খালেদা-তারেক গ্রেনেড হামলায় জড়িত: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০০৪ সালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান জড়িত বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জড়িত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তার (জিয়াউর রহমান) স্ত্রী খালেদা জিয়া ক্ষমতা এসে একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা ঘটায়। এর সঙ্গে তার ছেলে তারেক রহমান যে জড়িত সেটাও যারা এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত তাদেরই কথায় বেরিয়ে এসেছে। তারা কোথায় মিটিং করেছে, কীভাবে এই ষড়যন্ত্র করেছে।’

আজ শুক্রবার আওয়ামী লীগের আয়োজনে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। গণভবন থেকে অনুষ্ঠানে ভিডিও কলে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে যে হত্যা-ক্যু ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়েছিল তারই বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে, উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি আওয়ামী লীগ। ২১ বছর পর যখন আমরা সরকারে এসেছি , আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেই প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল। সরকার যে জনগণের জন্য কাজ করে সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছিল। এবং জনগণের ভোটের অধিকারটা নিশ্চিত হয়েছিল। ২০০১ এ এক গভীর চক্রান্ত করে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেয়নি। তারপরেই ২০০৪ সালে এই হত্যাকাণ্ড। এটা কেন?

গ্রেনেড হামলার আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বক্তৃতার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একেকটা ঘটনা ঘটবার আগে খালেদা জিয়া যে বক্তৃতাগুলো দিয়েছে- যখন কোটালিপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল তার আগে বলেছিল যে আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পূর্বে খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছিল যে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলীয় নেতাও কোন দিন হতে পারবে না। এই ভবিষ্যৎ বাণী খালেদা জিয়া কিভাবে দিয়েছিল? কারণ তাদের চক্রান্তই ছিল যে আমাকে তারা হত্যা করে ফেলবে তাহলে তো আমি কিছুই হতে পারবো না। এটাই তাদের চক্রান্ত ছিল। প্রতিটি ঘটনার আগে তার বক্তৃতা যদি আপনারা অনুসরণ করেন এই কথাগুলোই বলেছে।

তিনি বলেন, ‘এখানেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। আমেরিকায় সজিব ওয়াজেদ জয়, আমার ছেলেকে কিডন্যাপ করে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। সেখানে ধরা পড়লো কার কাছে। আমেরিকার যে সংস্থা এফবিআই। তাদেরই তদন্তে এটা বের হয়। তারাই যখন এটা তদন্ত করে সেখানে বিএনপির নেতা দোষী সাব্যস্ত হয় এবং সাজাপ্রাপ্ত হয়। সেখানে যে রায় দেয় বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান এবং শফিক রেহমান তাদের নাম বেরিয়ে আসছে। যে তারা এর সঙ্গে জড়িত। যে শাস্তি পায় সে যে তারেক জিয়ার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে এই ঘটনা ঘটিয়েছিল যে জয়কে হত্যা করবে এটা আমরা কখনো জানতে পারতাম না যদি এফবিআই এটা খুঁজে বের না করতো। এভাবে একটা খুনের রাজত্ব তারা সৃষ্টি করেছিল।’

সারাদেশে ৫০০ জায়গায় বোমা হামলা করে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিলো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। হানিফ ভাইয়ের (ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ) কথা স্মরণ হয়। হানিফ ভাইসহ সবাই আমাকে যেভাবে ঘিরে রেখেছিল জানি না এই অবস্থায় মানুষ বাঁচতে পারে কি না।…. আমাদের নেতাকর্মীরা মানব ঢাল তৈরি করে সেদিন আমাকে রক্ষা করেছিল। গ্রেনেড হামলা একটার পর একটা। এক নয় পরপর ১৩টা গ্রেনেড ছোড়া হয়। তার মধ্যে একটা গ্রেনেড কিন্তু অক্ষত ছিল। একটা নয় আরও দুইতিনটা গ্রেনেড অক্ষত ছিল।’

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, বিএনপি সরকার যদি এর সঙ্গে জড়িত নাই থাকবে তাহলে তারা আলামতগুলো কেন নষ্ট করবে? হামলা পরবর্তী সময়ের বর্ণনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই গ্রেনেড হামলার পরেই সিটি করপোরেশনে তখন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। তার লোকজন নিয়ে এসে পুরো এলাকা ধুয়ে ফেলে। আর যে গ্রেনেডটা ওখানে পাওয়া গিয়েছিল একটা রমনা ভবনের কোনায়, আরেকটা ওই স্পটেই ছিল বিস্ফোরিত হয়নি। আরেকটা বিস্ফোরিত হয়েছে আমি যখন ওখান থেকে চলে আসি গাড়ি নিয়ে ঠিক তার পরেই। সেই গ্রেনেডটা একজন সেনা অফিসার এটিকে আলামত হিসেবে রাখতে চেয়েছিল বলে খালেদা জিয়া তাকে চাকরিচ্যুত করেছিল। কোন আলামতই তারা রাখতে চায়নি। তারপর আপনারা জানেন একটা নাটক সৃষ্টি করে।’

হামলার পরে এ নিয়ে প্রতিবাদ করারও সুযোগ দেয়া হয়নি অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘আমরা (তখন) সংসদের সদস্য। সংসদের অনেক সদস্যই এই গ্রেনেড হামলায় আহত। আমরা যখন এটার ওপর আলোচনা করতে চাইলাম। একটা রেজুলেশন নিতে চাইলাম অপজিশন থেকে। খালেদা জিয়া কিন্তু সেটা হতে দেয়নি। আলোচনা করতে দেয়নি। দেশে এ রকম একটা ঘটনা ঘটে গেছে, আমি বিরোধী দলের নেতা। আমার ওপর এই রকম গ্রেনেড হামলা। বিরোধী দলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো একটি দল যে দল স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল। সেই দলের সভায় এই রকম গ্রেনেড হামলা। আর পার্লামেন্টে যিনি সংসদ নেতা বলে দিল, ওনাকে (শেখ হাসিনাকে) আবার কে মারবে? তখন তো বলতে হয় আপনিই (খালেদা জিয়া) তো মারবেন। চেষ্টা করেছেন, ব্যর্থ হয়েছেন। সেজন্য আর পারছেন না। এরকম তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে আমাদের কোন কথা বলতে দেয়নি এই হামলা সর্ম্পকে। অথচ তখন আমাদের নেতা-কর্মীরা, পার্লামেন্ট মেম্বাররা আহত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে কাতরাচ্ছে। কিন্তু আমাদের সেই অধিকারটুকু পার্লামেন্টে ছিল না যে এই ব্যাপারে আমরা আলাপ আলোচনা করতে পারবো।’

ঘটনার পর আওয়ামী লীগকে কোন আলোচনা করতে দেয়া হয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, এতে কী প্রমাণ হয়- তারা যদি সরাসরি জড়িত না থাকতো। তাহলে কি তারা এত ভাবে বাধা দিত?’ 

সারা দেশটাকে তারা (বিএনপি) একটা সন্ত্রাসের রাজত্ব করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি আল্লাহ কেন বাঁচিয়ে রেখেছেন। বাংলাদেশের মানুষের জন্য যাতে কিছু করতে পারি সেই জন্যই হয়তো বাঁচিয়ে রেখেছেন। নইলে এ রকম অবস্থা থেকে বেঁচে আসা এটা অত্যন্ত কষ্টকর।’

গ্রেনেড হামলার পরে আহত নেতাকর্মীদের চিকিৎসাতেও অসহযোগিতা করা হয়েছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণত একটা সভ্য দেশ হলে কী করতো? সাথে সাথে পুলিশসহ অন্যান্য সবাই ছুটে আসতো আহতদের সাহায্য করতে, উদ্ধার করতে, চিকিৎসা করতে। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, সেখানে কোনো রোগী ঢুকতে পারবে না, যেতে পারবে না, চিকিৎসা নিতে পারবে না। ঢাকা মেডিকেল কলেজে বিএনপির কোন ডাক্তার সেখানে উপস্থিত নেই।’

আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সূচনা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। এসময় দলের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা দলীয় কার্যালয়ে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ২১ আগস্টের হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এবং মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনীসহ ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৫০০ বেশি লোক আহত হয়েছেন। আহতদের অনেকেই সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন