কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নওগাঁয় আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জেলার আত্রাই, রানীনগর ও মান্দার নয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নওগাঁ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ছোট যমুনা নদী শহরের লিটন ব্রিজে বিপত্সীমার ১৫ দশমিক ২৪ মিটার, মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদীতে বিপত্সীমার ১৮ দশমিক ৬০ মিটার, ধামইরহাট উপজেলার শিমুলতলীতে বিপত্সীমার ২১ দশমিক ১০ মিটার, আত্রাই উপজেলার রেলওয়ে স্টেশন ব্রিজ বিপত্সীমার ১৩ দশমিক ৭২ মিটার, মান্দায় জোতবাজারে আত্রাই নদীতে বিপত্সীমার ১৬ দশমিক ১০ মিটার ও বগুড়ার তালোড়া নাগর নদীতে বিপত্সীমার ১৫ দশমিক ৮০ মিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এতে জেলার মান্দা উপজেলার আত্রাই ও ফকিরনীর নদীতে পানি বেড়ে নদীর উভয় তীরের চকরামপুর বেড়িবাঁধ, কয়লাবাড়ি, বনকুড়া, নিখিরাপাড়া, পারনুরুল্লাবাদ, লক্ষ্মীরামপুর, শহরবাড়ি ভাঙ্গীপাড়া, শামুকখোলসহ প্রায় ২০টি পয়েন্টে ফাটল দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে শামুকখোল নমশূদ্রপাড়া এলাকায় আত্রাইয়ের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকছে। স্থানীয় লোকজন বাঁধটি টিকিয়ে রাখতে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করছেন। গত সোমবার সকাল থেকে চকরামপুর বেড়িবাঁধ ও কয়লাবাড়ি দিয়ে পানি ঢুকে দুটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো এখনই সংস্কার করা না হলে ২০১৭ সালের মতো এবারো বন্যার পানিতে উপজেলার বেশির ভাগ অংশ তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে রানীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের রসুলপুর ও রায়পুর এবং আত্রাইয়ের কালিকাপুর ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ওমর ফারুকের সহযোগিতায় স্থানীয়রা আত্রাই নদীর কৃষ্ণপুর বেড়িবাঁধে বাঁশ ও মাটির বস্তা দিয়ে মেরামতের চেষ্টা করছেন।
বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ২০১৭ সালের বন্যায় চকরামপুর ও কয়লাবাড়ি বেড়িবাঁধ ভাঙার পর আর মেরামত করা হয়নি। নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে গত সোমবার সকাল থেকে পানি প্রবেশ করে চকরামপুর গ্রামের কিছু অংশ এবং কয়লাবাড়ি গ্রামের সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছে। এতে এ দুই গ্রামের ৬০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া জোকাহাটের পূর্বপাশে ব্লক দিয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধটি হুমকির সম্মুখীন অবস্থায় রয়েছে।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল হালিম নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এরই মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া বন্যা মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খান বলেন, কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আত্রাই নদী ও ছোট যমুনা নদীতে পানি বেড়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। আবহাওয়া পরিষ্কার হলে দু-একদিনের মধ্যে পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া যেসব স্থান ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে, সেগুলো পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।