পিকে মিশ্রা, অজিত দোভাল ও পিকে সিনহা

দেশ পরিচালনায় মোদির ত্রিরত্ন

বণিক বার্তা ডেস্ক

গত বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দপ্তরে বড় তিনটি পরিবর্তন আসে। সে সময় পিকে মিশ্রাকে নিজ দপ্তরের মুখ্য সচিব পিকে সিনহাকে মুখ্য উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেন মোদি। ওই সময়ে দুজনের পাশাপাশি নিজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের কার্যপরিধিও নির্দিষ্ট করে দেন তিনি। বর্তমানে নরেন্দ্র মোদি রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনজনের পরামর্শকেই মূল্য দিচ্ছেন বেশি।

একসময় নরেন্দ্র মোদির ওপর ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। রাষ্ট্র পরিচালনাসংক্রান্ত যেকোনো ইস্যুতে অমিত শাহর মতামতকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে দুজনের মধ্যে এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে উত্তর-পূর্ব দিল্লির জাতিগত দাঙ্গার উত্তেজনা প্রশমনে ব্যর্থতার কারণেই নরেন্দ্র মোদির বিরাগভাজন হয়েছেন অমিত শাহ। ওই সময় দাঙ্গা উপদ্রুত এলাকাগুলোর ধারেকাছেও যাননি অমিত শাহ। উপরন্তু সে সময় অমিত শাহর নানা বিতর্কিত উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিজেপি সরকারের ভাবমূর্তিকেও ক্ষুণ্ন করে, যা একসময়ের ঘনিষ্ঠ দুই রাজনৈতিক সহযোগীর মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া সে সময় দিল্লি পুলিশকেও দাঙ্গার উত্তেজনা প্রশমনে ভূমিকা রাখার বদলে এক পক্ষের ওপর চড়াও হতে দেখা গিয়েছে।

একপর্যায়ে নরেন্দ্র মোদি দাঙ্গা উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শনের জন্য অজিত দোভালকে পাঠান। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সে সময় উপদ্রুত এলাকাগুলো ঘুরে ঘুরে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধৈর্য ধরে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

৭৫ বছর বয়সী গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে সহিংসতা উপদ্রুত এলাকায় পাঠানোর বিষয়টি সে সময় সবার নজরে আসে। বিষয়টিকে বিজেপির হার্ড টাস্কমাস্টার হিসেবে পরিচিত অমিত শাহর মোদির বিরাগভাজন হওয়ার ইঙ্গিত হিসেবেই দেখতে থাকেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তবে নরেন্দ্র মোদি অমিত শাহর মধ্যকার দূরত্বের বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়ে ওঠে দিল্লি পুলিশের কমিশনার হিসেবে অমূল্য পাটনায়েকের স্থলে এসএন শ্রীবাস্তবের নিয়োগের ঘটনায়। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, দাঙ্গা তুঙ্গে উঠলে সিলামপুর ডিসিপি অফিসে দিল্লির জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে বসেছিলেন অজিত দোভাল। সে সময় অমিত শাহের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত দিল্লির তত্কালীন পুলিশ কমিশনার অমূল্য পাটনায়েক সেখানে অজিত দোভালের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। ওই সময় অজিত দোভাল তার সঙ্গে দেখা না করেই তাকে ফিরিয়ে দেন। একই সময় পাটনায়েকের স্থলে দিল্লি পুলিশের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান মোদির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এসএন শ্রীবাস্তব। নরেন্দ্র মোদির দপ্তর তাকে পদে নিয়োগ দেয় অমিত শাহ বা ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোনো ধরনের সলাপরামর্শ ছাড়াই।

অমিত শাহর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় বর্তমানে নীতিগত বিভিন্ন ইস্যুতে পিকে মিশ্রা, অজিত দোভাল পিকে সিনহার ওপরই নির্ভর করছেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতীয় রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে মোদির দরবারে ত্রিরত্নের ভূমিকা নিচ্ছেন এরাই।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের প্রকাশিত এক অফিস আদেশ সূত্রে জানা যায়, পিকে মিশ্রা বর্তমানে মোদির নীতিগত বিভিন্ন ইসু্যু ছাড়াও ভারতের জনপ্রশাসন আইন মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় এবং মন্ত্রিসভার বিভিন্ন কমিটি অন্যান্য নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখভাল করছেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বিভিন্ন সূচির তালিকাভুক্তি, দুর্নীতি দমন ইউনিট, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত ইস্যু বিষয় নিয়েও দেখভাল করছেন তিনি।

প্রমোদ কুমার মিশ্রা বা পিকে মিশ্রার সঙ্গে মোদির সম্পর্ক অনেক দিনের ঘনিষ্ঠ। নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে গুজরাট ইলেকট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশনের দায়িত্ব পালন করেছেন। এরও আগে ২০০৬-০৮ মেয়াদে ভারতের কেন্দ্রীয় কৃষি সচিবের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। পূর্বসূরি নৃপেন্দ্র মিশ্রার পদত্যাগের পর উপমুখ্য সচিবের পদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে নরেন্দ্র মোদির মুখ্য সচিবের দায়িত্ব পান পিকে মিশ্রা।

পিকে মিশ্রা বর্তমানে পূর্ণ মন্ত্রীর সমান পদমর্যাদা ভোগ করছেন। একই মর্যাদা ভোগ করছেন অজিত দোভালও। মোদির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের ওপর অর্পিত দায়িত্ব হলো জাতীয় নিরাপত্তা নীতিসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় (নিয়োগের বাইরে) দেখভাল করবেন তিনি। এর বাইরেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিদেশে অবস্থানরত ভারতীয়, প্রতিরক্ষা, মহাকাশ, পারমাণাবিক শক্তি এবং দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং () সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় দেখভালের দায়িত্বও তাকে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি ভারতের সিকিউরিটি কাউন্সিল সেক্রেটারিয়েট এবং ন্যাশনাল অথরিটি ফর কেমিক্যাল উইপনস-সংক্রান্ত বিষয়াদি দেখভালেরও দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাকে। 

এছাড়া নাগাল্যান্ডের বিদ্রোহী ন্যাশনাল সোস্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ডের (এনএসসিএন) আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে তদারকির দায়িত্বও তার ওপরই ন্যস্ত।

ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসের (আইপিএস) ১৯৬৮ ব্যাচের ক্যাডার অজিত দোভাল একসময় দেশটির গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর তাকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে নিয়োগ দেয়া হয়। বর্তমানে অজিত দোভাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মধ্যে রেষারেষি বৈরিতার বিষয়টিও এখন একপ্রকার সর্বজনবিদিত।

অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদির মুখ্য উপদেষ্টা পিকে সিনহার দায়িত্ব হলো সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থার (নরেন্দ্র মোদির মুখ্য সচিব জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ওপর ন্যস্তগুলো ব্যতীত) বৈদেশিক নীতি বিষয়গুলো দেখভাল করা।

পিকে সিনহা এর আগে ভারতের মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মোদির মুখ্য সচিব হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তির এক মাস আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন