মের প্রথম সপ্তাহে সংক্রমণের শীর্ষে পৌঁছবে ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারতে নভেল করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) প্রথম রোগী শনাক্ত হয় ৩০ জানুয়ারি। সংক্রমণ ব্যাপক হারে বাড়তে শুরু করে মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে। গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৩৮৭, মৃত্যু হয়েছে ৪৩৭ জনের। তবে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ দেশটিতে করোনা সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছতে পারে বলে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রের বরাতে খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

ভারত সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ আমলা এনডিটিভিকে বলেন, আগামী এক সপ্তাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে করোনা পরীক্ষার হার বাড়ানো হচ্ছে। যাদের নভেল করোনাভাইরাসের লক্ষণ-উপসর্গ থাকবে, তাদের সবাইকে পরীক্ষার আওতায় আনা হবে।

ওই আমলার মতে, ভারত সরকারের ধারণা, সামনের কয়েকটা দিন দেশটিতে কভিড-১৯ শনাক্তের সংখ্যা বাড়বে। যত বেশি পরীক্ষা করা হবে, রোগীর সংখ্যা তত বাড়বে। একই সঙ্গে প্রতিদিনই বাড়বে আইসোলেশনে নেয়া রোগীর সংখ্যাও।

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, করোনার বিস্তার নিয়ে ভারত সরকারের একটি অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন সম্পন্ন করেছে। মূল্যায়নে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে করোনা সংক্রমণের হার দেশটিতে সর্বোচ্চে পৌঁছতে পারে। এর পর থেকে কমতে পারে সংক্রমণের হার। যদিও লকডাউনের প্রভাবে সংখ্যা থাকবে অনেকটাই কম। যেসব রাজ্য প্রথম থেকেই কঠোরভাবে লকডাউন পালন করেছে, সংকট দেখা দিলেও তাদের ওপর প্রভাব অনেকটাই কম হবে।

ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে রাজস্থান, পাঞ্জাব বিহার সবার আগে লকডাউনে গিয়েছিল। এসব রাজ্য করোনা সংক্রমণের বিস্তার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষমও হয়েছে। এর মধ্যে সবার আগে লকডাউন ঘোষণা করেছিল রাজস্থান। সেখানে এখন পর্যন্ত নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে হাজার ৭৬ জনের। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২২১ জন। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, রাজস্থানে এখন পর্যন্ত আইসোলেশনে থাকা রোগীর সংখ্যা সাড়ে সাত হাজার।

পাঞ্জাবে আক্রান্তের সংখ্যা ১৮৬। ২৭ জন সুস্থ ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আইসোলেশনে আছে ১১ হাজারের বেশি মানুষ। বিহারে করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৮০, যার ৩৭ জনই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। রাজ্যটিতে আইসোলেশনে রয়েছে প্রায় ১২ হাজার মানুষ।

বিপরীতে সবচেয়ে দেরিতে লকডাউন ঘোষণা করেছিল উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট মহারাষ্ট্র। এসব রাজ্যে সংক্রমণের হারও বেশি। ভারতে করোনা সংক্রমণে শীর্ষে আছে মহারাষ্ট্র, যেখানে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হাজার ২০৫। আইসোলেশনে আছে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ। ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ মৃত্যুও ঘটেছে মহারাষ্ট্রে, ১৯৪ জন।

উত্তরপ্রদেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৮০৫। পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, সুস্থ হয়েছেন ৫৪ জন। গুজরাটে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩০, মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৭৩ জন। ভারতের অন্য রাজ্যের তুলনায় উত্তরপ্রদেশ গুজরাটে সংক্রমণের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি।

লকডাউন ঘোষণার কার্যকারিতা বা সাফল্যের চিত্র তুলে ধরতে এসব রাজ্যের উদাহরণ টানছে ভারত সরকার। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, লকডাউনের কারণে ভারতে করোনা সংক্রমণ কম হচ্ছে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছলেও তা খুব বেশি মানুষের মধ্যে ছড়াবে না।

তবে সরকারের দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে দিল্লি, অন্ধ্রপ্রদেশ মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্য। সাম্প্রতিক সময়ে এসব রাজ্যে বেড়েছে সংক্রমণের হার। এর মধ্যে দিল্লিতে সর্বশেষ দুই দিনে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৪২৪ জন। মোট আক্রান্ত হাজার ৬৪০ জন। আক্রান্তের সংখ্যায় ভারতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজ্যটি। মৃত্যু হয়েছে ৩৮ জনের।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন