ফাউসির বিরুদ্ধে চক্রান্ত

মিকায়েল ডি’অ্যান্থনিও

১৯৮৪ সাল থেকে বিজ্ঞানী চিকিৎসক অ্যান্থনি ফাউসি আমেরিকার সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচানো এবং পূর্ববর্তী পাঁচজন প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দেয়ার সঙ্গে বিশ্বব্যাপী মানুষের কৃতজ্ঞতাও অর্জন করেছিলেন। এখন যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস মহামারীতে লাখ ৩৫ হাজার মানুষ মারা যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির ষষ্ঠ প্রেসিডেন্টেরও ফাউসিকে তার বিশেষজ্ঞ মতের প্রয়োজন। অথচ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সহযোগীরা তীব্রভাবে ফাউসিকে কটাক্ষ করছে, স্পষ্টতই তাকে আমলাতান্ত্রিকভাবে হত্যার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

অন্য সময়ে, ফাউসির বিরুদ্ধে করা চক্রান্তের প্রেস রিপোর্টগুলো অবিশ্বাস্য দেখাবে। কিন্তু আমেরিকার শীর্ষ জীবাণু যোদ্ধাকে যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তখন তাকে উদ্দেশ করে কর্মকর্তাদের এমন তীব্রভাবে আঘাত করে কথা বলার নির্দেশ কে দিচ্ছে? বর্তমানে ওয়াশিংটন পোস্ট যখন রিপোর্ট করে জানিয়েছে যে ট্রাম্পের মিথ্যা বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যের সংখ্যা ২০ হাজার অতিক্রম করেছে, তখন উত্তরটি হচ্ছে: অবশ্যই প্রেসিডেন্ট।

কেউ যদি ট্রাম্পকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তবে বুঝতে পারবেন, তার অভ্যাস আছে তাদের আঘাত করার যারা কঠিন ফেডারেল চাকরিটি নৈতিকভাবে করার চেষ্টা করে। তিনি এর আগে এটি করেছেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেসিয়োনস, ডিফেন্স সেক্রেটারি জেমস মাথিস, সাবেক স্টেট সেক্রেটারি রেক্স টিলারসন এবং সাবেক চিফ অব স্টাফ জন কেলিসহ আরো অনেকের ক্ষেত্রেও। প্রতি ক্ষেত্রে ট্রাম্পের লক্ষ্য ছিল দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া এবং ব্যর্থতার ব্যাখ্যা দেয়া থেকে দূরে থাকা।

ফাউসির বিরুদ্ধে করা ক্যাম্পেইনটিও সেসিয়োনস মডেল অনুসরণ করছে। সেসিয়োনসের মতো ফাউসিও চেষ্টা করছেন একজন বিজ্ঞানী হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করার। নিজের কাজের ক্ষেত্রটিকে তিনি নিজের ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন। কিন্তু এখানে সমস্যা তৈরি হয়েছে যখন বিজ্ঞান সরাসরি প্রেসিডেন্টের বিরোধিতা করছে। ফাউসি বিজ্ঞানের ওপর আস্থা রেখেছেন। সেটা হতে পারে টেস্টিং, অতিরঞ্জিত চিকিৎসা কিংবা মহামারীতে দেশের প্রতিক্রিয়া জানানোর উপায়েও। কোনো ক্ষেত্রেই তিনি সত্য বলতে পিছপা হননি।

প্রেসিডেন্টকে খুশি করার চেয়ে মানুষের জীবন বাঁচানোর মিশনকে প্রাধান্য দিয়ে ফাউসি এখন নিজেকে কোণঠাসা অবস্থায় দেখছেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসনিক বিবৃতি প্রদানের সময় এখন তাকে আর নিয়মিত দেখা যায় না। তিনি বলেছেন, দুই মাস ধরে প্রেসিডেন্টকে আর কোনো কিছু ব্যাখ্যা করেননি। গত শুক্রবার ট্রাম্প ফাউসির সম্মানহানি করা বিষয়ে ফক্স নিউজের টক শো হোস্ট সিয়েন হ্যানিটিকে বলেন, . ফাউসি ভালো মানুষ কিন্তু তিনি অনেক ভুল করেছেন।

ট্রাম্পের পর তার সহযোগীরাও মন্তব্যের একটি তালিকা নিয়ে মিডিয়ায় হাজির হন যা হেড অব দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ দিয়েছে এবং পরে সংশোধন করেছে। উদাহরণস্বরূপ মার্চে যখন যুক্তরাষ্ট্রে অল্প কিছু কেস পাওয়া যায় ফাউসি বলেছিলেন, ভাইরাস প্রধান কোনো হুমকি নয় এবং মানুষের সব জায়গায় মাস্ক পরে ঘোরাঘুরির প্রয়োজন নেই। সাংবাদিকদের বেনামে পাপের একটি ক্যাটালগ দেয়া হয়েছিল, এমন কেবল রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে প্রচারের সময় ব্যবহার করা হয়ে থাকে (যদিও হোয়াইট হাউজ সোমবার বলেছে তারা ফাউসির সম্মানহানির চেষ্টা করছে না, যেখানে ট্রাম্প বলেছেন, তাদের দুজনের সম্পর্ক বেশ ভালো)

কিন্তু সেই ক্যাম্পেইনে যে বিষয়টি বলা হয়নি তা হলো, ফাউসির বক্তব্যগুলো যখন সামনে এসেছিল তখন ভাইরাস সম্পর্কে খুব অল্পই জানা গিয়েছিল। দ্রুতই এরপর তিনি তার অবস্থান পরিবর্তন করেন এবং সতর্ক করে বলেছিলেন যে করোনাভাইরাস জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি। সে সঙ্গে আমেরিকানদের তিনি আহ্বান জানান কিছু অভ্যাস গড়ে তোলার। ভাইরাসের বিস্তৃতি রোধের জন্য মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্বের রীতি মেনে চলারও পরামর্শ দেন তিনি। একই সময়ে কিছুদিন আগ পর্যন্তও প্রেসিডেন্ট মাস্ক পরার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এছাড়া তিনি জাদুকরীভাবে ভাইরাসের উধাও হওয়া, ভাইরাসের অসমর্থিত চিকিৎসা এবং জনস্বাস্থ্যের পরামর্শ উপেক্ষা করে শোভাযাত্রায় হাজার হাজার মানুষকে জড়ো করেছেন।

ফাউসি ট্রাম্পের মাঝে পার্থক্যগুলো দেখুন, একজন মানুষ যিনি নিবেদিত সরকারি কর্মচারী। যিনি নিজের সেরা বিশ্লেষণটুকু সামনে এনেছেন এবং যখন নতুন ডাটা পেয়েছেন নিজেকে শুধরে নিয়েছেন কোনো ধরনের দ্বিধা ছাড়াই। অন্যজন বিষয়ে মোটেই উদ্বিগ্ন ছিলেন না এবং সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র যে বৈশ্বিক হটস্পটে পরিণত হয়েছে তাও অস্বীকার করেছেন।

ট্রাম্পের সীমাবদ্ধতাটুকু সামনে এনেছে মহামারী। ফাউসির বিরুদ্ধে করা বাজে মন্তব্যগুলো নিশ্চিত করেছে তার চারিত্রিক ত্রুটির বিষয়গুলোও। ফ্যাক্টের প্রতি দায়বদ্ধতাই ফাউসিকে বিজ্ঞানের প্রতি আজীবন নিবেদিত করেছে। অন্যদিকে ট্রাম্পের নিবেদন কেবল নিজের প্রতি। যা তাকে বারবার ফ্যাক্টের বিরুদ্ধে চালিত করেছে, যা শেষ হয় বিরোধের মাধ্যমে। যেখানে সব ভালো কিছুর দায় নিজে নিয়ে ভুলগুলো অন্যের ওপর চাপিয়ে দেন তিনি।

সিএনএন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন