পুরুষনিয়ন্ত্রিত স্টার্টআপের জগতে ব্রাত্য নারী উদ্যোক্তারা

বণিক বার্তা ডেস্ক

শিক্ষাগত যোগ্যতা, দীর্ঘ অভিজ্ঞতা দক্ষতার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও প্রযুক্তির স্টার্টআপ জগতে নারীরা এখনো ব্রাত্য। বিশেষ করে ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টরা নারী নেতৃত্বাধীন স্টার্টআপে বিনিয়োগ করতে অনীহা প্রকাশ করেন। তহবিলের বিনিময়ে আপত্তিকর দাবি-দাওয়াও করে বসেন অনেকে। পুরুষ নিয়ন্ত্রিত জগিটতে পাসপোর্ট পেতে এই একুশ শতকেও নারী উদ্যোক্তাদের ঘাম ঝরাতে হয়।

বার্তা সংস্থা এএফপি সম্প্রতি প্রযুক্তি স্টার্টআপে নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব চ্যালেঞ্জ অনুসন্ধানে বেশ কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত নারীর সাক্ষাত্কার নিয়েছে। সেখানে তারা বর্ণনা করেছেন তাদের অতীত তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। যদিও দেখা যায়, নারী নেতৃত্বাধীন স্টার্টআপগুলো মোটা দাগে পুরুষ নেতৃত্বাধীন স্টার্টআপের চেয়ে ভালো করছে।

এমন এক সফল উদ্যোক্তা ফিটনেস স্টার্টআপ ফোর্তে-এর প্রতিষ্ঠাতা লরেন ফাউন্ডোস। তিনি যা করতে চাইছিলেন তার সব ক্ষেত্রে তার যোগ্যতা ছিল প্রশ্নাতীত। এর পরও তার অনলাইন স্টার্টআপটির তহবিল পেতে কম কাঠখড়ি পোড়াতে হয়নি!

তিনি বলেন, পুরুষ নিয়ন্ত্রিত ভেঞ্জার ক্যাপিটালের ভয়ানক জগিট এখনো নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বড় বাধা। তার মতো আরো যারা নারী উদ্যোক্তা আছেন, তাদের এখানে টিকতে হলে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে। এমনকি কোম্পানির প্রধান নির্বাহীর পদটি ছেড়ে কোনো পুরুষকে দিতে রাজি আছেন কিনা’—ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টদের কাছ থেকে এমন প্রশ্নেরও সম্মুখীন হয়েছেন লরেন।

অভিজ্ঞতা থেকে লরেন বলেন, বৈঠকে পুরুষরা আপনার অনুপস্থিতিতে আপত্তিকর কথা বলবে, নারী তার আবেগ সামলে কাজটি ঠিকঠাক করতে পারবে তোএমন আলোচনা করবেন তারা। সেই সঙ্গে ব্যবসার হিসাব-নিকাশ কে দেখবে নিয়েও তাদের গভীর উদ্বেগ দেখবেন!

লরেন বলেন, এমনটি যখন ঘটত আমি সোজাসাপ্টা তাদের বলতাম, এর জন্য আমি আছি। আমি অর্থবাণিজ্য বুঝি, একটি বড় ব্যাংকে ১০ বছর কাজ করেছি। এখানে যা কিছু কাজ আছে সেগুলোর জন্য আপনাদের মধ্যে আমিই সেরা।

দেখা যায়, একটি স্টার্টআপের তহবিল পাওয়া মূলত বন্ধু-বান্ধব, পরিবার বা জমানো টাকার ওপর নির্ভর করে। এসব দেখে ভরসা পেলেই কেবল বিনিয়োগকারী নবীন কোম্পানিটির জন্য ঝুঁকি নিতে রাজি হন।

কেবল ধারণার পর্যায়ে রয়েছে বা পরীক্ষামূলকভাবে চলছে সেই প্রাথমিক সময়ে একটি ব্যবসায় যে টাকা বিনিয়োগ করা হয় সেটিকে বলে সিড তহবিল। এটি নির্ভর করে আস্থার ওপর। কিন্তু এক্ষেত্রে যখন বিনিয়োগকারীরা দেখেন নেতৃত্বে নারী তখন তারা পিছিয়ে যান। বেশ কয়েকজন সফল নারী উদ্যোক্তা এমনটিই বলেছেন।

অথচ লরেনের ফোর্তে কিন্তু এখন দারুণ সফল। বিশেষ করে মহামারীতে যখন জিম এবং ফিটনেস সেন্টারগুলো বন্ধ, তখন তার কোম্পানি অনলাইনে গ্রাহকদের জন্য বহু সেশন পরিচালনা করেছে। লরেন একজন পুরুষ অংশীদার নিয়েছেন, তিনি তার ডানহাত। ব্যবসায় উন্নতি করতে কিছু সমঝোতা তাকে করতেই হয়েছে। সেই ব্যবসায়িক অংশীদার বেছে নেয়ার সময় প্রচলিত ধারণাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে বাছাই করেছেন ব্রিটিশ উচ্চারণে ইংরেজি বলা এক পুরুষকে।

লরেন জানিয়েছেন, তিনি যেসব ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানতে চেয়েছেন তারা এর আগে কোনো নারী উদ্যোক্তাকে তহবিল দিয়েছেন কিনা। তারা সবাই না সূচক উত্তর দিয়েছেন।

ডব্লিউ ফান্ডের ব্যবসায়িক অংশীদার এবং উইমেন হু টেকের প্রতিষ্ঠাতা অ্যালিসন ক্যাপিন জানান, যুক্তরাষ্ট্রে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের খুবই সামান্য একটি অংশ পায় নারী নেতৃত্বাধীন স্টার্টআপগুলো। উইমেন হু টেকের জরিপে এমন তথ্যও উঠে এসেছে যে, তহবিল পেতে নারীদের আপত্তিকর প্রস্তাবও দেয়া হয়। জরিপে অংশ নেয়া ৪৪ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তহবিল চাইতে গিয়ে যৌন রসিকতা, এমনকি অপ্রত্যাশিত স্পর্শের মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন তারা।

ক্যাপিন জানান, ভালো পারফর্ম করা সত্ত্বেও নারী নেতৃত্বাধীন স্টার্টআপে বিনিয়োগ প্রবাহ গত বছর অবিশ্বাস্যরকম কমে গেছে।

এক্ষেত্রে কৃষ্ণাঙ্গ নারী উদ্যোক্তাদের আরো বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় বলে জানান ইনভেস্ট সৌ সৌ স্টার্টআপের প্রতিষ্ঠাতা ফোন্টা গিলিয়াম। তিনি বলেন, তহবিল পেতে চাইলে আপনাকে পুরুষদের চেয়ে অনেক বেশি যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। তার স্টার্টআপের যে ভ্যালুয়েশন করা হয়েছিল, সেটি রীতিমতো অপমানজনক ছিল বলে জানান তিনি। কিছু ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট এতটাই আক্রমণাত্মক ছিল যে তাকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে বলে জানান গিলিয়াম।

ক্যাপিনের মতে, তহবিল পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রাধিকার সমস্যাও রয়েছে। যেমন, সিলিকন ভ্যালিতে স্ট্যানফোর্ডের শিক্ষার্থীদের কদর বেশি। দেখা যায় এই অগ্রাধিকারপ্রাপ্তরাই সব সময় পাইপলাইনে থাকে। ফলে আপনি সহজে সেখানে সুযোগ পাবেন না। সূত্র: এএফপি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন