আত্রাইয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির স্বেচ্ছাচারিতা

সেচের অভাবে পুড়ল আড়াইশ বিঘা জমির বোরো ধান

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, নওগাঁ

নওগাঁর আত্রাইয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির স্বেচ্ছাচারিতায় জমিতে সময়মতো সেচ দিতে না পারায় প্রায় আড়াইশ বিঘা জমির বোরো ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলার বিশা ইউনিয়নের দর্শনগ্রামে নদী তীরবর্তী মাঠে আড়াইশ বিঘা জমিতে সেচকাজে ব্যবহূত এলপিপি লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মিটার খুলে নিয়ে যাওয়ায় সেচ কাজ ব্যাহত হয়। এতে জমির ধান সম্পূর্ণভাবে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে বিঘাপ্রতি মাত্র তিন-চার মণ ধান পাচ্ছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আত্রাইয়ে চলতি বোরা মৌসুমে ১৮ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উপজেলাজুড়ে বছর বোরো ধানের ভালো ফলনও হয়েছে। উপজেলার বিশা ইউনিয়নের দর্শনগ্রামের মাঠে শতাধিক কৃষকের প্রায় আড়াইশ বিঘা জমি রয়েছে। প্রতি বছর ইরি-বোরো মৌসুমে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কাছ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে আত্রাই নদী থেকে এলপিপির মাধ্যমে জমিতে সেচ দেয়া হয়। দর্শনগ্রামের মহাতাব উদ্দিনের নামে এলপিপি সেচ প্রকল্পের বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। গত বছর ধানের দাম ভালো পাওয়ায় বছরও দর্শনগ্রামের কৃষকরা বুকভরা আশা নিয়ে জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। কিন্তু যখন ওই জমিগুলোয় আরো কমপক্ষে তিনটি সেচের প্রয়োজন পড়ে, তখন মহাতাব উদ্দিনের মার্চের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় পল্লী বিদ্যুৎ এলপিপি সংযোগের মিটার খুলে নিয়ে যায়।

পানি সরবরাহের জন্য কৃষকরা মহাতাবকে চাপ দিতে থাকলে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেন মহাতাব। কিন্তু বকেয়া পরিশোধের পর মিটার স্থাপনে পুনরায় আবেদন করলে নানা টালবাহানা শুরু করেন পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা। পার্শ্ববর্তী আরেক এলএলপির সংযোগের অপারেটর জনৈক আজাহার আলীর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় তা পরিশোধ না করা পর্যন্ত প্রকল্পেও সংযোগ দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়। বিদ্যুতের অভাবে সেচকাজ ব্যাহত হয়। এতে ওই গ্রামের আড়াইশ বিঘা জমির ধান পুড়ে চিটা হয়ে গেছে।

যেখানে জমিগুলোয় বিঘাপ্রতি ২৫-৩০ মণ ধান পাওয়ার কথা, সেখানে মাত্র তিন-চার মণ ধান ঘরে তুলতে পারছেন কৃষকরা। অধিকাংশ ধান চিটা হয়ে গেছে। ধানের অবস্থা দেখে একজন কৃষকের মাঠেই স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করার ঘটনাও ঘটেছে।

দর্শনগ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জালাল সরদার বলেন, গত বছর ধানের দাম ভালো পাওয়ায় বছর ১৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলাম। পল্লী বিদ্যুতের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সেচের অভাবে আমার জমির সম্পূর্ণ ধান পুড়ে নষ্ট হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের অসৎ কর্মকর্তার বিচার দাবি করছি।

একই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, সেচ প্রকল্পের আওতায় আমার ১২ বিঘা জমি রয়েছে। সেচের অভাবে জমির ধানগুলো পুড়ে নষ্ট হওয়ায় আমি সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছি। প্রতি বছর জমিগুলোয় বিঘাপ্রতি ২৫-৩০ মণ ধান পেতাম, এবার সেখানে মাত্র তিন-চার মণ ধান পাচ্ছি। শুধু পল্লী বিদ্যুতের গাফিলতির কারণেই আজ আমাদের দুর্দশায় পড়তে হয়েছে।

দর্শনগ্রাম এলএলপি সংযোগের অপারেটর মহাতাব উদ্দিন বলেন, কৃষকদের সমস্যার কথা বলে আত্রাই পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে পুনরায় মিটার স্থাপনের আবেদন করলে সেখানকার কর্মকর্তারা বকশিশ দাবি করেন। তা দিতে না পারায় তারা মিটার পুনঃস্থাপন হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কাওসার হোসেন জানান, ধান নষ্টের বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।

বিষয়ে মুঠোফোনে কথা বললে আত্রাই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম ফিরোজ জামান পল্লী বিদ্যুৎ অফিস তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন