দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বোর্ডিং স্কুল!

সাইফ সুজন, সিলেটের জাফলং থেকে ফিরে

শিক্ষা সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য জাফলং ভ্যালি বোর্ডিং স্কুলে শ্রেণীকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বেশকিছু ক্লাব। ভাষা শেখার জন্য ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, গণিতচর্চার জন্য ম্যাথমেটিকস ক্লাব, সাহিত্যচর্চায় লিটারেচার ক্লাব এবং প্রযুক্তিশিক্ষার জন্য রয়েছে কম্পিউটার ক্লাব

সম্মুখে ভারতের মেঘালয়ের সারি সারি পাহাড়। দুই পাশে সবুজ টিলা। পেছনে খোলা প্রান্তর। মুগ্ধ করা পরিবেশে গড়ে উঠেছে জাফলং ভ্যালি বোর্ডিং স্কুল। সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের পাশেই জৈন্তাপুরের শ্রীপুর এলাকায় ১৫০ একর জমির ওপর বোর্ডিং স্কুলটির সুবিশাল ক্যাম্পাস।

দেশের প্রথম একমাত্র বোর্ডিং স্কুলের যাত্রা ২০১৮ সালে। আয়তনের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বোর্ডিং স্কুল এটি। ক্যাডেট কলেজের আদলে নির্মিত সম্পূর্ণ আবাসিক শিক্ষালয়ে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞান-প্রযুক্তি কারিগরিনির্ভর জ্ঞান অর্জনেও পাঠ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

গত সোমবার স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, স্থাপত্যশৈলীর নান্দনিক সৌন্দর্যে সবুজ টিলার বুকে গড়ে তোলা হয়েছে একাডেমিক ভবন, হোস্টেল ডরমিটরি। একাডেমিক ভবনে মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তির ব্যবহারে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। বিষয় অনুসারে নিশ্চিত করা হয়েছে ল্যাব সুবিধা। নিবিড় অধ্যয়নের জন্য রয়েছে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সভা কিংবা সেমিনারের জন্য রয়েছে মাল্টিপারপাস কক্ষ। আবাসন সেবার মানও বেশ ভালো। খেলার জন্য রয়েছে ছয়টি বিশাল আয়তনের মাঠ। রয়েছে ইনডোর গেমসের ব্যবস্থাও।

দেশের ১৪ জন রাজনীতিক-ব্যবসায়ী-শিক্ষাবিদ মিলে প্রতিষ্ঠা করেছেন অপরূপ বোর্ডিং স্কুল। বিদ্যাপীঠের মূল লক্ষ্য হলো জ্ঞানের সঙ্গে নৈতিকতার সমন্বয় ঘটিয়ে নেতৃত্বের গুণাবলিসম্পন্ন দক্ষ দেশপ্রেমিক আলোকিত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলা।

বোর্ডিং স্কুলটিতে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। জাতীয় পাঠ্যক্রমের অধীনে ইংলিশ মাধ্যমে পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে এখানে। বিজ্ঞান, ব্যবসায় মানবিক তিন শাখা চালু রয়েছে। শিক্ষালয়টির বর্তমান ছাত্রসংখ্যা ১১৯। যদিও ৯৫০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান থাকার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। শিক্ষার্থীদের পাঠদান প্রশিক্ষণের জন্য রয়েছেন ২১ জন শিক্ষক। এর মধ্যে অধ্যক্ষসহ তিনজন ভারতীয় নাগরিক।

এখানকার শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই সিলেটের। তবে ঢাকাসহ অন্যান্য জায়গা থেকেও পড়তে আসছে অনেকে। এমনই একজন ঢাকার উত্তরার ওয়াসিফ আলী। সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী থাকে ডরমিটরির ১০১ নম্বর কক্ষে। এখানে কেমন লাগছে? এমন প্রশ্নের জবাব দেয় এভাবে, ‘এখানে সূর্যের আলোতে ঘুম ভাঙে। সবুজের মাঝে বাস করছি, পড়ছি, খেলা করছি। সব মিলিয়ে অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে। মা-বাবাকে মিস করি। কথা বলতে চাইলে সেই সুযোগ পাওয়া যায়। তারা দেখতেও আসেন। এখানে শিক্ষকরা খুব কেয়ার করেন। বন্ধুরাও খুব আপন করে নিয়েছে।১০৩ নম্বর রুমে গিয়ে কথা হয় অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শাহীদুল ইসলাম মাহবুবের সঙ্গে। সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে সে জানায়, ‘আমরা একেক রুমে চার-পাঁচজন থাকি। সবার জন্যই আলাদা খাট, টেবিলসহ অন্যান্য আসবাব রয়েছে। নম্বর ডরমিটরি আবার পদ্মা, মেঘনা, সুরমা কুশিয়ারা চার ভাগে বিভক্ত। কথা হয় কুশিয়ারার হাউজ মাস্টার এমরান হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম। বিভাগে ফ্লার্স্ট ক্লাস পেয়ে তৃতীয় হয়েছিলাম। এখন স্কুলে শিক্ষকতা করছি। অন্য শিক্ষকরাও মেধাবী দক্ষ। শিক্ষার্থীদের যেকোনো সমস্যায় পাশে থাকার চেষ্টা করি। স্কুলটির নিয়মকানুন ব্যবস্থাগত পদ্ধতি এতটাই উন্নত যে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা নিয়ে নিজেকে ভাবতে হয় না। নিয়মের মধ্য থেকেই সে প্রস্তুত হয়ে ওঠে।

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন