ধন্যবাদ! আপনাকে বহু ধন্যবাদ

আব্দুল্লাহ আহমেদ চৌধুরী মামুন

আবুল হাসানের একটা কবিতা মনে পড়ছেঃ 

ঝিনুক নীরবে সহ

ঝিনুক নীরবে সহে যাও 

ভিতরে বিষের বালি,

মুখ বুঝে মুক্তো ফলাও …” 


ইস্তেহার জারি হয়েছে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সুরক্ষা ব্যাবস্থা নিশ্চিত করে সীমিত (!) আকারে ব্যাংক খোলা রাখতে হবে বিতর্ক করতাম কাজেই সংগায়ন দেই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সুরক্ষা ব্যাবস্থা বলতে মাস্ক, গ্লভস আর স্যানিটাইজার গণ-পরিবহন বন্ধ, কাজেই আপনি ঠিক কিভাবে আসবেন আর যাবেন সেটা কারো মাথা ব্যাথা না, রাস্তায় আইন প্রয়োগ কারী সদস্যদের কেউ কেউ যদি আপনাকে রিক্সা থেকে নামিয়েও দেয় তবুও আপনি হেঁটে চলে আসবেন, কারন আসতে আপনাকে হবেই হাতে গ্লাভস প্রুন, আর মুখে পলিথিন কাপড়ের মাস্ক পরুন, ব্যাগে রাখুন স্যানিটাইজার, নিরাপত্তা আপনার ঠেকায় কে ! সীমিত বলতে সময় কম কিন্তু করবেন প্রায় সবই ! বৈদেশিক বানিজ্য করবেন, নগদ লেনদেন, ডিডি-টিটি, অনলাইন ট্রান্সফার, ব্যাচ, বিএফটিএন, রেমিটেন্স প্রদান সব করবেন, সাথে সাবধানে থাকবেন, করোনা কিন্তু খুব ভয়ংকর সাধু সাবধান, গ্রাহক সেবায় কিন্তু বিঘ্ন ঘটানো যাবে না, গেটে ঢোকার সময় হাতে স্যানিটাইজার দিতে গেলে যদি ঝাড়ি দেয়, তাও কিছু বলবেন না আপনার টেবিল তো আর পাচ ফুট চওড়া না যে তিন ফুট দূরে গ্রাহক বসবেন চেয়ারে বসে মুখ থেকে মাস্ক খুলে কথা বলা শুরু করলে আপনি কিন্তু ভুলেও মাস্ক পরে কথা বলতে বলবেন না, কারন সম্মানিত গ্রাহক তাতে মাইন্ড করেন আপনার ব্যাংকে সব শ্রেনির মানুষ আসেন এবং সবাইকে একই ধরনের সেবা আপনাকে দিতে হয়, কাজেই হাতে গ্লাভস আর মুখে মাস্ক থাকলেই আপনি নিরাপদ কারন ব্যাঙ্কে যারা আসেন তারা করোনা ঝুঁকি মুক্ত কাজেই আপনি নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় আছেন বাড়িতে ফিরে আপনার বয়স্ক বাবা মা , শিশু সন্তান কিংবা পরিবারের অন্যদের নিয়ে চিন্তা করবেন না আপনি যদি ব্যাংকার হয়ে থাকেন তাহলে করোনা ঝুঁকি থেকে আপনি মুক্ত নিজ জীবনের ওপর যদি মায়া অনেক বেশী হয়ে থাকে (জানামতে এটা স্বাভাবিক এবং দোষের কিছু না) এবং যদি নিজ খরচে অতিরিক্ত নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যাবহার করেন তবে কেউ কেউ আপনাকে সার্কাস বলে মজা নিতে পারে ! ব্যাপার না !  

সবচেয়ে জরুরি প্রশ্নটা আসতে পারে এই ভয়ংকর সময়ে আরও বেশ কয়েকটি পেশাজীবি মানুষ সেবা দিচ্ছেন, তাদের কথা কেন আসছে না? তাদের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবী জানাই কিন্তু তাদের সাথে এই হতভাগ্য ব্যাংকার মানুষদের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে পার্থক্যটি ক্ষমতার বুঝেলন না, আসেন চেষ্টা করি  

এই সময়ে সবচেয়ে ঝুকিতে আছেন যারা স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছেন শুধু ডাক্তার আর নার্স না, হাস্পাতালের আয়া, ক্লিনার, বয়, অ্যাডমিন অফিসার সবাই কাজেই তাদের নিরাপত্তা সবার আগে নিশ্চিত করা দরকার এবং টপ প্রায়োরিটি দিয়ে সেটাই করা হচ্ছে সরকার থেকে সবাই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কাজ করছেন তাদের এই বীরত্ব গাঁথা এই দেশ কোনদিন ভুলবে না ! যে কথা বলছিলাম, সাধারন সব শ্রেনীর মানুষদের সেবা দেয়ার কথা ডাক্তার জানেন তাদের কাছে কোন সেবা নেবার জন্য সুস্থ মানুষ আসেন না, কাজেই ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের সেবা দেবার জন্য তাদের প্রস্তুতি থাকে সেভাবেই (আবার অনেকে সেবাই দিচ্ছেন না, হাস্পাতালে আসছেন না, চেম্বার বন্ধ কোন কোন ক্লিনিকের প্রবেশ গেটে নোটিস দেয়া, “ জর, ঠান্ডা কাশি থাকলে এখানে ডাক্তার দেখাবেন না বিষয়ে কথা না বলি ) আবার আমাদের মানসিকতায় ডাক্তারি পেশাটাকে আমরা অনেক বেশি সম্মান দেই, শতকরা  ৯৫ ভাগ ক্ষত্রেই ডাক্তারদের সাথে শ্রদ্ধাশীল আচরন করি কাজেই সেবা প্রার্থীদের ধরন যেহেতু পরিচিত সেহেতু ডাক্তারদের একটা নিজস্ব ধরন আছে সেবা প্রদানের 

আমাদের দেশে সাধারন মানুষের কাছে সবচেয়ে ক্ষমতা শালী সেবা প্রদান কারী সংস্থা হোল পুলিশ এই সময়ে খুব গুরুতপুরন দায়িত্ব পালন করছেন তারা রাস্তায় আছেন, লক ডাউন নিশ্চিত করছেন, ঝুকিতে আছেন ভয়াবহ কিন্তু তাদের গায়ের পোশাক টা এমন যে , এই পোশাক দেখলে করোনা হয়ত পালায় না কিন্তু করোনা বহনকারী মানুষটি পালায় একই কথা সেনা বাহিনীর জন্য এই দেশে যুদ্ধ বিগ্রহ বাধার সম্ভাবনা যেমন কম আবার জাতির যে কোন ক্রান্তিকালে সেনাবাহিনীর অবদান অসীম কিন্তু অই যে, গায়ের জল্পাই রঙের পোশাক, বেসামরিক মানুষকে অজান্তেই নিয়ন্ত্রন করে দেয়  

সংবাদ কর্মীরা দিন রাত ছুটে বেড়াচ্ছেন, ঝুঁকি অনেক হাস্পাতাল থেকে বাজার সংক্রামনের সম্ভাবনা প্রচুর, কিন্তু একটা বুম বা একটা ক্যামেরা যে কতটা শক্তিশালি বা ক্ষমতাধর তা আর নতুন করে ব্যাখ্যার দাবী রাখে না 

ঠিক এখানেই পার্থক্য ব্যাংকারদের কোন ক্ষমতা নেই কারন চাকরির শুরুর দিন থেকেই শেখানো হয়, গ্রাহক হোল লক্ষী, ব্যাংকার সব পক্ষি হাসি মুখে সেবা দাও কোন বাংকারের নামে কমপ্লেইন গেলে আগে সাসপেন্ড পরে তদন্ত ব্যাংকার ভুল করতে পারবে না ভুল চিকিৎসায় মানুষ মারা যেতে পারে , এটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে, কারন এটা ভুল, ভুল পরিকল্পনার কারনে প্রজেক্ট ব্যায় বেড়ে যেতে পারে, ভুল নকশার কারনে ঊড়ালসেতুর পিলার ভেঙ্গে যেতে পারেএকই রাস্তা তিন বার খোঁড়া হতে পারে, কিন্তু ব্যাংকার সারা জীবনে কোন ভুল করতে পারবে না ভুল হলেই সে চোর পরে যদি প্রমান হয় এটা ভুল ছিল , তবুও সে চোর ২০-২২ শতাংশ খেলাপী ঋণ (কারা খেলাপী, কাদের কারনে খেলাপী সে বিষয়ে যাব না), তারমানে ব্যাংকার রা ব্যাংক বেচে দিছে, ব্যাংকার মানেই ঘুষখোর বাকি ৮০-৭৮ শতাংশ ঋণের বিষয়ে কেউ কথা বলেন না, অভিভাবক হিসাবে যে সব প্রতিষ্ঠান আছেন তাদের কারোরই গ্রাহক সেবা দেবার অভিজ্ঞতা নেই, কাজেই পুথিগত বিদ্যা দিয়ে তারা মাঠ পর্যায়ের ব্যাংক নিয়ন্ত্রন করতে যেয়ে ব্রাক্ষন আর শূদ্রের মত একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে , কিন্তু তারপর , আপনি ব্যাঙ্কে আসুন, ৯৫ শতাংশ (কিছু পচা আম সব ঝুড়িতেই থাকে )মানুষ হাসিমুখে সেবা দেবার চেষ্টা করবে 

যে ভদ্রলোক বছরের ৩৬৪ দিন ট্যাক্স এর টাকা জমা দেন না বা দিতে পারেন না তার সুবিধার জন্য রাত ১০টা পর্যন্ত এবং পরের ছুটির দিন তথাকথিত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যে মানুষগুলো প্রতিষ্ঠান খুলে বসে থাকে তাদের নাম ব্যাংকার

ঈদের ছুটি কবে থেকে শুরু হবে তা বছরের শুরু থেকেই ক্যালেন্ডারে দেয়া থাকে টিকিট যোগাড় করা ঈদের সময় একটা যুদ্ধ জয়ের কাজ অথচ হটাত করে ইদের আগের দিন পর্যন্ত ব্যাংক খোলা কারন গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে যে মালিক পুরো মাস জুড়ে বেতনের ব্যাবস্থা করলেন না তার জন্য ইদের আগের দিন রাত ৮টা পর্যন্ত যে মানুষ গুলো বসে থাকেন , তারা ব্যাংকার

নির্বাচন হবে নমিনেশন কিনেছেন যারা, তাদের ঋণ সংক্রান্ত তথ্যের জন্য কর্ম দিবসে রাত ৮টা পর্যন্ত আর ছুটির দিন পুরাটা যে মানুষগুলো বসে থাকে , তারা ব্যাংকার ! নির্বাচনের আগের রাতে যে মানুষগুলো স্কুল-কলেজের বেঞ্চে মশার কামড় সহ্য করে রাত পার করে পরের দিনের নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদের শতকরা আশি ভাগ ব্যাংকার !

ধন্যবাদ মাত্র চার বর্ণের একটা শব্দ আমার চাকুরী জীবন অল্প আমি দেখিনি, অনেকে রিটায়ার করে মারা গেছেন, তারাও জিবদ্দশায় শুনে বা দেখে গেছেন কিনা জানা নেই গারমেন্টন্স খাত অর্থনীতির প্রান , ডাক্তার জীবন বাচায়, পুলিশ নিরাপত্তা দেন, সেনাবাহিনী দেশ রক্ষা করেন, শ্রমিক ভাইরা রেমিটেন্স পাঠান সবাই ধণ্যবাদ পেয়ে থাকেন কারন তাদের কারনেই দেশের অর্থনীতির গাড়ি চলে কিন্তু গাড়ির স্টিয়ারিং যার হাতে তাকে ধন্যবাদ দেবার কি আছে! অনেকটা গাড়ি দুরঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়ে মন্ত্রি মহোদয় বেচে গেছেন , থ্যাংকস গড! ড্রাইভারটার কানের গোঁড়ায় দাও একটা, ব্যাটা বেল্লিক, একটু দেখে চালাবি তো

আবুল হাসানের একটা কবিতা মনে পড়ছেঃ 

ঝিনুক নীরবে সহ

ঝিনুক নীরবে সহে যাও 

ভিতরে বিষের বালি,

মুখ বুঝে মুক্তো ফলাও …” 


আব্দুল্লাহ আহমেদ চৌধুরী মামুন

ব্যাংকার , সাবেক বিতারকিক  


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন