‘দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই গুলশান হামলা’

বণিক বার্তা অনলাইন

দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই রাজধানীর গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা চালানো হয়েছে বলে বিচারক তার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন।

আজ বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) এ মামলার রায়ে আট আসামির মধ্যে সাত জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মামলার অপর এক আসামির সংশ্লিষ্ঠতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেয়া হয়েছে।

হোলি আর্টিজান হামলাকে ‘জঘন্য ঘটনা’ উল্লেখ করে আদালত বলেছেন, ‘জঙ্গিরা এদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য এবং এদেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার নাম করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’

পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, এ ঘটনার মাস্টার মাইন্ড তামিম চৌধুরী ও তার সহযোগীদের পরিকল্পনা মাফিকই এ হামলা করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই আইএসের বরাত দিয়ে তারা দায় স্বীকার করেছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তে এদেশে আইএসের কোন অস্থিত্ব পাওয়া যায়নি। মূলত আিইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।

এর আগে আজ বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে প্রিজন ভ্যানে কারাগার থেকে তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। রায়কে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণসহ রাজধানী ঢাকা ও সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আদালত চত্বর ও এর আশপাশে এলাকায় র‌্যাব, পুলিশ ও সাদা পোশাকের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নজরদারিতে রেখেছেন।

এছাড়া রাজধানী ঢাকায় পুলিশ-র‌্যাবের সমন্বয়ে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি রোডে পথচারী চলাচল সীমিত করা হয়। একই সঙ্গে আদালতে প্রবেশদ্বারে বসানো হয় র‌্যাব ও পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলা চালিয়ে বিদেশী নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। পরে অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। ওই ঘটনায় পরে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করে পুলিশ।

গত ১৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণা জন্য আজ ২৭ নভেম্বর (বুধবার) দিন ধার্য করেন।

মামলা করার পর ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক হুমায়ুন কবির। একই বছর ২৬ নভেম্বর ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

মামলার আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ।

এছাড়া বিভিন্ন অভিযানে ১৩ জন নিহত হওয়ায় মামলা থেকে তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়।

হলি আর্টিজানে সেনাবাহিনীর অপারেশন থান্ডারবোল্টে নিহত পাঁচ হামলাকারী হলেন- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।

এছাড়া এ মামলায় আসামিদের মধ্যে বিভিন্ন ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানে আটজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন- তামিম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন