এশিয়া-প্যাসিফিক কনফারেন্সের সুপারিশ

আঞ্চলিক সহযোগিতায় গুরুত্ব দিয়ে গড়তে হবে শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক

এশিয়া ও প্যাসিফিকের আর্থিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করা প্রয়োজন। আঞ্চলিক সহযোগিতায় গুরুত্ব দিয়েই শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আঞ্চলিক অংশীদারিত্ব জোরদার করে সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। গতকালদি এশিয়া-প্যাসিফিক কনফারেন্স অন ফিন্যান্সিং ইনক্লুসিভ অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক সম্মেলনের সমাপনী সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু চলমান তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের পর্দা নেমেছে গতকাল। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত সম্মেলনে জড়ো হয়েছিলেন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চার শতাধিক প্রতিনিধি। তারা আলোচনা করেছেন আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং টেকসই উন্নয়নের বিভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে। এসব আঙ্গিক নিয়ে একাধিক অধিবেশনে আলোচনা শেষে কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ উঠে এসেছে। আয়োজকরা জানিয়েছেন, তিনদিনের এ আলোচনা থেকে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি নিশ্চিত করতে জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নের দিকনির্দেশনা পাওয়া গেছে।

আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের (আইসিসি) শতবর্ষ ও আইসিসি বাংলাদেশের (আইসিসিবি) ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সম্মেলনে পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। আয়োজকদের মধ্যে আইসিসি বাংলাদেশ ছাড়াও ছিল জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোস্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক (ইউএনএসকাপ), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ট্রেড ফিন্যান্স প্রোগ্রাম (টিএফপি) ও লন্ডন ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্স। গতকাল সম্মেলনের আলোচনার ফলাফল সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সম্মেলনে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি বিষয় বিশেষভাবে আলোচিত ছিল। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও টেকসই উন্নয়নের জন্য উদ্ভাবনী নীতি ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। এছাড়া আলোচকরা পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়েছেন। উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো অর্থায়নে আলাদা তহবিল গঠন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করা, বাণিজ্যে অর্থায়ন, এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের সহজে ব্যবসা করা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় অর্থায়ন এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহজে পুঁজির ব্যবস্থা করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে সম্মেলনে।

আলোচনায় দেশী-বিদেশী বক্তারা বেশকিছু সুপারিশ করেছেন বলে জানান মাহবুবুর রহমান। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সহজ অর্থায়নে নীতি সংস্কার করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা লাগবে। নতুন অর্থায়ন ব্যবস্থা বের করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। দারিদ্র্য দূর ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় টেকসই ডিজিটাইজেশন লাগবে। প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের (এফডিআই) জন্য তথ্য পাওয়া সহজ করতে হবে। সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। পিপিপি জোরদার করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। আর্থিক প্রযুক্তি উন্নত করতে হবে।

সমাপনী সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যের শেষে বলা হয়, সম্মেলনে আলোচনায় একটি বিষয় পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। সেটি হলো এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রয়োজন এবং এর গুরুত্ব রয়েছে। তাই বিভিন্ন চ্যানেলে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি আলোচকরা অনুরোধ জানান সম্মেলনে।

আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে না কেন? এবং এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো কী এমন প্রশ্নের উত্তরে আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, বেসরকারি খাত কর-ভ্যাটের মাধ্যমে রাজস্ব হিসেবে সরকারকে অর্থ দিতে পারে। অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করতে হবে। দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা সরকারের সঙ্গে কাজ করার সামর্থ্য রাখে।

এসকাপের উন্নয়ন অর্থায়ন বিভাগের প্রধান টেনটিপ সুভানিজ বলেন, উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে জরুরি বিনিয়োগ। এজন্য সব খাতের উদ্যোক্তাদের সহজ অর্থায়ন ব্যবস্থা দরকার। দরকার প্রচুর তহবিলেরও।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন