বিদ্যুতের ‘সৌরনির্ভর’ ভবিষ্যৎ

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা বিদ্যুতের সৌরনির্ভর ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে, যেখানে সৌরনির্ভর বিদ্যুৎই বাজারে কর্তৃত্ব করবে। অবশ্য সৌর বায়ুবিদ্যুতের উৎপাদন ব্যবহার বাড়লেও ২০২১ সাল থেকে কার্বন নিঃসরণ বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। খবর মার্কেটওয়াচ।

বিশ্বব্যাপী তেলের চাহিদা ২০৩০ সাল নাগাদ স্থিতিশীল হবে এবং এর পর থেকে কমতে থাকবে। ফলে বিদ্যুৎ প্রজন্মের নতুন রাজা হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে সৌরবিদ্যুতের। আইইএ তাদের ২০২০ সালের বিশ্ব জ্বালানি পর্যবেক্ষণে এমন মতামত তুলে ধরেছে। পর্যবেক্ষণে তারা দেখতে পাচ্ছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সৌরবিদ্যুতের কর্তৃত্ব স্থাপিত হবে এবং এর মধ্য দিয়ে আগামী এক দশক পর থেকে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমবে। তখন বৈশ্বিক বিদ্যুতের ৮০ শতাংশই সৌরনির্ভর হয়ে যাবে বলে মনে করে আইইএ।

আইইএর নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরল বলেন, আমি দেখতে পাচ্ছি যে বৈশ্বিক বিদ্যুতের বাজারে নতুন রাজা হতে চলেছে সৌরবিদ্যুৎ। আজকের নীতিনির্ধারণের ওপর ভিত্তি করে ২০২২ সালের পর থেকে সৌরবিদ্যুতে উৎপাদন প্রতি বছরই বাড়বে এবং নিত্যনতুন রেকর্ডের সৃষ্টি হবে।

আইইএর পর্যবেক্ষণ নিয়ে ডেইলি প্লানেট নিউজলেটারে লেখা এক কলামে মিরো কোরেনহা মরিনা মেদিনা বলেছেন, প্রতিবেদনটি বাড়তি গুরুত্ব বহন করছে, কেননা অতীতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা এতটা বড় করে দেখেনি আইইএ।

২০২৫ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক কাঁচামাল হিসেবে কয়লাকে টপকে যাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। যদিও আইইএ বলছে, জীবাশ্ম জ্বালানির চাহিদা সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে যাচ্ছে না, কেননা উন্নয়নশীল জাতিগুলোর কাছে এখনো তেল গ্যাসের বিরাট চাহিদা রয়েছে, থাকবে আরো বহুদিন।

চলমান নভেল করোনাভাইরাস সৃষ্ট কভিড-১৯ মহামারীর কারণে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করতে পেরেছে বিশ্ব। যদিও আইইএর মতে, উন্নয়নশীল বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানির বর্ধিত চাহিদার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না বিশ্ব।

যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মতো উন্নত অর্থনীতিতে অপরিশোধিত তেলের চাহিদা এরই মধ্যে চূড়ান্তে পৌঁছেছে, কিন্তু চীন ভারতের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে সামনের বছরগুলোতে তেলের চাহিদা বেড়ে যাবে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বৈশ্বিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে সৌর ফটোভোল্টাইক (পিভি) বায়ুর সম্মিলিত অবদান ২০৩০ সাল নাগাদ ৩০ শতাংশে পৌঁছবে, যা ২০১৯ সালে ছিল শতাংশ। সৌর পিভি সক্ষমতা প্রতি বছর গড়ে বাড়ছে ১২ শতাংশ করে।

আইইএ বলছে, উন্নত প্রযুক্তি আর আর্থিক সহযোগিতা বেশির ভাগ সৌর পিভি প্রকল্পেই চাহিদা পূরণ করতে পারছে। সংস্থাটি জানায়, বেশির ভাগ দেশেই সৌর পিভি এখন কয়লা কিংবা গ্যাসচালিত পাওয়ার প্লান্টের চেয়েও সস্তা।

প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার মতো অতি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যপূরণের ক্ষেত্রে পিভি বিদ্যুৎ প্রজন্ম আরো বেশি শক্তিশালী প্লাটফর্ম হয়ে উঠবে।

আইইএ বলছে, ২০২০ সালে দশমিক গিগাটোন কমলেও ২০২১ সাল থেকে কার্বন নিঃসরণ বাড়বে, যদিও সৌর বায়ুসৃষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদন জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞদের তাপমাত্রার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। সেপ্টেম্বরে রেকর্ড তাপমাত্রায় গরমে হাঁসফাঁস করেছে মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২০ সালটি ইতিহাসের সবচেয়ে গরম বছর হিসেবে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় :১।

মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত মাসে বৈশ্বিক গড় উষ্ণতা ছিল ৬০ দশমিক ৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তথ্যভাণ্ডার থেকে দেখা যায়, ২০১৫ ২০১৬ সালকে টপকে ১৪১ বছরের ইতিহাসে গত মাসই ছিল সবচেয়ে বেশি উষ্ণ। ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউরোপ, উত্তর এশিয়া, রাশিয়া দক্ষিণ গোলার্ধই মূলত উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। যদিও সেপ্টেম্বরে অসহনীয় গরমে ভূমিকা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অরেগনের ভয়াবহ দাবানলের।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন