চট্টগ্রাম অঞ্চলে কাঠ পাচার

সংরক্ষিত বন ঘিরেই গড়ে উঠেছে অবৈধ করাতকল

দেবব্রত রায়, চট্টগ্রাম ব্যুরো

দেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাঠ পাচারের বিষয় একেবারেই নতুন নয় এতদিন ব্যক্তিপর্যায়ে কাঠ পাচার হলেও এখন কাঠ পাচার হচ্ছে অবৈধ করাতকলের মাধ্যমে আবার এসব করাতকল গড়ে উঠেছে সংরক্ষিত বনকে ঘিরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ধরনের অবৈধ করাতকল আছে অন্তত ৭০০টি বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ এসব করাতকলের কারণে বন উজাড়ের পাশাপাশি বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

বন বিভাগের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম অঞ্চলের আটটি বন বিভাগে মোট করাতকল আছে হাজার ২০০টি এর মধ্যে বন বিভাগের নিবন্ধন রয়েছে ৪৯৫টির বাকিগুলো অবৈধ

পুরো অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি করাতকল আছে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন এলাকায় বিভাগের করাতকল আছে ৪৯৬টি, যার মধ্যে নিবন্ধন আছে ১৯৯টির বাকি অবৈধ করাতকলের মধ্যে বন বিভাগ এখন পর্যন্ত ২২২টি বন্ধ এবং মালিকদের বিরুদ্ধে ১৪২টি মামলা করেছে এসব মামলার মধ্যে বন আদালতে ৭২টির নিষ্পত্তি হয়েছে বাকিগুলো এখনো বিচারাধীন

এদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন এলাকায় করাতকল আছে ৪০২টি এর মধ্যে নিবন্ধন আছে ২২০টির অন্যদিকে উপকূলীয় বনাঞ্চলের গড়ে ওঠা ৭২টি করাতকলের মধ্যে ৬১টি অবৈধ বন বিভাগের উচ্ছেদ নোটিসের বিরুদ্ধে ৩৬টি রিট পিটিশন বিচারাধীন আছে

কক্সবাজারে উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন এলাকায় করাতকল আছে ৯৯টি এর মধ্যে ৮৯টিই অবৈধ কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন এলাকায় বৈধ করাতকল আছে মাত্র ১০টি অথচ এলাকায় অবৈধ করাতকল আছে ৫৯টি ২০১৬-এর অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এলাকার ৩৮টি অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ করা হয়েছে এছাড়া লামা বন বিভাগের আওতাধীন এলাকায় গড়ে ওঠা ৪১টি করাতকলের মধ্যে ১৭টিই অবৈধ

বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পরিমাণ বেশি এমন জায়গায় অবৈধ করাতকল বেশি এই যেমন চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের রামগড়, হাজারীখিল, নারায়ণহাট হাটহাজারী এলাকাজুড়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চল আছে এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বৈধ করাতকল আছে ৩৯টি আর অবৈধ করাতকল আছে ১৭০টিরও বেশি শুধু এক নারায়ণহাট রেঞ্জেই ৯৪টি অবৈধ করাতকল আছে এছাড়া মিরসরাই, বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যানের পাশেও অবৈধ করাতকল গড়ে উঠেছে

বন বিভাগের কাঠ পাচারের ২০১৮ সালের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০০১-০২ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত ১৭ বছরে চট্টগ্রাম উত্তরে বনাঞ্চল থেকে চোরাইপথে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রায় লাখ ৩৬ হাজার ১৬ ঘনফুট সাধারণ কাঠ, লাখ ৭৯ হাজার ৪৩৬ ঘনফুট জ্বালানি কাঠ এবং ৩২ হাজার পিস গুঁড়ি পাচারের সময় জব্দ করা হয় চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিভাগে প্রায় সাত লাখ ঘনফুট কাঠ জব্দ করা হয়েছে তবে সরকারি এই হিসাবের বাইরে কাঠ পাচারের পরিমাণ আরো অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা

বন বিভাগের এক রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান, ট্রান্সপোর্ট পারমিশনে (টিপি) নানা জটিলতার কারণে বনভূমি থেকে কাঠ পাচার বাড়ছে আমাদের নিরাপত্তা সরঞ্জামের অপ্রতুলতা এবং দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে চোরাকারবারিরা কাঠ করাতকলের মাধ্যমে পাচার করছে

তিনি বলেন, সড়কপথে কাঠ পাচার করলে পুলিশ কিংবা প্রশাসনের নজরে এলে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হয় কিন্তু অবৈধ করাতকলে চেরাইকৃত কাঠ চোরাইপথে আনা কিনা, তা শনাক্ত করা যায় না

হাটহাজারীর কাঠ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ এমদাদুল আলম জানান, আমাদের কাঠ ব্যবসায়ের অনুমতিপত্র আছে নিয়মিত আমরা লাইসেন্স নবায়ন করে ব্যবসা করে যাচ্ছি কিন্তু অবৈধ কিছু ব্যবসায়ীর কারণে আমরাও অনেক সময় সমস্যার সম্মুখীন হই নিবন্ধনহীন এসব করাতকল বন্ধ করে দেয়া উচিত

প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের বন সংগ্রাহক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল সরকার বণিক বার্তাকে জানান, সংরক্ষিত এবং রক্ষিত বনাঞ্চলের ভূমি মূল্যবান গাছ রক্ষার্থে নিয়মিত তদারক করছে বন বিভাগ বনের কাঠ পাচার ঠেকাতে বিট রেঞ্জ কর্মকর্তারা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন বনের কাঠ পাচার হয়ে অবৈধভাবে করাতকলে যাচ্ছে, এমন তথ্য আমাদের কাছে আছে আমরা এসব লাইসেন্সবিহীন করাতকল উচ্ছেদ করছি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন