রূপগঞ্জে সিমেন্ট দিয়ে ‘ঢালাই করা ড্রামে’ নিখোঁজ ব্যবসায়ীর মৃতদেহ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অপহরণের তিনমাস পর ব্যবসায়ী হেকমত আলী নামের এক ব্যবসায়ীর মৃতদেহ ড্রামের ভেতরে সিমেন্ট দিয়ে জমাটবাধা মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিকেশন (পিবিআই)। 

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার কাঞ্চনের কুশাবো এলাকার জলাশয়ে ডুবানো দোকান কর্মচারী রফিকুল ইসলামের স্বীকারোক্তি ও দেখানো তথ্য মোতাবেক পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে। নিহত হেকমত আলী পশ্চিম কালাদী গ্রামের মৃত. কদম আলীর ছেলে। তিনি গাউসিয়া মার্কেটে মোটর পার্সের ব্যবসা করতেন। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের সর্বচ্চো শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী।

মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবু সায়েম জানান, চলতি বছরের ৪ এপ্রিল সকালে কাঞ্চন পৌরসভার কালাদী এলাকার মৃত কদম আলীর ছেলে স্থানীয় ভুলতা এলাকার নুর ম্যানশন মার্কেটের মোটর সাইকেল ও গাড়ির পার্টস ব্যবসায়ী হেকমত আলী তার দোকানের ম্যানেজার ও তার আত্মীয় কেরাবো এলাকার ইয়াকুবে ছেলে রফিকুল ইসলাম সবুজের বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে নিজ বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। 

এ ঘটনায় ১৪ এপ্রিল নিখোঁজ ব্যবসায়ীর স্ত্রী রোকসানা বেগম বাদী হয়ে ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম সবুজসহ চারজনকে আসামি করে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তের ভার আসে রূপগঞ্জ থানার এসআই আমিনুল ইসলামের কাছে। তিনি মামলার ভিত্তিতে প্রধান আসামি রফিকুল ইসলাম সবুজকে রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে সবুজ পুলিশের কাছে কোনরকম স্বীকারোক্তি না করায় অপহরণের সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে তাকে আলাদতের মাধ্যেমে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।

মামলার বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অধিক অগ্রগতির জন্য আদালত গত ১৮ জুন পিবিআইয়ের উপর দায়িত্বভার অর্পিত হয়। গত ২৬ জুন মামলাটি তদন্তের জন্য পিআইবির এসআই আবু সায়েমকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি ৩০ মে আদালতের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২ দিনের রিমান্ড আনেন রফিকুল ইসলাম সবুজকে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক হত্যার বর্ণনা। প্রায় ৮৮ দিন পূর্বে ব্যবসায়ী হেকমতকে অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তায় হত্যার পর তাকে একটি তেলের ড্রামে ঢুকিয়ে ড্রামটি সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করে ঢাকা-বাইপাস সড়কের কুশাবো এলাকার একটি পুকুরে ফেলে রাখে হত্যাকারী রফিকুল ইসলাম। 

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রফিকুলের দেখানো মতে সেই পুকুর থেকে ঢালাই করা ড্রামভর্তি লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের পড়নে পাঞ্জাবী ও শরীরের বিভিন্ন অংশ দেখে মামলার বাদী ব্যবসায়ীর স্ত্রী রোকসানা ও পরিবারের অন্যান্যরা নিশ্চিত করে এটা নিখোঁজ ব্যবসায়ী হেকমত আলীর মৃতদেহ।

নিহত ব্যবসায়ী হেকমতের স্ত্রী ও মামলার বাদী রোকসানা আক্তার জানান, দোকানের ম্যানেজার ও তার বোনের ছেলে রফিকুলের সাথে ব্যবসার  টাকা পয়সা নিয়ে প্রায় সময়ই ঝামেলা হতো। টাকা পয়সা আত্মসাতের জন্যই তার স্বামীকে রফিকুল তার সহযোগীদের সহায়তায় হত্যা করেছে।

এ ব্যাপারে পিবিআই-এর পুলিশ সুপার এ আর এম আলিফ হোসেন বলেন, পিবিআই মামলাটির দায়িত্বভার গ্রহণের পর নিষ্ঠারসাথে দায়িত্ব পালন করায় মাত্র এক সপ্তাহে ক্লুলেস একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার নিস্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে রফিকুলের অন্যান্য সহযোগীদের আমরা আটক করতে সক্ষম হবো।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন