দেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে একজন মানুষও যেন গৃহহীন না থাকে, সে লক্ষ্যে কাজ করার জন্য দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের ওপর একটা দায়িত্ব দিচ্ছি। সেটা হলো কোন লোকটা গৃহহারা আছে, তা খুঁজে বের করা। একটি লোকও বাংলাদেশে গৃহহারা থাকবে না। গৃহহীনদের তালিকা তৈরি করেন। প্রত্যেককে ঘর করে দেয়া হবে।

সরকার প্রযুুক্তিগত উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। শুধু অর্থনৈতিকভাবে না, আমরা প্রযুক্তি শিক্ষাকেও গুরুত্ব দিয়েছি। সারা বাংলাদেশে আজকে আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার, ইন্টারনেট সার্ভিস দেয়া থেকে শুরু করে মোবাইল ফোন সবকিছু ব্যবহার করার সুযোগ করে দিয়েছি। অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার সঙ্গে প্রযুক্তিগত জ্ঞান নিয়ে বাংলাদেশকে একটা সম্মানিত জাতি হিসেবে গড়ে তুলব। সেই সঙ্গে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেয়া হবে না বলেও প্রতিজ্ঞা করেন। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের জন্য রক্ত দিয়ে যারা আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছিল, তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। লাখো শহীদের সেই আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যায় না, বৃথা যেতে দেব নাএটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। এ প্রতিজ্ঞা নিয়েই জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব। মুজিব বর্ষ সফল, সার্থকভাবে আমরা উদযাপন করব।

ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ভাষার অধিকার এটা মানুষের অধিকার। এ অধিকার রক্ষার জন্য ২১ ফেব্রুয়ারি যখন ছাত্ররা মিছিল করে, সেই সময় পুলিশ গুলি চালায়। এ গুলিতেই আমাদের শহীদরা রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার কথা রক্তের অক্ষরে লিখে যান। এ উপমহাদেশে বাংলাদেশ হচ্ছে একটি মাত্র দেশ, যেটা একটা ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র। ইউরোপে অনেকগুলো ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র আছে। কিন্তু এ উপমহাদেশে বাংলাদেশই হচ্ছে প্রথম ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র, যেটা প্রতিষ্ঠা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৮ সাল থেকে তিনি যে সংগ্রামটা শুরু করেছিলেন, সেই সংগ্রামে তার লক্ষ্যই ছিল এ ভূখণ্ডকে স্বাধীন করতে হবে। পাকিস্তানিদের সঙ্গে আর নয়। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নিয়ে তিনি প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতার গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ, তমদ্দুন মজলিস ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সংগ্রাম পরিষদ ধর্মঘট ডাকে। এদিন সচিবালয়ের সামনে থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেক ছাত্রনেতা গ্রেফতার হন। ১৫ মার্চ তারা মুক্তি পান। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় অনুষ্ঠিত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু। মাতৃভাষার দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। বঙ্গবন্ধুকে ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি মুক্তি পান। ১৯ এপ্রিল আবার তাকে গ্রেফতার করা হয়। জুলাই মাসের শেষে তিনি মুক্তি পান। ১৪ অক্টোবর ঢাকায় বঙ্গবন্ধুকে আবারো গ্রেফতার করা হয়। কারাগার থেকেই তার দিকনির্দেশনায় আন্দোলন বেগবান হয়। সেই দুর্বার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শাসকগোষ্ঠীর জারি করা ১৪৪ ধারা ভাঙতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন ভাষাশহীদরা।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমরা আজকে স্বাধীন জাতি। আর সব থেকে সৌভাগ্যের বিষয়, আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করছি। তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, একটা অস্তিত্ব দিয়ে গেছেন। আমাদের ঠিকানা দিয়ে গেছেন, আত্মমর্যাদা দিয়ে গেছেন। আর আওয়ামী লীগ দীর্ঘ এক দশক ক্ষমতায় থাকার ফলে আজকে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সারাবিশ্বের কাছে বাংলাদেশ মর্যাদা পেয়েছে। আমাদের এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে।

আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ডেনভারের অর্থনীতির শিক্ষক অধ্যাপক হায়দার আলী খান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন