কৈশোর পেরিয়ে যৌবন কিংবা জীবনের পড়ন্ত বেলায় নারীর স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতার বিকল্প নেই। সংবেদনশীলতার হার বেশি হওয়ায় প্রজনন স্বাস্থ্যের ব্যাপারে পুরুষের চেয়ে নারীর বেশি যত্নের প্রয়োজন পড়ে। নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা মুক্তি দিতে পারে বড় ধরনের সমস্যা থেকে। কিন্তু শহর থেকে গ্রাম, সবখানেই যেন উপেক্ষিত আমাদের মা-বোনদের স্বাস্থ্য যত্ন। বিশেষ করে জরায়ুর স্বাস্থ্য নিয়ে গড়িমসির হারটা বেশি।
নারীদের পক্ষ থেকে এ রোগ লুকিয়ে রাখার প্রবণতা যেমন রয়েছে, তেমনি প্রায় অধিকাংশ পুরুষই এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেন না। সুতরাং ফলাফল যেটা হয় সেটা দুঃখজনক। শেষ সময়ে তড়িঘড়ি করে চিকিৎসা। ফলে অনেক ক্ষেত্রে আমাদের শুনতে হয় ‘জরায়ু ক্যান্সার’ নামক সংবাদটি। কিন্তু একটু সচেতনতাই বদলে দিতে পারে দৃশ্যপট। এ উপলক্ষে দেশের হবু ডাক্তারদের সবচেয়ে বড় সংগঠন মেডিসিন ক্লাব কেন্দ্রীয় পরিষদ নিয়েছে উদ্যোগ। তাদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জরায়ুর ক্যান্সার সচেতনবিষয়ক বিশেষ সেমিনার।
সেমিনারে জরায়ু জটিলতায় ভুগছে, এমন রোগীদের প্রাথমিক কিছু পরীক্ষাসহ ডিএনএ পরীক্ষার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় নামমাত্র মূল্যে এ সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে বলেও জানান তারা। বিশেষজ্ঞদের দাবি, জরায়ু ক্যান্সার চিকিৎসা ও প্রতিরোধে এ পরীক্ষাগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখছে। দেশের অধিকাংশ নারী অবহেলা, অনিহা ও লজ্জায় বিষয়টি লুকিয়ে রাখার ফলে পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হচ্ছে না, এমন তথ্যও দেন ডাক্তাররা।
অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ। মেডিসিন ক্লাব কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি মো. আরমান হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী মুশতাক হোসেন, ক্যান্সার এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন, গাইনি অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রোকেয়া আনোয়ার, অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম ও অধ্যাপক ডা. সাবেরা খাতুন।
সেমিনারে বক্তারা আরো বলেন, উঠতি বয়সী কিশোরীদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিতে হবে সব বয়সী নারীর। আমাদের মায়েদের এ ব্যাপারে হতে হবে বেশি যত্নশীল। মূলত কিশোরকাল ও সন্তান গ্রহণের পরের বয়সটায় জরায়ু সমস্যা বেশি দেখা দেয়। যদি ডিএনএ বা অন্য পরীক্ষাগুলো করা হয়, তাহলে সমাধান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সমস্যা দেখা দিলে কোনো সংকোচ না করে পরীক্ষা করে চিকিৎসা নেয়ার ব্যাপারে তাগিদ দেন বক্তারা। এছাড়া জরায়ু ক্যান্সারের জন্য আর কোনো মা-বোনের জীবন বিপন্ন না হয়, সেজন্য সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা।
ক্লাবের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ডা. উম্মে কানেতার তত্ত্বাবধানে সম্মেলনে মেডিসিন ক্লাবের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন ইউনিটের উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের মেডিসিন ক্লাব ইউনিটের সদস্য এ সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।