পুলিশের বিকল্প ভাবছে মিনিয়াপোলিস, কী হতে পারে সেটি?

বণিক বার্তা অনলাইন

বর্ণবাদ যুক্তরাষ্ট্রের গভীরে প্রোথিত এক সংস্কার। বিশেষ করে বিলিয়নেয়ার ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বলতে গেলে তার উসকানিতেই দেশের সর্বস্তরে বর্ণবাদ, জাতিঘৃণা বেড়েছে। বাড়ির পাশে, পার্কে, সৈকতে কালো মানুষ দেখলেই পুলিশ ডাকার ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। এমনকি খোদ পুলিশ বাহিনীতেই এই বর্বর সংস্কৃতি সহিংতায় রূপ নিয়েছে। এই বর্বরতার সর্বশেষ শিকার মিনেসোটার জর্জ ফ্লয়েড। 

পুলিশের নির্যাতনে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুকে উপলক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শুরু হয়েছে বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভ। সেই বিক্ষোভ হোয়াইট হাউসের সীমানা পর্যন্ত ঢুকে গিয়েছিল সম্প্রতি। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ঘণ্টাখানেকের জন্য নেয়া হয়েছিল ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে। কিন্তু প্রেসিডেন্টের উসকানি থেমে নেই। ফলে পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্যের মধ্যেও কোনো অপরাধবোধের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। এমনকি বিক্ষোভকারীদের প্রতি সহিংস আচরণ করার ঘটনা ঘটছে একের পর এক। সম্প্রতি এক বৃদ্ধকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ থেকে শুরু করে বেধড়ক লাঠিপেটার ঘটনাও ঘটেছে।

এই যখন পুলিশের আচরণ তখন এই আইনশৃঙ্খলা বিভাগটিকেই বিলুপ্ত করে দেয়ার কথা ভাবছে মিনিয়াপোলিস নগর কর্তৃপক্ষ।

গতকাল রোববার মিনিয়াপলিস সিটি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট লিসা বেন্ডার সিএনএনকে বলেন, আমরা মিনিয়াপোলিস পুলিশ বিভাগকে ভেঙে ফেলতে একমত হয়েছি। মিনিয়াপোলিসবাসীর জন্য আমরা নতুন মডেলের কমিউনিটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলব। এ প্রস্তাবে কাউন্সিলের ১৩ সদস্যের মধ্যে ৯ সদস্য একমত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।

বেন্ডার আরো বলেন, বর্তমান ব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়েছে। আমাদের কৃষ্ণাঙ্গ নেতাদের কথা শোনা প্রয়োজন। পুলিশ তাদের জন্য কাজ করছে না। 

বেন্ডার জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি পুলিশের তহবিল কমিউনিটিভিত্তিক নীতিতে স্থানান্তর করতে চান। বর্তমান পুলিশ বিভাগকে কীভাবে পুনর্বিন্যাস করা যায়, তা নিয়ে সিটি কাউন্সিল আলোচনা করবে। আর পুলিশ বিভাগ বিলুপ্ত করার  পরিকল্পনাটি সাময়িক নয় বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। 

সিটি মেয়ার পুলিশ বাহিনীর তদারকি করেন ঠিকই কিন্তু বাজেট এবং নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সিটি কাউন্সিলই সর্বেসর্বা। কাউন্সিল চাইলে কোনো বিভাগ বিলুপ্ত করতে, বাজেট কমাতে পারে কোনো নির্বাহী আদেশ জারি করতে পারে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বা ভারতের মতো কেন্দ্রীয় পুলিশ ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রে নেই। সেখানে পুলিশের মহাপরিদর্শক বা আইজি বলে পোস্ট নেই। বা বিসিএসের মতো পরীক্ষার মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসনে চাকরির সিস্টেমও নেই। কোনো অঙ্গরাজ্যে বা সিটি কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় কোনো কর্তৃপক্ষের সরাসরি অধীনে কোনো পুলিশ বিভাগ নেই। এমনকি সিটি কাউন্সিলের পুলিশ বিভাগে রাজ্য সরকারেরও খবরদারি থাকে না। কারণ সেই পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেন মেয়র। তাছাড়া সেই পুলিশের বেতন হয় সিটি কর্পোরেশনের টাকায়। 

যুক্তরাষ্ট্রের একটি সিটি কর্পোরেশনে পুলিশ মেয়রের অধীনে, মেয়র আবার প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষেরও গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ, শেরিফ নির্বাচিত হন প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে। একজন শেরিফের অধীনে থাকে একটা কাউন্টি। একটা কাউন্টিতে বড় একটা এলাকা থাকতে পারে, আবার কেবল একটা শহরও কাউন্টি হতে পারে । আবার সিটিতে শেরিফ থাকতে পারেন। 

পুলিশ বা শেরিফের বাইরে কেন্দ্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলা যেতে পারে এফবিআই। এফবিআই-এরও একটা শাখা আছে পুলিশ নামে। ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা এফবিআই কিন্তু অপরাধী পুলিশকে গ্রেফতার করতে পারে। 

ফলে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কেন্দ্রই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নয়। এখানে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার একটি ব্যবস্থা রয়েছে। এ কারণেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিক্ষোভ নিয়ে কড়া কথা বললেও নির্বাহী আদেশে কিছু করতে পারছেন না। এমনকি সেনাবাহিনী নামানোর কথা বলেও সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ বাহিনীর বাজেট কমানো বা তহবিল প্রত্যাহার করার ঘটনা আগেও ঘটেছে। মিনিয়াপোলিসে কয়েক সপ্তাহ আগেও এটি ভাবনাতীত ছিল। কিন্তু এবার সত্যিই সেটি হতে যাচ্ছে। তবে এর বিকল্প কী হতে পারে সেটি এখনো অস্পষ্ট। কভিড-১৯ মহামারীর কারণে মিনিয়াপোলিস নগর কর্তৃপক্ষ বাজেট সঙ্কটে ভুগছে। পুলিশের বাজেট সেদিকে স্থানান্তর করলে সুবিধাই হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে লস অ্যাঞ্জেলেস ও নিউইয়র্ক মেয়রও এমন ঘোষণা দিয়েছেন। তারা পুলিশের বাজেট কমিয়ে তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি এবং সামাজিক সেবাখাতে স্থানান্তরের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন।

ফিলাডেলফিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, বাল্টিমোর, সান ফ্রান্সিসকো এবং অন্যান্য শহরের কাউন্সিলরাও এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।

তাছাড়া পুলিশের বাজেট বাড়িয়ে তেমন সুফল পায়নি নগর  কর্তৃপক্ষগুলো। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষণ, বডি ক্যামেরা যুক্ত করাসহ ইত্যাদি পদক্ষেপ ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। গত কয়েক বছরে অনেক দেশের তুলনায় মার্কিন পুলিশের হাতে নাগরিক হত্যার ঘটনা বেশি ঘটেছে। বর্ণবাদী আচরণও কমেনি। ফলে পুলিশের বাজেট কমিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, বাসস্থানের মতো জরুরি কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি উঠছে।

দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে জাহাঙ্গীর আলম

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন