করোনার ভয়ে পিছিয়েছে বাঁধ সংস্কার, এবার আতঙ্ক ঘূর্ণিঝড় আম্পানের

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, খুলনা

খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন। জোয়ারের লবণাক্ত পানি আটকাতে বাঁধেই ভরসা তাদের। তবে গেল বছরের সংস্কার করা বাঁধ অনেকখানেই জরাজীর্ণ। এবছর করোনা পরিস্থিতিতে এখনো বাঁধ সংস্কার করা হয়ে ওঠেনি। তবে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের খবরে আতঙ্কে পড়েছে ইউনিয়নটির ১৪টি গ্রামের ২০ হাজার মানুষ।

গোলখালিতে কপোতাক্ষ আর আংটিহারায় শাকবাড়িয়া নদীর ভাঙ্গনের মুখে তারা এখন দিশেহারা। জোয়ারের লবণাক্ত পানি ঢুকে ঘর-বাড়ি, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নষ্ট হওয়ার শঙ্কা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এমন অবস্থার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের খবরে এ এলাকার মানুষ আরও শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, সতর্কতার সাথে ঘরে থাকলে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে, কিন্তু বাঁধ মেরামত বা নির্মাণ না করলে নদী ভাঙন আটকানো কঠিন। তাই কয়রার দক্ষিণ বেদকাশির মানুষ করোনার চেয়ে ভাঙ্গন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তার ওপর আবার ঘূর্ণিঝড়ের আগমনি বার্তা। এতে মানুষজন আরও বেশি উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। কপোতাক্ষ নদের ত্রিমহোনায় গোলখালী মানিক মোল্লার বাড়ির সামনের ১৪/১ পোল্ডারের আওতায় জিরো পয়েন্ট নামে পরিচিত এলাকাটি বেশি ঝুঁকিপুর্ণ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর গত বছরের ১৪ নভেম্বর পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা মশিউল আবেদীন পুরো পোল্ডারের চিত্র ধারণ করেন। কিন্তু এ পর্যন্ত  এখানে কোনো কাজ করা সম্ভব হয়নি। জরুরিভিত্তিক কাজ না করলে পুরা এলাকার ১৪টি গ্রাম লবণ পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে।

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার আতঙ্কিত মানুষ জানান, বিভিন্ন সময় বাঁশ ও বালুর বস্তা দিয়ে কোনোমতে বাঁধটি তারা রক্ষা করে আসছেন। কিন্তু বর্তমানে অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। ভাঙনের ফলে বাঁধের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার মতো অবস্থা নেই। যেকোন সময় এ বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে আশপাশের গ্রাম, জমি ও ফসল। এখন ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে তারা আতঙ্কিত রয়েছেন।

কয়রা উপজেলাবাসীকে ক্রমাগত বাঁক বদলানো কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদী নিঃস্ব করেছে। ভাঙনে বেড়িবাঁধ ধসে গেলে নির্মিত হয়েছে নতুন বাঁধ। এভাবে ৩-৪ বার। ভয়, শঙ্কা নিয়েও নদী তীরে বাস করছে মানুষেরা। বাঁধের বাইরে, বাঁধের ওপরে এবং বাঁধের ভেতরে অসংখ্য বাড়ি-ঘর। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত কয়রার মানুষদের এটাই নিয়তি। বছরের পর বছর কেটে গেছে। কিন্তু এখনও উপকূলীয় কয়রা রয়ে গেছে অরক্ষিত।

গোলখালী গ্রামের বাসিন্দা বাশার আলী মোল্লা বলেন, কপোতাক্ষের ভাঙনে তার পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। বাঁধ ভাঙতে ভাঙতে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানি বাড়লে ঘুম নষ্ট হয় এ এলাকাবাসীর।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, করোনা ভাইরাসে জীবনহানির আশঙ্কার চেয়ে নদী ভাঙনে ঘর-বাড়ি হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন তারা। গত কয়েক বছরের ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছেন এ সব এলাকার পরিবার। তাদের অভিযোগ, ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আবারও ঘূর্ণিঝড়ের আগমণ। এভাবেই আতঙ্ক আর ঝড় জলোচ্ছ্বাসের মধ্যেই কাটছে তাদের জীবন।

বেদকাশি ইউনিয়নের গাজীপাড়া এলাকার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কপোতাক্ষ নদের তীরের বেড়িবাঁধের কোথাও কোথাও মাত্র এক থেকে দেড় হাত মাটি অবশিষ্ট রয়েছে। অবস্থা এতটাই খারাপ, যে কোনো সময় জীর্ণশীর্ণ বেড়িবাঁধ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে প্লাবিত হতে পারে বিস্তীর্ণ এলাকা।

এলাকাবাসী আরও বলেন, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন এলাকায় কপোতাক্ষ নদে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এখন এ এলাকাটি ভাঙন আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে। অনেকেই বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়েছেন।

দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবি শামসুর রহমান বলেন, স্থানীয় মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙ্গণ কবলিত বাধ তাৎক্ষণিক মেরামত করে বড় ধরনের ক্ষতি আটকে দিচ্ছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কথা দিয়েও বাঁধের কাজ না করতে না পারায় আতঙ্ক কমছে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আমাদী সেকশন কর্মকর্তা মশিউল আবেদিন বলেন, কপোতাক্ষ নদের ত্রিমহোনায় গোলখালী বেড়িবাঁধের ভাঙন পুরানো। বর্তমানে খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙন কবলিত এলাকাটি কয়রার শেষ সীমানায়। ভাঙনের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি অচিরেই সমাধান হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন