ক্লাস, পড়াশোনা, গবেষণা, নতুন মানুষদের সঙ্গে পরিচয়, নতুন নতুন বিষয় শেখা, আড্ডা, গান, বিতর্ক, অস্থায়ী চাকরিসহ কত কিছুই না করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। ভর্তির কয়েকদিন পর থেকেই শুরু হয়ে যায় শিক্ষক, সিনিয়রসহ চারপাশের মানুষদের নানা উপদেশ। শিক্ষার্থীরাও ডুবে যায় ক্লাস-অ্যাসাইনমেন্ট ও পড়াশোনায়। সিজিপিএর দৌড়ে এগিয়ে থাকতে চলে রাত-দিন প্রস্তুতি। পরিবার থেকেও আসে ‘ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়ার’ চাপ।
তবে একটি
ভালো সিজিপিএ ও কয়েকটি রেফারেন্স লেটারই শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যবান জিনিস নয়।
এগুলোর সঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিজেকে গড়ে তোলা। বিশ্ববিদ্যালয় হলো
জীবনের ‘কাজ’ শুরু করার পূর্ববর্তী ধাপ। আমি কী হতে
চাই, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরে কী করব, নিজেকে কোথায় দেখতে চাই—এটা ঠিক করা এবং সেই অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তোলার জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয় এমন
একটি জায়গা, যেখানে নিজেকে আবিষ্কার করার সুযোগ করে
দেয়।
আমাদের
দেশে উচ্চতর স্তরে পড়াশোনায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার
ইচ্ছা থাকে। কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনার উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে, এমন শিক্ষার্থী খুব কমই দেখা যায়। পছন্দের
বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো একটা বিষয়ে সুযোগ পেলেই মহাখুশি হয়ে যায়। এ ধরনের মনোভাব
উন্নত দেশগুলোয় দেখা যায় না। পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে তাদের লক্ষ্য থাকে
পছন্দের বিষয়ে পড়াশোনা করা। ওই বিষয়ে পড়াশোনা করে তারা সংশ্লিষ্ট খাতেই জীবনের কাজ
বা ব্যবসা খুঁজে নেন।
জীবনে
সফল হওয়ার ক্ষেত্রে পছন্দের বিষয়ে পড়াশোনা করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে সেটা
পড়াশোনাতেও মনোযোগী হতে সহায়তা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার বিষয় নির্ধারণ করতে
আপনাকে দেখতে হবে নিজের সঙ্গে উপযুক্ত একটি বিষয়। এই বিষয়টিতে পড়াশোনায় আপনার লক্ষ্য
কী, সেটাও ভেবে নিতে হবে। আপনার সঙ্গে মানানসই একটি বিষয়
নির্ধারণ করে নিজের লক্ষ্য ঠিক করে নিতে হবে। আপনার লক্ষ্যের সমমনা ব্যক্তিদের
সঙ্গে একটি যোগসূত্র তৈরি করতে হবে এবং নিজের ভুল থেকে নিজেকে শিখতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বদা অন্বেষণ করতে হবে,
যা আমাদের জ্ঞানকে
প্রসারিত করবে এবং সম্পূর্ণ নতুন কিছুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে।
আপনার
আকাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ারের প্রবেশদ্বার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবহার করা
গুরুত্বপূর্ণ। তবে শুধু সেটাতেই মনোনিবেশ করে থাকা বোকামি। বিশ্ববিদ্যালয় হলো
নিজেকে ও বিশ্বকে নতুন করে আবিষ্কার করার একটি ভালো জায়গা। প্রাণবন্ত সামাজিক জীবন
পেতে আপনি আপনার কাছাকাছি মানুষদের সঙ্গে সময় কাটান। আপনার অভ্যাসের ওপর গুরুত্ব
সহকারে নজর রাখুন এবং সময় নষ্ট বন্ধ করুন। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে দিন শুরু করুন।
আমরা সবাই একটি সাধারণ লক্ষ্যে কাজ করছি,
তা হলো নিজেকে
অনুসন্ধান করা।
আপনার
পড়াশোনার কোন পদ্ধতিটি বেশি কার্যকর,
ক্যাম্পাসের কোন
জায়গায় বেশি কার্যকর থাকেন,
দিনের কোন সময়টা
নিজেকে বেশি স্পন্দিত করে, কোন ক্লাসগুলো নিজের মধ্যে আলোড়িত করে, নিজেকে সর্বাধিক কার্যকর করে—এমন পরিবেশ খুঁজে বের করুন।
এ বিষয়ে
নিউ ব্রান্সউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট পল মাজারোল বলেছেন, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি এবং পুরনো জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে
ভবিষ্যেক বদলে দেয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য আশ্চর্যজনক স্থান।
সুতরাং
আপনি কে এবং কী হতে চান, তা আবিষ্কারের প্রক্রিয়াটা উপভোগ করুন।
আপনার কৌতূহলগুলো অন্বেষণ করুন,
আগ্রহগুলো চিহ্নিত
করুন, জীবনের অর্থ খুঁজুন আর সাহসী হয়ে উঠুন।