৮৪ পোশাক কারখানার ইউডি সেবা স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

৮৪টি পোশাক কারখানার ইউটিলাইজেশন ডিকলারেশন (ইউডি) সেবা তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় অধীনস্থ কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে আসা পোশাক শিল্প মালিক সংগঠন বিজিএমইএর পাঠানো এক চিঠিতে স্থগিতাদেশের বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।

জাতীয় উদ্যোগের আওতায় ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৫৪৯টি কারখানায় প্রাথমিক মূল্যায়ন করা হয়। যার আওতায় কারখানাগুলোয় স্থাপত্য, অগ্নি, বৈদ্যুতিক বিষয়ক সুনির্দিষ্ট সংস্কার কার্যক্রমের সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে অনেক কারখানা এখন পর্যন্ত কোনো সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করেনি এবং অধিদপ্তরে সংস্কারকাজ সম্পাদনের জন্য ড্রয়িং-ডিজাইন জমা দেয়নি।

কারখানাগুলোর অনগ্রসরতার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর সেপ্টেম্বরে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ১৫তম জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কমিটির (এনটিসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে এসকেলেশন প্রটোকল অনুমোদন করা হয়। ওই প্রটোকল অনুসরণের চতুর্থ ধাপে যে কারখানা সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করবে না, সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের ইউডি সেবা প্রদান স্থগিত রাখার বিষয়ে বলা হয়।

এনটিসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সম্প্রতি পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে তাদের সদস্য মোট ১৮৯টি কারখানায় তিন মাসের জন্য ইউডি সেবা স্থগিত রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। এর মধ্যে বিজিএমইএকে তাদের ১৪৩টি কারখানার সেবা স্থগিতের চিঠি দেয়া হয় গত ৫ ডিসেম্বর। এ পরিপ্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই শেষে ৮৪টি কারখানার ইউডি সেবা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো, যা গতকাল এক চিঠির মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে ডিআইএফইকে।

স্থগিতাদেশ প্রসঙ্গে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে (ডিআইএফই) বিজিএমইএর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, সদয় দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক জানানো যাচ্ছে যে, জাতীয় উদ্যোগের আওতায় মূল্যায়ন করা কারখানাগুলোর সংস্কারকাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে বিজিএমইএ ১৪৩টি কারখানার মধ্যে ৮৪টি কারখানার ইউটিলাইজেশন ডিকলারেশন (ইউডি) ইস্যু সাময়িকভাবে তিন মাস স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কারখানাগুলো ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে অবস্থিত। এ চিঠির অনুলিপি সংশ্লিষ্ট ৮৪ কারখানার মালিকরাসহ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবকেও দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, ২০১৯ সালে ইউডি পরিস্থিতি বলছে ১৪৩টির মধ্যে ৫৪টি কারখানা এ সেবা নেয়। আলোচনা না করে তাদের ইউডি আমরা বাতিল করতে পারি না। স্থগিত করা ৮৪টির মধ্যে ৪৯টি বিজিএমইএ থেকে ইউডি সেবা নেয় না। বাকি ৩৮টি কারখানা বন্ধ। রানা প্লাজা অভিজ্ঞতার ছয় বছরেও যারা মৌলিক প্রয়োজন পূরণ করে না, তারা বিবেচনায় আসতে পারে না। আর স্থগিতাদেশ হলো প্রথম ধাপ।

গত বছরের জুনেও সংস্কার কার্যক্রমের গড়িমসি ও অনগ্রসরতায় ইউডি সেবা স্থগিতের তত্পরতা ছিল। ওই সময় বিজিএমইএর ৫১টি ও বিকেএমইএর ৭৩টি কারখানার বিরুদ্ধে সেবা স্থগিতের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়।

উল্লেখ্য, তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানাগুলোকে রফতানি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর কাছ থেকে কাঁচামাল ব্যবহারের উপযোগিতা সনদ নিতে হয়, যা ইউডি সেবা হিসেবে পরিচিত। আর ইউডি সনদ না থাকলে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে না কোনো কারখানা।

রানা প্লাজা ধসের পর জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কর্মপরিকল্পনার (এনটিপিএ) আওতায় অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স ও জাতীয় উদ্যোগে শুরু হয় পোশাক কারখানা মূল্যায়ন কার্যক্রম। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক দুই জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের আওতাধীন কারখানাগুলোর ৮৫ শতাংশ ত্রুটি সংস্কার হলেও জাতীয় উদ্যোগের আওতায় শতভাগ সংস্কার সম্পন্ন করেছে ১ শতাংশেরও কম কারখানা। এর মধ্যে একাধিক সতর্কতা জারির পরও সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি নেই এমন কারখানার বিরুদ্ধে প্রাথমিক ব্যবস্থা হিসেবে ইউডি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

যে কারখানা সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেনি বা যাদের অগ্রগতি ২০ শতাংশের নিচে, তাদের এসকেলেশন প্রটোকলের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করে সংস্কার কার্যক্রম তদারক করেছে ডিআইএফই। এক্ষেত্রে যেসব কারখানার সংস্কারকাজ একেবারেই নগণ্য, সেগুলোর ইউডি ইস্যু না করার জন্য বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে বলা হয় গত বছর।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন