অভিজাত পাড়া গুলশানে ফাস্ট ফুডের আড়ালে মাদক ব্যবসা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

দরজার বাইরে ঝুলছে খাওয়ারের তালিকা। রয়েছে হরেক রকমের জুসের ছবিও। স্বচ্ছ গ্লাসে ঘেরা ফাস্ট ফুডের দোকানটির ভেতের রয়েছে ছোট ছোট টেবিল। প্রতি টেবিলে চারটি করে চেয়ার। এসবই বাইরের চিত্র। ভিতরের দৃশ্যপট পুরো ভিন্ন। বড় বড় সেলফে সাজানো রয়েছে বিদেশী নামী-দামী ব্র্যান্ডের মদ। ফ্রিজ ভর্তি বিয়ার, পাশে রয়েছে শিশার বার। এসবই ‘হর্স অ্যান্ড হর্স পার্টি মেরি ফাস্ট ফুডের’ ভেতরের দৃশ্য।

রাজধানীর অভিজাত পাড়া হিসেবে পরিচিত গুলশানের সিটি স্ক্যাপ টাওয়ারের নীচ তলায় দীর্ঘদিন ফাস্ট ফুডের দোকান হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করলেও মূলত সেখানে মাদক কারবার চলতো।

সম্প্রতি মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে অনুমোদনহীনভাবে প্রতিষ্ঠানটির মদ বিক্রির চিত্র উঠে আসে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মেহেরীন সারা মনসুর। তিনি কলাবাগানের আহসান হাবিব মনসুরের মেয়ে। অভিযান শেষে মেহেরীন সারা মনসুরসহ তার ফাস্ট ফুডের ম্যানেজার নাহীদ হাসান নান্নু এবং আরেক কর্মী এ কে এম রাশেদ বিন মান্নানকে আসামি করে মামলা দিয়েছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এরমধ্যে দুজন ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হলেও এখনো পলাতক রয়েছেন মেহেরীন সারা মনসুর।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানায়, হর্স অ্যান্ড হর্স পার্টি মেরি ফাস্ট ফুড দোকানের সাইন বোর্ড ব্যবহার করলেও তারা মূলত নানা ধরনের মাদক বিক্রি ও সেবনের আয়োজন করতো। অভিযান চালিয়ে ওই ফাস্ট ফুড থেকে ২০৩ বোতল বিদেশী মদ, সাড়ে ৮শ ক্যান বিয়ার এবং ২ কোটি শিশা ও শিশা সেবনের ১৫টি হুক্কা সেট উদ্ধার করা হয়। সবমিলে ওই ফাস্টফুড থেকে ২০ লাখ টাকা মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চল গুলশান সার্কেলের পরিদর্শক এস এম সামসুল কবীর বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ফাস্ট ফুডের দোকান হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) থেকে ট্রেডলাইন্সে গ্রহণ করে হর্স অ্যান্ড হর্স পার্টি মেরি ফাস্ট ফুড। কিন্তু তারা সেখানে মদ, বিয়ার ও শিশা বিক্রি করে আসছিলো। অনুমোদনহীন ভাবে মাদক দ্রব্য সংরক্ষণ করায় প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মালিক মেহেরীন সারা মনসুরকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

শুধু এই ফাস্ট ফুডের দোকানেই নয়, গুলশনা বারিধারার নামী অনেক রেস্টুরেন্টেই রাত হলে জমে ওঠে মাদকের আড্ডা। বিশেষ করে মদ, বিয়ার, শিশা। কোন কোন রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে রয়েছে ইয়াবার আসর আয়োজনের অভিযোগও। এইসব রেস্টুরেন্টগুলোতে রাত বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে তারকাদের আনাগোনা। দলে দলে উঠতি বয়সীদের ভীড় বাড়ে রাতেই। এরপর অল্প আলোতে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে পার্টি।

অভিযোগ রয়েছে গুলশানের উঠতি বয়সীদের টার্গেট করে একটি চক্র মাদকের এমন কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। বাইরে থেকে দেখতে ফাস্টফুডের দোকান হওয়ায় মিলছে বাড়তি সুবিধা। সাধারণ মদের দোকানগুলোতে শিক্ষার্থীদের প্রবেশের সুযোগ না থাকলেও গুলশানের ফাস্টফুড গুলোতে তাদের অবাধ যাতায়াত রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন