বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল

দুই বছর পর গেজেট প্রকাশের কথা মনে পড়ল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের

সাইফ সুজন

দেশের উচ্চশিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে ২০১৭ সালের মার্চে পাস হয় অভিস্বীকৃতি (অ্যাক্রেডিটেশন) কাউন্সিল আইন। আইনের আওতায় ওই বছরই গঠন করা হয় বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল। এরপর নিয়োগ দেয়া হয়েছে কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সদস্য। এরই মধ্যে কাউন্সিলের বেশকিছু সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠাকালে -সংক্রান্ত কোনো প্রজ্ঞাপনই (গেজেট) জারি করেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

প্রতিষ্ঠাকালে ভুলক্রমে আদেশ প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের কর্মকর্তারা। সম্প্রতি কাউন্সিলের জনবল কাঠামো অনুমোদনের জন্য প্রজ্ঞাপনের প্রয়োজন হলে ভুল ভাঙে মন্ত্রণালয়ের। গত রোববার বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার আদেশ প্রজ্ঞাপন  আকারে জারি করা হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়--এর উপসচিব তরিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল আইন, ২০১৭-এর ধারা ()- প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার কর্তৃক আগস্ট ২০১৮ থেকে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা হলো। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে আদেশ জারি করা হলো।

প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল আইনেই বলা হয়েছে তা অবিলম্বে কার্যকর হবে। সেখানে একটি প্রজ্ঞাপন জারির কথাও বলা হয়েছে। তবে যে কারণেই হোক তখন সেটি করা হয়নি। এখন প্রজ্ঞাপন জারি করে তা পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে।

কর্মকর্তাদের এমন ভুলকে বড় ধরনের প্রশাসনিক দুর্বলতা বলে মনে করেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, কাউন্সিলটি মূলত আইনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে চেয়ারম্যানসহ বিভিন্নজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গত কয়েক বছর তাদের বেতন-ভাতাও দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমও চলমান রয়েছে। তাই প্রতিষ্ঠানটিকে অবৈধ বলা যাবে না। তবে প্রতিষ্ঠাকালে গেজেট না হওয়াটা যথাযথ হয়নি। এটি প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণে হয়েছে।

বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল আইনেও কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাপনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এই আইন কার্যকর হইবার পর সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করিবে।

এদিকে শুধু প্রজ্ঞাপন নয়; অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের পথচলার প্রতিটি ধাপই চলছে ধীরগতিতে। বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল আইনের খসড়া প্রণয়ন থেকে শুরু করে সংসদে পাস হতেই সময় লেগেছে ছয় বছরেরও বেশি। আর আইন পাসের পর চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতেই লেগেছে প্রায় দেড় বছর। এমনকি এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি অ্যাক্রেডিট করার মানদণ্ড ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্কও।

প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মেসবাহ উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করেছি। অর্গানোগ্রাম চূড়ান্তের কাজটি একটি পর্যায়ে এসেছে। কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্কও চূড়ান্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তবে আদেশ জারির বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের কাজ, দেরি হওয়ার বিষয়ে তারা ভালো বলতে পারবেন। তবে আমি যতদূর শুনেছি, অর্গানোগ্রাম অনুমোদন বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার আদেশের কপি চাওয়া হলে বিষয়টি সামনে আসে। সম্প্রতি আদেশ জারি করা হয়েছে।

অভিস্বীকৃতি (অ্যাক্রেডিটেশন) কাউন্সিল আইন, ২০১৭ অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল একাডেমিক প্রোগ্রাম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বীকৃতি দেবে। অ্যাক্রেডিটেশন সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ফি প্রদানের মাধ্যমে কাউন্সিল বরাবর আবেদন করবে। এরপর কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞ সদস্যের একটি অ্যাসেসমেন্ট কমিটি সরেজমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যাবলি পর্যবেক্ষণ করে মতামতসহ প্রতিবেদন দেবে। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় শর্তসাপেক্ষে কাউন্সিল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কনফিডেন্স অ্যাক্রেডিটেশন সনদ দেবে।

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের প্রোগ্রাম স্বীকৃতি দেয়ার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল রয়েছে। উন্নত বিশ্বের সব দেশেই ধরনের বিভিন্ন বডি রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায়ও মিয়ানমার ছাড়া সব দেশেই অ্যাক্রেডিট প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিক্ষাবিদদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও গঠন করা হয়েছে ধরনের কাউন্সিল। প্রতি বছরই দেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে দেশে অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১০৫টি। আর স্বায়ত্তশাসিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪৫। ১৫০ বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম চলছে কোনো ধরনের অ্যাক্রেডিটেশন ছাড়াই। এর সুযোগ নিয়ে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আইন না মানার অভিযোগ রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন