
শতাংশ মাধ্যমিক
শিক্ষার্থী টেলিভিশনের
ক্লাস দেখছে।
তার মানে
প্রায় অর্ধেক
শিক্ষার্থী ক্লাস
দেখছে না;
যারা দেখছে
তার কত
শতাংশ প্রকৃতভাবে
উপকৃত হচ্ছে,
তার কোনো
সঠিক পরিসংখ্যান
নেই। এসব
মাধ্যমে ক্লাস
যেহেতু রেকর্ডেড,
তাই এককেন্দ্রিক
ফলে শিক্ষার্থীরা
শিক্ষার প্রকৃত
আনন্দ থেকে
বঞ্চিত। অংশগ্রহণমূলক
না হওয়ায়
এ অবস্থা।
এখন পড়াশোনার
বিকল্প কী?
সরাসরি শ্রেণীকক্ষের
বিকল্প হিসেবে
টিভি-রেডিওর
মাধ্যমে ক্লাস,
অনলাইন ক্লাস
ইত্যাদি পরিচালিত
হয়ে আসছিল
কিন্তু উল্লিখিত
গবেষণাটি আমাদের
আরো ভেবে
দেখার খোরাক
জুগিয়েছে। এটি
ঠিক যে
পূর্ববর্তী অবস্থায়
শিক্ষাদান সহসা
হচ্ছে না। আমরা
কোনোভাবেই শিক্ষার্থীদের
শিক্ষাদান নেটওয়ার্কের
বাইরে রেখে
দিতে পারি
না। এ
অবস্থায় বিকল্প
পদ্ধতিগুলো জোরদার
করতে হবে।
মাছুম বিল্লাহ: শিক্ষা গবেষক