অর্থনীতি
বিষয়টা মনে
এলেই আমাদের
চোখে যা
ভেসে আসে
তা হলো
কতগুলো গ্রাফ,
আলফা, বেটা,
গামা ইত্যাদি
দিয়ে কিছু
জটিল সূত্র
আর অংকের
মারপ্যাঁচ। অনেকে
আবার বলেন
এসব সূত্র
বইয়ের পাতায়ই
বেশি মানায়,
বাস্তবে নয়।
আসলে সারা
দুনিয়ায় বেশির
ভাগ মানুষই
অর্থের পেছনে
ছুটে, তাই
কোনোভাবেই এ
অর্থশাস্ত্রকে বাদ
দেয়া যাবে
না। পৃথিবীতে
কিংবা দেশে
দেশে আজ
যে এই
অশান্তি, মারামারি
অথবা প্রতিযোগিতা
চলছে, এসবের
পেছনে অন্যতম
কারণ হলো
এই অর্থ।
যাই হোক,
অর্থনীতির শিক্ষকরা
যদিও নিজেদের
অনেক ডায়নামিক
বা গতিশীল
বলে দাবি
করেন কিন্তু
পড়ানোর সময়
তাদের এই
গতিশীলতা খুব
একটা খুঁজে
পাওয়া যায়
না। ফলাফল
এখনো দেশ-বিদেশের
অনেক শিক্ষার্থী
এ বিষয়টাকে
ভয় পায়
অথচ এই
একটি বিষয়
যে কত
মজার আর
দরকারি হতে
পারে, শুধু
অনেক শিক্ষকের
ব্যর্থতায় সেটি
ধ্বংস হয়ে
যায়!
খোঁজ নিলে
দেখা যাবে
অর্থনীতির শিক্ষকরা
গত ২৫-৩০
বছরেও তাদের
পড়াশোনার বই,
সিলেবাস পাল্টাননি।
কিন্তু এই
বিগত বছরগুলোয়
বিশ্ব অর্থনীতি
কিংবা দেশীয়
অর্থনীতির কি
আমূল পরিবর্তনটাই
না হলো।
কোনো কোনো
জাতির অর্থনীতির
সূর্য উদিত
হচ্ছে আবার
কারো অস্ত
যাচ্ছে, তবুও
শ্রেণীকক্ষে অর্থনীতির
পাঠদানের পরিবর্তন
খুবই সীমিত।
সেই গৎবঁাধা
চাহিদা আর
জোগানের গল্প
আর গ্রাফ!
উদাহরণস্বরূপ যদি
বলি, বিশ্বখ্যাত
অর্থনীতির পাঠ্যপুস্তক
পড়লেও দেখা
যাবে যুক্তরাষ্ট্রের
মনিটারি পলিসি
বলতে বোঝানো
হয়েছে সরকারের
সিকিউরিটির ক্রয়-বিক্রয়ের
স্বল্পমেয়াদি সুদের
হার। কিন্তু
২০০৮ সাল
থেকে তাদের
কেন্দ্রীয় ব্যাংক
সেটা পাল্টে
করেছে ব্যাংকের
রিজার্ভের ওপর
হার। আবার
আমরা জানি,
বর্তমান পৃথিবীতে
অর্থনীতির অন্যতম
বড় সমস্যা
হলো অসমতা
বা ধনী-গরিবের
প্রকট বৈষম্য।
কিন্তু খুব
কম বইয়ে
আপনি এ
বিষয়ে বিশদ
আলোচনা পাবেন।
তার মানে
কি আমরা
ধরেই নিয়েছি
অর্থনীতিতে অন্যান্য
বিজ্ঞান বিষয়ের
মতো যেহেতু
নতুন নতুন
বাহ্যিক আবিষ্কার
নেই, তাই
বই-সিলেবাস
পাল্টাতে হবে
না? অথবা
সাধারণ জনগণের
জন্য দুর্বোধ্য
কিছু কঠিন
কঠিন সূত্র
আর অংকের
সমাবেশ ঘটালেই
খুব ভালো
অর্থনীতির বই
হয়ে যায়?
আমার তো
মনে হয়
উল্টোটা হওয়া
উচিত। যেহেতু
আপামর সবাই
অর্থ ব্যবহার
করে, অর্থের
পেছনে ছোটে,
বই কিংবা
এ বিষয়
হওয়া উচিত
এমন সহজ,
যাতে সবাই
সহজে বুঝতে
পারে। আর
এখানেই হয়তো
লেখকের মাহাত্ম্য।
আমার মনে
হয় অর্থনীতির
পাঠদান হওয়া
উচিত বিভিন্ন
জাতিগত, লিঙ্গ
কিংবা ধর্ম-বর্ণ
বা গোত্রের
ওপর ভিত্তি
করে। যেমন
কিউবায় কিংবা
রাশিয়ায় যদি
সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি
হয়, আবার
সৌদি আরব
যদি ইসলামী
অর্থনীতির দেশ
হয়, তাদের
নবিশ ছাত্রদের
মিশ্র অর্থনীতি
কিংবা বাজার
অর্থনীতি নিয়ে
ঘণ্টার পর
ঘণ্টা লেকচার
দিলে তারা
কতটুকুই বুঝবে
আর বাস্তবতার
সঙ্গে মিলটা
খুঁজবে কোথায়?
আবার অনেক
শিক্ষার্থীকে দেখা
যায় অংকের
প্রতি খুব
মনোযোগী হয়
না, তাদের
কঠিন কঠিন
কিছু সূত্র
আর অংক
দিলে কতটুকু
আগ্রহী হবে
বিষয়টির প্রতি?
অর্থনীতির তো
অনেক শাখা-প্রশাখা
আছে, সবগুলোয়
তো অংকের
মারপ্যাঁচ নেই।
তাই আমার
মতে, সময়
এসেছে আমাদের
সিলেবাস পরিবর্তনের,
এসেছে বাস্তবতার
সঙ্গে মিল
রেখে অর্থনীতি
পড়ানোর। শ্রেণীকক্ষে
প্রয়োজন ছাত্রছাত্রীদের
অংশগ্রহণমূলক পাঠদানের।
বাস্তবিক ও
প্রায়োগিক উদাহরণের
মাধ্যমে অর্থনীতি
শিক্ষাদানের। আমাদের
সুদের হার
কেমন হওয়া
উচিত, ব্যাংক
রেট কেমন
হবে, মূল্যস্ফীতি
বা মুদ্রাস্ফীতি
কত হলে
আমাদের জন্য
সহনীয় হবে
এসব নিয়ে
শ্রেণীকক্ষে আলোচনা
করতে হবে।
আমাদের দেশে
এর প্রয়োজন
আরো বেশি,
কারণ আমাদের
এখন অর্থনীতির
মুক্তির দরকার।
দরকার প্রখ্যাত
কিছু অর্থনীতিবিদ
গড়ে তোলা,
যার খুব
অভাব এখন
আমাদের দেশে।
নিচে কিছু
শিক্ষা পদ্ধতির আলোচনা করা
হলো
১. সমস্যা
সমাধান এবং
কেস স্টাডি:
এ পদ্ধতিতে
প্রথমত শিক্ষক
তার ছাত্রদের
অর্থনীতির মৌলিক
ধারণা দেবেন!
সেই ধারণার
ওপর ভিত্তি
করে শিক্ষক
দেশী-বিদেশী
কিংবা বৈশ্বিক
সমস্যা সমাধানের
জন্য ছাত্রদের
মতামত জানবেন
এবং সেই
সঙ্গে তাদের
সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক
খুঁটিনাটি আলোচনা
করবেন!
২. ডেমোনস্ট্রেশন
এবং রোল
প্লে পদ্ধতি:
এ পদ্ধতিতে
শিক্ষক তার
ছাত্রদের বিভিন্ন
দেশের অর্থপ্রধান
বা অর্থ
সচিবের দায়িত্ব
দিতে পারেন।
সহযোগিতা কিংবা
প্রতিযোগিতামূলক আঞ্চলিক
না দেশীয়
অর্থনীতির উন্নয়ন
ইত্যাদি সমস্যা
সমাধানের জন্য
ছাত্ররা একটি
নির্দিষ্ট সময়
পাবেন। সমস্যা
সমাধান করে
সবার সামনে
বাজেট আকারে
পেশ করবেন।
৩. ওরাল
বা লেকচার
পদ্ধতি: এ
পদ্ধতিতে শিক্ষক
অর্থনীতির বিভিন্ন
বিষয় নিয়ে
তার ছাত্রদের
সম্যক জ্ঞান
দেবেন। বিভিন্ন
আধুনিক শিক্ষা
উপকরণের সাহায্য
নিয়ে এই
ইন্টারেক্টিভ লেকচার
হতে পারে।
ব্যষ্টিক অথনীতি
সামষ্টিক অর্থনীতি
ইত্যাদির জ্ঞান
দেয়ার পাশাপাশি
ইংরেজিতেও ব্যাখ্যা
করে দিতে
হবে, কারণ
আমাদের দেশে
বাংলা ভাষায়
অর্থনীতির খুব
কম ভালো
বই আছে।
৪. রিসার্চ
বেজড পদ্ধতি:
এ পদ্ধতিতে
শিক্ষক তার
ছাত্রদের হাতেকলমে
অর্থনীতির গবেষণা
পাঠ দেবেন।
কীভাবে একটি
নির্দিষ্ট বিষয়
নিয়ে গবেষণা
করতে হয়,
কীভাবে সেই
গবেষণাকে জনকল্যাণে
লাগানো যায়
ইত্যাদি বিষয়ে
গাইডলাইন দেবেন!
বিভিন্ন ভালো
গবেষণাপত্র নিয়ে
ক্লাসে আলোচনা
করবেন!
ড. মিরাজ আহমেদ: সহযোগী
অধ্যাপক
গুয়াংডং ইউনিভার্সিটি অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইকোনমিকস