বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক স্বপ্নবাজ তরুণদের সারথি হতে চায়

দেশের ৬০তম তফসিলি ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড। ১১ মার্চ গুলশান শাখা উদ্বোধনের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবায় হাতেখড়ি হবে ব্যাংকটির। বেসরকারি খাতের ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শিল্পোদ্যোক্তা মো. জসিম উদ্দিন নবীন ব্যাংকের লক্ষ্য, কর্মপরিকল্পনাসহ দেশের অর্থনীতির নানা দিক নিয়ে সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাছান আদনান

চূড়ান্ত লাইসেন্স পেতে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডকে দীর্ঘ সময় প্রক্রিয়া শেষ করতে হয়েছে। এখন কার্যক্রম শুরু করার প্রক্রিয়া কতটুকু এগোল?

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিটি শর্ত রীতিনীতি পরিপালন করে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক চূড়ান্ত লাইসেন্স পেয়েছে। এজন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় চার বছর। ব্যাংকের মূলধন জোগান থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছে। এক্ষেত্রে সময় বেশি লাগলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। গ্রাহকদের ব্যাংকিং সেবা দিতে এরই মধ্যে আমরা সব কার্যক্রম শেষ করে এনেছি। ১০ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের উদ্বোধন হবে। আর ১১ মার্চ গুলশান শাখা উদ্বোধনের মাধ্যমে ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হবে।

প্রতিষ্ঠালগ্নে একটি ব্যাংকের জন্য যোগ্য জনবল খুঁজে বের করাটি চ্যালেঞ্জের। নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে মুহূর্তে কোন বিষয়টিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন?

বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা সততা, দক্ষতা পেশাদারিত্বকে প্রাধান্য দিচ্ছি। এরই মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক উপব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কার্যক্রম সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য ধাপের কর্মকর্তাদেরও নিয়োগ দেয়া হবে। ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু করতে যেহেতু অভিজ্ঞ ব্যাংকার প্রয়োজন হয়, এজন্য আপাতত অন্য ব্যাংকের যোগ্যতম কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে মেধাকে প্রাধান্য দিয়ে নতুনদের নিয়োগ দেব। বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের জনবলকে আমরা আন্তর্জাতিকমানের ব্যাংকার হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের মূল ফোকাস কী হবে?

করপোরেটসহ আধুনিক সব ব্যাংকিং সেবাই আমরা গ্রাহকদের দিতে চাই। তবে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের মূল ফোকাস থাকবে কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট মাঝারি শিল্প। পাশাপাশি রিটেইল ব্যাংকিংয়ে গুরুত্ব দিয়ে আমরা কার্যক্রম চালাব। বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের ঋণ পোর্টফোলিওতে সব সময়ই করপোরেট, এসএম রিটেইলের ভারসাম্য থাকবে।

গত এক দশকে দেশের অর্থনীতিতে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে অর্থের প্রবাহ এখন গ্রামাঞ্চলমুখী। গ্রামীণ রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো আধুনিকায়নের ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষিত তরুণরা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন বুনছে। পরিস্থিতিতে আমরা সিএসএমই খাতের তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রাধান্য দিয়ে ঋণ বিতরণ করতে চাই। বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক স্বপ্নবাজ তরুণদের সারথি হতে চায়।

দেশে ৫৯টি ব্যাংক বর্তমানে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অবস্থায় অন্য ব্যাংক ছেড়ে গ্রাহকরা বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকে আসবে কেন?

দেশে বিপুলসংখ্যক সরকারি-বেসরকারি বিদেশী ব্যাংক থাকলেও এখনো অর্ধেকের বেশি মানুষ ব্যাংকিং সেবার বাইরে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়েই বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায়। আমরা অন্য কোনো ব্যাংকের গ্রাহককে ভাগিয়ে আনতে চাই না। আমাদের মনোযোগ থাকবে নতুন উদ্যোক্তা তুলে আনার দিকে। আধুনিক সব প্রযুক্তি প্রডাক্ট নিয়ে আমরা গ্রাহকদের সেবা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। চলতি বছরের মধ্যেই বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের ১০টি শাখা খোলা হবে। শাখা খোলার ক্ষেত্রে দেশের গ্রামাঞ্চল প্রাধান্য পাবে। যেখানে শাখা খোলা সম্ভব নয়, সেখানে উপশাখা এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা পৌঁছাতে চাই।

বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক এমন এক সময় কার্যক্রম শুরু করছে, যখন দেশের মুদ্রাবাজারে অলস তারল্যের জোয়ার বইছে। করোনাভাইরাসের আঘাতে দেশের বেসরকারি খাতও বিপর্যস্ত। অবস্থায় আমানত সংগ্রহে আপনাদের নীতি কী হবে?

দেশের মুদ্রাবাজারে যে পরিস্থিতিই থাক না কেন, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের আমানত সংগ্রহে আমরা ক্ষুদ্র আমানতকারীদের প্রাধান্য দেব। আমরা করপোরেট সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানতবিমুখ হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাই। ব্যক্তিশ্রেণীর বড় আমানতকারীদের জন্য আমরা অগ্রাধিকারমূলক ব্যাংকিং সেবা চালু করব। আমাদের লক্ষ্য থাকবে, সর্বোচ্চসংখ্যক গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব খোলা। এক্ষেত্রেও এসএনডি হিসাবকে প্রাধান্য দেয়া হবে।

বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা কেমন হচ্ছে?

সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সফটওয়্যারের সমন্বয় ঘটিয়ে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডকে সাজানো হচ্ছে। পথযাত্রার প্রথম দিন থেকেই আমাদের ব্যাংকের মডেল হবে সেন্ট্রালাইজড। এতে ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় অনেক কম হবে। পাশাপাশি শুরু থেকেই ব্যাংকের করপোরেট সুশাসনও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। গ্রাহকদের অ্যাপভিত্তিক সেবা দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে আমরা কার্যক্রম শুরু করছি। ব্যাংকিং সেবায় প্রযুক্তির যেসব সংযোজনের কথা আমরা চিন্তা করেছি, তা বাস্তবায়ন হলে গ্রাহকরা নতুনত্বের ছোঁয়া পাবেন।

বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের উদ্যোক্তা কারা?

দেশের স্বনামধন্য কয়েকটি করপোরেট গ্রুপ ব্যক্তি উদ্যোগের ফসল বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক। এককভাবে ব্যাংকের মূলধনের ৩০ শতাংশ বেঙ্গল গ্রুপ জোগান দিয়েছে। পাশাপাশি ম্যাক্স, লাবিব, কেডিএস, এম আলম, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড, প্যাসিফিক, বিবিএস কেবলস কটন গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোক্তারা বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের অংশীদার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন