ফিকে হয়ে আসবে ডলারের আধিপত্য?

বণিক বার্তা ডেস্ক

একদিকে বিশ্বব্যাপী চাহিদার নিম্নমুখী ধারা, অন্যদিকে মার্কিন অর্থনীতির দুর্দশাগ্রস্ত চিত্র দুইয়ের সম্মিলিত প্রভাবে সামনের দিনগুলোয় বিশ্বব্যাপী ধীরে ধীরে প্রভাব কমতে যাচ্ছে ডলারের। এমনটাই উঠে এসেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের মুদ্রাবাজার বিশ্লেষকদের ওপর পরিচালিত এক জরিপে। তবে বিশ্বব্যাপী করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণের প্রবাহ বয়ে না গেলে তাদের পূর্বাভাস নিশ্চিতভাবেই বাস্তব রূপ নেবে বলে মনে করছেন তারা।

বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় ভয়াবহ, অন্তত সংক্রমণের তালিকায় শীর্ষস্থানে থাকা দেশগুলোর জন্য। সংক্রমণ পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় অর্থনীতি পুনরায় পুরোদমে চালু হয়ে ওঠা সম্ভাব্য পুনরুত্থানের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ার আশঙ্কায় ভুগছে গোটা বিশ্ব। তার পরও আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজার মুহূর্তে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। জুন মাসটি ঊর্ধ্বমুখিতায় শেষ করেছে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক। এর মধ্য দিয়ে গত প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) সূচকটির ঊর্ধ্বমুখিতার হার দাঁড়িয়েছে ১৯৯৮ সালের টেকনোলজি বুমের পর সর্বোচ্চ মাত্রায়।

বাজারে ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু লাভজনক বিনিয়োগের হাতছানি থাকলেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের ইতস্তত মনোভাব তৈরি করেছে মার্কিন অর্থনীতির দুর্বল ভাব। অন্যদিকে ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) ডলারের তারল্য প্রবাহকে রীতিমতো বন্যায় পরিণত করায় মুদ্রাটির বিনিময় হারও এখন পড়তির দিকে। গত মাসেও গ্রিনব্যাকের বিনিময় হার কমেছে প্রায় শতাংশ। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত মুদ্রাবাজারে এটিই ছিল ডলারের সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা দেশটির শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের। অন্যদিকে দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও কোনো সুসংবাদ দিতে পারছেন না নীতিনির্ধারকরা। এর মধ্যেই সোমবার ফেড চেয়ার জেরেমি পাওয়েল আবারো জানালেন, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত।

এর মধ্যেই মুদ্রাবাজারের ৭০-এর অধিক বিশ্লেষক জানালেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারও ধীরে ধীরে আধিপত্য হারাতে চলেছে। এদেরই একজন লন্ডনভিত্তিক এনএবি গ্রুপের এফএক্স স্ট্র্যাটেজিস্ট গ্যাভিন ফ্রেন্ড। তার মতে, ডলারের বিনিময় হার বাড়তে পারে দুটো পরিস্থিতিতে। প্রথমত, যখন দেখা যাবে ঝুঁকি কমতে শুরু করেছে। দ্বিতীয়ত, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুত্থানে চালকের আসনে উঠে আসবে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বলছে, সবকিছুতেই তাড়াহুড়া করতে গিয়ে ভাইরাসের কাছে পরাজিত হতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রকৃতপক্ষে

দেশটি এখন বিশ্বের অন্যদের তুলনায় পিছিয়েই পড়ছে।

বিশ্লেষকদের ৮০ শতাংশ মনে করছেন, আগামী কয়েক মাস বিশ্ব বাণিজ্যে ডলারের অবস্থান বর্তমানের পর্যায়েই থাকবে। সময় মুদ্রাটির বিনিময় হার সামান্য বাড়া বা কমার মধ্যেই থাকবে। পরিস্থিতিতে গ্রিনব্যাক এখন এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে বলে অভিমত তাদের। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগের বাজারে ডলারের পরিস্থিতি বিয়ারিশই (বিক্রয়চাপের কারণে নিম্নমুখী) থেকে যাবে বলে মনে করছেন তারা।

তবে বিশ্বব্যাপী করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণ প্রবাহ বয়ে গেলে ডলারের বিনিময় হার ঊর্ধ্বমুখী হবে বলে মনে করছেন ৯০ শতাংশ। এছাড়া এশীয়, ইউরোপীয় আন্তর্জাতিক ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধের বিষয়টিও মুদ্রাটির গতিপ্রবাহ নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

মার্চের শুরুর দিকে করোনার প্রথম সংক্রমণ প্রবাহের সময়ে ফেড অন্যান্য বৃহৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে মুদ্রা বিনিময়ের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু ওই সময়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অর্থায়নের চাপ অনেকটাই কমে এসেছে। সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে মুদ্রা বিনিময়ের সুযোগও কমেছে নাটকীয়ভাবে। মার্চের পর থেকে এখন পর্যন্ত ছয়টি শীর্ষস্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে গ্রিনব্যাকের শক্তিমত্তা পরিমাপে ব্যবহূত দ্য ডলার ইনডেক্সের পতন হয়েছে শতাংশেরও বেশি।

জরিপে চলতি বছরের শেষ নাগাদ ডলারের বিপরীতে কোন মুদ্রা বেশি শক্তিশালী হবে জানতে চাইলে অধিকাংশ বিশ্লেষক বলেছেন, উন্নত বাজার হিসেবে পরিচিত দেশগুলোর মুদ্রার কথা। বাকিদের অভিমত ছিল দুই ধরনের। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক পণ্যবাজারসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মুদ্রার কথা বলেছে একদল। বাকিদের অভিমত ছিল উন্নয়নশীল বাজারকেন্দ্রিক মুদ্রাগুলোর পক্ষে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন