ডিএসসিইর সেমিনার

উদ্যোক্তা ও এসএমই-নির্ভর হবে দেশের অর্থনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে প্রতি বছর ২০ লাখের বেশি যুবশক্তি শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। তবে সে অনুসারে সরকার ও বেসরকারি খাত তাদের চাকরি দিতে পারছে না। এতে সমাজে বেকারত্ব ও আয়বৈষম্য বাড়ছে। এজন্য চাকরির বিকল্প হিসেবে যুবশক্তিকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। দেশে যে কর্মহীনতার ঝুঁকি বাড়ছে, সেটি প্রতিরোধ করতে পারে উদ্যোক্তা। আর সামনের দিনে দেশের অর্থনীতি হবে উদ্যোক্তা ও এসএমই-নির্ভর।

শুক্রবার রাজধানীর ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকস (ডিএসসিই) ক্যাম্পাসে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ অ্যান্ড দি ইজ অব ডুয়িং বিজনেস শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে ডিএসসিই ও  উদ্যোক্তা অর্থনীতি ক্লাব। উদ্যোক্তা অর্থনীতি বিভাগের সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিআইবিএমের অধ্যাপক হেলাল আহমেদ চৌধুরী, ভারতের গ্লোবাল অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ গ্রিডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ভোলানাথ দত্ত, ঢাকা স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক রেহানা পারভীন ও সারাহ তাসনীম। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ এ মামুন।

আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর যে পরিমাণ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে, তাদের সবার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের সামনে সুযোগ রয়েছে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠার। কিন্তু দক্ষতা, অর্থ ও পরিবেশের অভাবে তারা উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে কাঠামোগত ও আইনগত নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তাই দেশের উন্নয়নের স্বার্থে প্রতিবন্ধকতা দূর করে ব্যবসার পরিবেশ (ইজ অব ডুয়িং বিজনেস) সহজ করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে বাংলাদেশের অবস্থান পেছনের সারিতে। বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮তম। এ সূচকে উন্নতি করতে হবে। তরুণদের সহায়তা করতে স্টার্ট-আপ তহবিল গঠন করতে হবে।

অধ্যাপক মুহম্মদ মাহবুব আলম বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ব্যবসায় ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। নানা পর্যায়ের দুর্নীতি উদ্যোক্তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে, দুর্নীতির টাকায় ক্যাসিনো গড়ে উঠছে। কিন্তু উদ্যোক্তারা তহবিল সংকটে ভুগছেন। আইনি জটিলতায় ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এসব আইনি জটিলতা অপরাধ কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করছে, প্রকৃত উদ্যোক্তাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দেশে নতুন নতুন উদ্যোক্তা গড়ে তুলতে হলে অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধের পাশাপাশি ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে হবে। এজন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।

হেলাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ব্যবসা করতে হলে তহবিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক্ষেত্রে দেশের ব্যাংকগুলো তহবিল জোগানের অন্যতম উৎস। তবে উদ্যোক্তা হওয়ার আগে যাবতীয় বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকা অত্যাবশ্যক। আর নীতিনির্ধারকের উচিত তরুণদের তহবিলের ব্যবস্থা করা, তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। 

অধ্যাপক ভোলানাথ দত্ত বলেন, ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা ও স্বচ্ছতার অভাবে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়। দুর্নীতির কারণে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি। সুশাসন না হলে সব পর্যায় থেকে সবাই সমভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন