যেসব কভিড-১৯ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মাসখানেক পর থেকেই মানসিক রোগে ভুগতে থাকে। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন তথ্যই তুলে আনলেন ইতালির বিশেষজ্ঞরা।
মিলানের সান রাফায়েলে হাসপাতালের একদল বিশেষজ্ঞ ৪০২ জন রোগীকে পর্যবেক্ষণ করে তাদের মধ্যে ৫৫ শতাংশের মধ্যেই ন্যূনতম একটি করে মানসিক রোগ খুঁজে পেয়েছেন। ক্লিনিক্যাল সাক্ষাত্কার, রোগীর নিজস্ব মূল্যায়ন নিয়ে প্রশ্নমালার মাধ্যমে দেখা যায় ২৮ শতাংশের মধ্যে পোস্টট্রমাটিক ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি), ৩১
শতাংশের মধ্যে বিষণ্নতা ও ৪২ শতাংশের মধ্যে দুশ্চিন্তা ভর করে। এছাড়া ৪০ শতাংশের মধ্যে নিদ্রাহীনতা ও ২০ শতাংশের মধ্যে অবসেসিভ কমপালসিভ (ওসি) উপসর্গ ছিল।
এই সমীক্ষার ফল ভাইরাসের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়িয়ে দেবে। ‘ব্রেইন, বিহেভিয়ার অ্যান্ড ইমিউনিটি’
নামক জার্নালে সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পিটিএসডি, তীব্র বিষণ্নতা ও দুশ্চিন্তা হলো সব উচ্চ মানসিক চাপসম্পন্ন অ-সংক্রামক পরিস্থিতি যার সঙ্গে জীবনের বহু বছরের বৈকলত্ব জড়িয়ে থাকে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ‘মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কভিড-১৯ সংক্রমণের প্রভাব, মনোরোগবিদ্যায় প্রদাহের ফলে বিষণ্নতা তৈরি হওয়ার বিষয়গুলো বিবেচনা করেই কভিড-১৯ থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের মনোরোগ পরীক্ষা এবং প্রদাহী বায়োমেকার নিয়ে আরো গভীরতর গবেষণার পরামর্শ আমাদের, যাতে ক্রমবর্ধমান মানসিক অবস্থার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা করা যায়।’
২৬৫ জন পুরুষ ও ১৩৭ জন নারীর ওপর গবেষণা করা হয়। কভিড-১৯ রোগে পুরুষদের চেয়ে নারীরা অপেক্ষাকৃত কম মারা গেছে। যদিও বেঁচে যাওয়াদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে নারীরাই মনস্তাত্ত্বিকভাবে বেশি ভুগছে। এছাড়া যেসব করোনা পজিটিভ রোগীর মানসিক রোগের ইতিহাস নেই তাদের চেয়ে ওই সব করোনা পজিটিভ রোগী বেশি ভুগছে, যাদের মানসিক সমস্যা আগে থেকেই ধরা পড়েছিল। ডা. মারিও গেন্নারো মাত্জার নেতৃত্বাধীন গবেষক দলের দাবি, অতীতে সংক্রামক রোগ নিয়ে যে গবেষণা করা হয়েছে তার সঙ্গে এবারের গবেষণার ফল বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ।
‘ভাইরাস কর্তৃক ইমিউন সাড়ার ধরন, কিংবা সামাজিক সঙ্গ নিরোধ, নতুন মহামারীর কারণে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ও পরিশেষে গুরুতর অসুস্থতা, অন্যদের সংক্রমিত করা নিয়ে উত্কণ্ঠা ও স্টিগমার (রোগীদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি) মতো মানসিক চাপের কারণে কভিড রোগীর মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে’,
জানান গবেষকরা।
যেসব কভিড-১৯ রোগী হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখিয়ে চলে গিয়েছেন তাদের মধ্যে উত্কণ্ঠা আর ঘুমের খানিকটা সমস্যা দেখা যায়। যদিও বিস্ময়করভাবেই এর সম্পূর্ণ বিপরীত ঘটনা ঘটে হাসপাতালে অধিকতর সময় অবস্থান করা কভিড রোগীদের ক্ষেত্রে। তাদের মধ্যে পিটিএসডি, বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তার উপসর্গ দেখা যায়।
গবেষকরা বলছেন, ‘হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কভিড-১৯ রোগীদের খারাপ মানসিক পরিস্থিতির বিষয়টি বিবেচনা করে আমাদের পর্যবেক্ষণ বলে, কভিড-১৯-এর মতো মহামারীতে অপেক্ষাকৃত কম স্বাস্থসেবা সামাজিক সঙ্গ নিরোধ ও একাকিত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।’
যুক্তরাজ্যের গবেষকরা কভিড-১৯ রোগীদের মস্তিষ্কের সমস্যা নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন আগেই। তাদের মতে, ভাইরাসের সঙ্গে প্রদাহ, স্ট্রোক ও পক্ষাঘাতের মতো সমস্যাগুলো সম্পর্কিত।
দ্য গার্ডিয়ান