গৃহহীনদের ঘরের দলিল হস্তান্তর

এটিই মুজিব বর্ষের সবচেয়ে বড় উৎসব: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

উৎসবের মধ্য দিয়ে দেশের ৭০ হাজার গৃহহীন ভূমিহীন পরিবারের হাতে মুজিব বর্ষের উপহার তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন গৃহহীন পরিবারকে জমি ঘর দেয়ার কর্মসূচির উদ্বোধন করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রীর উপহারে আনন্দে অশ্রুসিক্ত হয়েছেন উপকারভোগীরা। আর ঘরের চাবি দলিল হস্তান্তরকে মুজিব বর্ষের সবচেয়ে বড় উৎসব বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে মুজিব বর্ষে অনেক কর্মসূচি  আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। এটি আমাদের জন্য যেমন অভিশাপ নিয়ে এসেছিল, আবার অন্যদিকে তা আশীর্বাদও। কারণ আমরা এই একটি প্রকল্পেই নজর দিতে পেরেছি। এটাই আমাদের আজকে বড় উৎসব, গৃহহীন ভূমিহীন মানুষদের ঘর দিতে পেরেছি। এর চেয়ে বড় উৎসব বাংলাদেশে হতে পারে না।

সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকে সত্যি আমার জন্য একটি আনন্দের দিন। কারণ দেশের যারা সব থেকে বঞ্চিত মানুষ, যাদের কোনো ঠিকানা ছিল না, ঘরবাড়ি নেই; আজকে তাদের অন্তত একটা ঠিকানা, মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে পেরেছি। দেশের মানুষের জন্যই কিন্তু আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। তিনি তো আমাদের কথা কখনো চিন্তা করেননি। সারা জীবন চিন্তা করেছেন দেশের মানুষের কথা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। তিনি স্বাধীনতার পর পরই গৃহহীন মানুষগুলোকে ঘর দেয়ার জন্য গুচ্ছগ্রাম পরিকল্পনা হাতে নেন। তিনি নোয়াখালীর চরাঞ্চলে গিয়ে গুচ্ছগ্রাম উদ্বোধন করেন। সাধারণ মানুষের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করার চিন্তাটা তিনিই করেছিলেন।

একসঙ্গে এত বিপুলসংখ্যক মানুষকে ঘর দেয়ার নজির প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি না পৃথিবীর কোনো দেশে কখনো অথবা আমাদের দেশে কোনো সরকার এত দ্রুত এতগুলো ঘর করেছে কিনা। ঘরগুলো তৈরি করা সহজ কথা নয়। আমাদের যারা প্রশাসনে আছেন তারা সরাসরি ঘরগুলো তৈরি করেছেন। এতে ঘরগুলো মানসম্মত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮১ সালে মানুষের শক্তি নিয়েই আমি দেশে ফিরে আসি। আমার কিছু ছিল না, ঘরও নেই, কোথায় যে উঠব তাও জানি না, কীভাবে চলব তাও জানি না। তবু আমি ফিরে আসি। কখনো আমি ছোট ফুফুর বাড়ি, মেজ ফুফুর বাড়িতে দিন কাটাই। তখন আমার লক্ষ্য ছিল একটাইদেশের মানুষের কষ্ট দুঃখ হাহাকার দূর করা।

সরকারপ্রধান বলেন, ২০২০ সাল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ২০২১ সাল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা একই সঙ্গে পালন করে যাচ্ছি। করোনাভাইরাসে সারা বিশ্ব স্থবির। আজকে আমাদের ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে কথা বলতে হচ্ছে। আমার খুব আকাঙ্ক্ষা ছিল নিজের হাতে দাঁড়িয়ে থেকে জমির দলিল তুলে দেব। কিন্তু সেটা পারলাম না। তার পরও ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলে আজ আমি আপনাদের সঙ্গে এভাবে কথা বলতে পারছি।

প্রশাসন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা নিজেরা আন্তরিকতার সঙ্গে ঘর তৈরিতে কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রতিনিয়ত তদারক করা হয়েছে, যাতে ঘরগুলো মানসম্মত হয়, কাজগুলো ঠিকমতো হয়। পাশাপাশি সংসদ সদস্য উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সব জনপ্রতিনিধি সহযোগিতা করেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের রিফিউজিদের ভাসানচরে ঘর করে দিচ্ছি। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার ক্ষমতার সময়ে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য কক্সবাজারের খুরুশকুলে ঘর করে দিয়েছি। আরো ১০০ বিল্ডিং তৈরি করে দেব। আজ ৬৬ হাজার ১৮৯ ঘর তৈরি করে দিয়েছি। আরো এক লাখ ঘর তৈরি করব। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তশালীদের নিজ নিজ এলাকার ভূমিহীন গৃহহীনদের ঘর তৈরি করে দেয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে দেশের ৪৯২টি উপজেলার মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপকারভোগীদের হাতে ঘরের চাবি দলিল হস্তান্তর করেন। সূচনা বক্তব্য শেষে তিনি খুলনার ডুমুরিয়া, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, নীলফামারীর সৈয়দপুরে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্থানীয় প্রশাসন উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। গতকাল একসঙ্গে মোট ৬৯ হাজার ৯০৪ জন ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি গৃহ প্রদানের দলিল হস্তান্তর করা হয়।

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা থেকে ঘর পাওয়া পারভীন নামে এক নারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু সুস্থতা কামনা করেন। খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটে জানিয়ে পারভীন ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আমার স্বামী কাজ পায় না। মাঝেমধ্যে না খেয়ে থাকতে হয়। মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। কোনোদিন ভাবিনি ঘর হবে। আপনি আমাদের ঘর দিয়েছেন, জমি দিয়েছেন। আপনি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুন।

সময় তাকে সান্ত্বনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনি কাঁদবেন না। আমি মনে করি এটা আমার কর্তব্য। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, জাতির পিতার কন্যা হিসেবে দেশের মানুষের জন্য কাজ করব, এটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তার স্বপ্ন পূরণ করব। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে, সেজন্য আমি আমার জীবন উৎসর্গ করেছি। বাংলাদেশে একটি মানুষও যেন গৃহহীন ভূমিহীন না থাকে আমি সেই ব্যবস্থা করব। একই সঙ্গে আপনারা যেন আপনাদের জীবন-জীবিকার পথ খুঁজে পান সেই ব্যবস্থাও করব।

সারা দেশে যারা ঘর পেয়েছেন তাদের ঘরের সামনে একটি করে গাছ, বিশেষ করে ফলদ গাছ লাগানোর আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। নদীভাঙনে যাতে আর কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মুজিব বর্ষ ঘোষণা করে সরকার। মুজিব বর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে নাম লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আশ্রয়ণ- প্রকল্পের অধীনে চলমান কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ে সারা দেশে ৬৯ হাজার ৯০৪ পরিবারের মধ্যে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে শতাংশ খাসজমির মালিকানা দিয়ে বিনা মূল্যে দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর উপহার হিসেবে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে ব্যারাকের মাধ্যমে ২১টি জেলার ৩৬টি উপজেলায় ৪৪ প্রকল্পের মাধ্যমে হাজার ৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হয়। দেশের ভূমিহীন গৃহহীনদের ঘর করে দিতে এখন পর্যন্ত প্রায় নয় লাখ পরিবারকে তালিকাভুক্ত করেছে শেখ হাসিনা সরকার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন