পাশের দেশ

পশ্চিমবঙ্গে মোদির শিল্পের খোয়াব

গৌতম রায়

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত দু-তিন মাসে যেভাবে দিল্লি টু পশ্চিমবঙ্গের ডেইলি প্যাসেঞ্জারে পরিণত হয়েছেন, এমনটা রাজ্যবাসী আগে কোনো প্রধানমন্ত্রীকে দেখেনি। মোদির দলের অটল বিহারি বাজপেয়ি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনও পশ্চিমবঙ্গে ভোট হয়েছে। বাজপেয়িও এসেছেন ভোট প্রচারে, নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগে, সরকারি মঞ্চকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারের ক্ষেত্রেও তিনি কম যাননি, তবু নরেন্দ্র মোদি এখনই সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছেন। সরকার আর দলকে মিলিয়ে মিশিয়ে দিয়ে ক্ষমতা দখলে মরিয়া হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদিকে কিন্তু এক এবং অনন্য হিসেবে স্বীকৃতি দিতেই হয়।

প্রধানমন্ত্রী কেবল ভোটের দিকে চোখ রেখে এই ধারাবাহিক পশ্চিমবঙ্গ সফরে ধারাবাহিক প্রতিশ্রুতির বন্যা ছোটাচ্ছেন। গত ২২ ফেব্রুয়ারি (২১) তার পশ্চিমবঙ্গ সফরে তিনি দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত সম্প্রসারিত মেট্রোর উদ্বোধন করলেন। মেট্রোর এই সম্প্রসারণ ঘিরে প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে দমদমের তত্কালীন সিপিআই (এম) সংসদ সদস্য প্রয়াত অমিতাভ নন্দীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। প্রথম ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবকে এই মেট্রো সম্প্রসারণের জন্য রাজি করানোর ক্ষেত্রে প্রয়াত অমিতাভ নন্দী, বাসুদেব আচারিয়া প্রমুখ বামপন্থী সংসদ সদস্যের বিশেষ ভূমিকা ছিল। মহম্মদ সেলিম, সুধাংশু শীল মেট্রো সম্প্রসারণ ঘিরে যথেষ্ট সচেষ্ট ভূমিকা সে সময়ে নিয়েছিলেন। তবে দক্ষিণ কলকাতার সংসদ সদস্য হিসেবে মেট্রো সম্প্রসারণের জন্য সেই দৌড়ঝাঁপে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি কিন্তু কখনই বিন্দুমাত্র ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেননি।

ভিন্ন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকার সময়ে যেসব উন্নয়নমূলক প্রকল্প মানুষ গণ-আন্দোলনের ভেতর দিয়ে আদায় করেছে, সেসব প্রকল্প উদ্বোধনের ভেতর দিয়ে নিজেদের বলে চালানোর ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদি আর মমতা ব্যানার্জি একে অন্যের পরিপূরক। মমতা যেমন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে উদ্বোধন হওয়া প্রকল্পগুলোয় পুরনো উদ্বোধন ফলক খুলে ফেলে নিজের নাম খোদাই করা ফলক সেঁটে কৃতিত্বের ভাগীদার হন, ঠিক সেভাবেই বামপন্থীদের ধারাবাহিক আন্দোলনের ভেতর দিয়ে প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে গৃহীত প্রকল্প, দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রোরেলের সম্প্রসারণের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গোটা বিষয়টির কৃতিত্ব নিজে নিতে চেয়েছেন।

বিজেপি এখন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার আসন্ন ভোটকে কেন্দ্র করে এখানে তাদের নির্বাচনী রণকৌশলে কিছুটা ভিন্ন ধারা দেখানোর চেষ্টা করছে। দাঙ্গা লাগিয়ে, মানুষকে আড়াআড়িভাবে বিভক্ত করে, সেই বিভাজনের ফসল ভোট রাজনীতিতে প্রয়োগ ঘটিয়ে ভোটে জেতা বিজেপির চিরন্তন কৌশল। সেই পথে যে নিজেদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপিকে ঠিক মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে পরিচালিত করতে চায় না আরএসএস, এটা প্রধানমন্ত্রী মোদির সাম্প্রতিক বেশ কয়েকবারের পশ্চিমবঙ্গ সফর থেকে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী মোদি রাজ্যে যে কয়টা প্রাক-নির্বাচনী সফর করলেন, তার একটিতেও তার চিরন্তন বিভাজনের অস্ত্রটি তিনি প্রত্যক্ষভাবে দেখাননি। বিভাজনের অস্ত্রটিকে আস্তিনের ভেতর লুকিয়ে রেখে উন্নয়নের পসরা তুলে ধরতেই মোদি সবিশেষ ব্যস্ত থেকেছেন। আর ব্যস্ত থেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতার দুর্নীতি নিয়ে।

গত দশ বছরে রাজ্য যে কর্মসংস্থানের দিক থেকে একদম তলানিতে এসে ঠেকেছে, সেটা দেশের প্রধানমন্ত্রীর না জানার কথা নয়। ছাঁটাই এখন লকডাউন-উত্তর সময়ে কার্যত দ্বিতীয় অতিমারী। কভিড-১৯-এর জেরে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় যে খাদ্য সংকট ক্রমে তীব্র হয়ে উঠছে, তার করাল গ্রাস থেকে পশ্চিমবঙ্গেরও যে নিস্তার মিলবে না, দেশের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তা না জানাটাই অস্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন এখানেই যে এসব আগামীর বিপদ জেনে তাকে ভোট রাজনীতিতে নিজের দল বিজেপির পক্ষে ব্যবহার করা ছাড়া বিপদ মোকাবেলার জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সংকটকালে মোদির ভূমিকা কী? পশ্চিমবঙ্গের শিল্প সংকট আর সেই সংকট থেকে উঠে আসা বেকারত্ব, মেধাপাচারএসব সমস্যার জন্য কি মোদি নিজেও দায়ী নন? সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে বিতাড়িত করতে মমতা ব্যানার্জির যেসব কৃতকর্ম, সেগুলোর পেছনে কি মোদির দল বিজেপির মদদ ছিল না? মমতার ধর্মতলায় নাটুকে অনশনে তো অন্যতম শীর্ষ বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং নিজে হাজির ছিলেন। সেদিনই তো পরবর্তী সময়ে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পচিত্র কী হতে চলেছে তা নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। তাহলে আজ মোদির এই রাজ্যের শিল্প ঘিরে কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন কি নিছক ভোটের স্বার্থে আরো উন্নত অভিনয়ের নাটক নয়?

দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের নামে শপথ নেয়া প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের রায়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের জমির ওপর আরএসএস অনুগত হনুমানগড়ি আখড়া পরিচালিত রামমন্দিরের শিলান্যাস করেছেন। ঘটনা গান্ধী, নেহরু, আজাদের ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে সংখ্যাগুরুর আধিপত্যবাদী ভারতে রূপান্তর করার একটি পর্যায় হিসেবেই আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কাছে নিজের পরিচয় রেখেছে। দেশের সংখ্যালঘু মুসলমান সমাজের ওপর আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে মোদির নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার যে কোনো অবস্থাতেই আর নিছক সংখ্যাগুরুর সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদে নিজেদের আবদ্ধ রাখবে না, নিজেদের তারা রূপান্তর করে ফেলেছে সংখ্যাগুরুর আধিপত্যবাদে, দ্বিতীয় দফার মোদি সরকারের কার্যকলাপের ভেতর দিয়ে তা ক্রমে আন্তর্জাতিক স্তরে চিহ্নিত হতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি অনেকটা গুজরাট গণহত্যার সময়ে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কাছে যেমনটা হয়ে গিয়েছিল মোদির, ঠিক তেমনটা হতে শুরু করেছিল।

তার পরও ঘটেছে দিল্লি গণহত্যা। দেশের সংখ্যালঘু মুসলমানদের সঙ্গে শাসক বিজেপি এবং তাদের পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার কী ধরনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বৈষম্যমূলক আচার-আচরণ ধারাবাহিকভাবে করে চলেছে, আজকে ইন্টারনেটের যুগে হিন্দুত্ববাদী শক্তি তা যতই চেপে রাখার চেষ্টা করুক না কেন, বাস্তবে সেটা কোনো অবস্থাতেই সম্ভবপর হচ্ছে না। গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র নানাভাবে হেনস্থা করছে মুসলমানদের। অহেতুক মুসলমানদের ওপর পুলিশি জুলুম করা হচ্ছে বিজেপির রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য। এসব বিষয় আর চাপা থাকছে না আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কাছে। খবরে প্রকাশ ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে দিল্লি-উত্তর প্রদেশের লাগোয়া মুজফরনগরে আরএসএস-বিজেপি দাঙ্গা করে। সেই দাঙ্গার ফলে যে ধর্মীয় সামাজিক মেরুকরণ তৈরি হয়েছিল, তা সেই ভোটে বিজেপিকে একক গরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রে সরকার গড়তে সাহায্য করে। তবে সেই দাঙ্গা দমনে সঠিক প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে না পারার জন্য উত্তর প্রদেশে সে সময়ে ক্ষমতাসীন সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ সিং যাদব এবং কেন্দ্রে দ্বিতীয় দফার ইউপিএ সরকার ঘরে-বাইরে দারুণভাবে সমালোচিত হয়।

তাই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার আসন্ন ভোটকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে সংখ্যাগুরু আধিপত্যবাদ কায়েমের দায়ে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় দারুণ সমালোচিত নরেন্দ্র মোদি নিজের মুখে ধর্মীয় বিভাজন, সামাজিক বিভাজনে প্ররোচনা হতে পারে, তেমন কোনো কথা রাজ্যে কোনো সভা থেকে বলেননি। মোদির দল ভোটে জিততে রাজ্যেও তাদের শেষ অস্ত্র দাঙ্গার পথে হাঁটবে কিনা, তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। তবে দাঙ্গার প্রাথমিক পর্যায় একদম ভূমিস্তর পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে সংক্রমিত করা, সেই কাজটি পশ্চিমবঙ্গে কিন্তু আরএসএস তাদের হাজারো রকমের শাখা সংগঠন, সংঘের ছত্রছায়ায় থাকা নানা রকমের এনজিও এবং তাদের অতিবিশ্বস্ত বন্ধু মমতা ব্যানার্জির ভেতরেই পুরোমাত্রায় করে রেখেছেন। তাই সাম্প্রদায়িক বিভাজনের কোনো দায় যাতে কোনো অবস্থাতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপরে না পড়ে, সেদিকে তীক্ষ্ম নজর আরএসএস এবং স্বয়ং মোদির। সেই নজরদারির ফলেই মোদি রাজ্যে ভোট ঘোষণার আগে পর্যন্ত যতবার এসেছেন, ততবারই সরাসরি কোনো সাম্প্রদায়িক কথা বলেননি। প্রত্যক্ষভাবে বিভাজনে উসকানি দেননি। ব্র্যান্ড গুজরাটের স্বপ্নিল ফানুসই এখানে ওড়াতে চেয়েছেন। বেকার ছাত্র-যুবদের কাছে কর্মসংস্থানের ফানুস উড়িয়েছেন, যেমনটা একদিন উড়িয়েছিলেন মমতা।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি (২১) প্রধানমন্ত্রী মোদি হুগলির সাহাগঞ্জে একটি দলীয় সভা করেছেন। সে সভায়ও তিনি পশ্চিমবঙ্গের শিল্প ঘিরে নিজের হতাশার কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে তারা সরকার করলে সেই হতাশা কাটিয়ে কীভাবে সোনার বাংলা গড়বেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। সাহাগঞ্জের অদূরেই ডানলক। যেখানে টায়ার কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে দুই বছর ধরে বিজেপির সংসদ সদস্য। সাহাগঞ্জে দাঁড়িয়ে শিল্পের প্রতিশ্রুতির ফোয়ারা ছোটালেও প্রধানমন্ত্রী মোদি কিন্তু বন্ধ ডানলকের কারখানা নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। স্থানীয় সংসদ সদস্যও গত দুই বছরে ডানলক খোলা নিয়ে সংসদে একটি শব্দও উচ্চারণ করেছেন, এমন কোনো খবর সংবাদমাধ্যমের নজরে আসেনি।

যে হুগলির মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি আসন্ন বিধানসভা ভোটের মুখে মানুষের সামনে শিল্প সম্ভাবনার রঙিন ফানুস ওড়ালেন, বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের আশা দেখালেন, সেই হুগলির সিঙ্গুরেই এক দশক আগে মমতা ব্যানার্জি যখন রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতীদের চাকরির আশার গঙ্গাযাত্রা ঘটিয়েছিলেন, এই মোদি এবং তার দল ছিল সেই শ্মশানযাত্রার সঙ্গী। টাটার ন্যানো কারখানাকে পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুর থেকে সরিয়ে নিয়ে মোদির গুজরাটের সানন্দে নিয়ে যাওয়ার যৌথ ষড়যন্ত্রী ছিলেন কিন্তু মোদি মমতা।

সেই হুগলির মাটিতে দাঁড়িয়ে শিল্প সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন মোদি। তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন প্রায় সাত বছর হতে চলল। সাত বছরে পশ্চিমবঙ্গ তো কোন ছাড়, গোটা দেশের লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পগুলো মোদি নিজের এবং অবশ্যই তার দলের অনুসারী আদানি, আম্বানিসহ অনেকের কাছে বেচে দিতে শুরু করেছেন। শিল্পের কোনো নতুন সম্ভাবনা পশ্চিমবঙ্গে তো নয়ই, গোটা দেশেই দেখতে পাওয়া যায়নি। বস্তুত মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়াদের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করে আরএসএসের বিভিন্ন সময়ের বিবর্তিত রাজনৈতিক সংগঠনগুলো হিন্দু মহাসভা, ভারতীয় জনসংঘ, ভারতীয় জনতা পার্টিএরা সবাই- চিরকাল বৃহৎ শিল্পের থেকে ট্রেডিংটাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। ট্রেডার্স পার্টি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বিজেপি, রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের দৌলতে এখন বৃহৎ বুর্জোয়াদের খুব কাছের লোক হয়ে উঠলেও যেসব বৃহৎ বুর্জোয়া তারা কাছের মানুষ হয়েছে, তাদের মূল চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যে শিল্পের চেয়ে ট্রেডিংটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। তাই নতুন শিল্পের দিকে তারা তাদের শ্রেণীবন্ধু বিজেপিকে কখনই পরিচালিত হতে দেয় না। তারা চায় বৃহৎ শিল্পের পরিবর্তে বিদেশী বহুজাতিকের সঙ্গে মিতালি পাতিয়ে ভারতের অর্থনীতিকে ট্রেডিং-নির্ভর করে তুলতে। এই ট্রেডিং-নির্ভর অর্থনীতি কিন্তু নয়া উদার অর্থনীতিরও একটা বিশেষ উল্লেখযোগ্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের আগে এসে বন্ধ কল-কারখানা খোলা নিয়ে একটি শব্দ উচ্চারণ করছেন না। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প বেচা নিয়েও মুখে কুলুপ এঁটে থাকছেন। এই বেচার সপক্ষেও পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে দাঁড়িয়ে কিছু বলছেন না। কারণ তিনি বা তার সতীর্থরা খুব ভালোভাবেই জানেন, নেহরু মডেলের শিল্পের সমাধি রচনা করে, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প বেচে দেয়ার যে প্রক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে মোদি সরকার চালাচ্ছে, প্রত্যক্ষভাবে সেই প্রবণতাকে যে সংসদের ভেতরে-বাইরে মমতার দল মদদ দিচ্ছে, তা রাজ্যের মানুষ, এমনকি তৃণমূল বা বিজেপির সমর্থকরাও কোনো অবস্থাতেই সমর্থন করতে পারছে না। তাই অত্যন্ত সচেতনভাবেই আরএসএসের লোক মোদি নিজেদের ট্রেডিং পার্টির সত্তাটিকেই বজায় রেখে চলেছেন এখানে তার প্রতিশ্রুতির বন্যার ভেতর দিয়ে।

 

গৌতম রায়: ভারতীয় ইতিহাসবিদ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন