পিআরআই-আইএফসির ডায়াগনস্টিক স্টাডি প্রতিবেদন

নীতি প্রয়োগ কাঠামো দক্ষ নয় বাংলাদেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায় সেবা দেয়ার প্রক্রিয়া জটিল ও পুরনো। সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ও দুর্বল। আবার অপর্যাপ্ত সক্ষমতার পাশাপাশি আছে পদ্ধতিগত ঘাটতি। এছাড়া তথ্য স্বচ্ছতা যেমন কম, তেমনি অংশীদারিত্বমূলক অংশগ্রহণের চর্চা না থাকাসহ আছে নানামুখী অনিশ্চয়তা। বাংলাদেশের নীতি প্রয়োগ কাঠামো নিয়ে করা এক ডায়াগনস্টিক স্টাডিতে এ চিত্র দেখতে পেয়েছে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) ও বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)

গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলেঅ্যাজাইল রেগুলেটরি ডেলিভারি ফর ইমপ্রুভড ইনভেস্টমেন্ট কম্পিটিটিভনেস: কারেন্ট স্টেট অ্যান্ড পলিসি অপশনস শীর্ষক প্রতিবেদনটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম ও আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ অ্যান্ড পার্লামেন্টারি অ্যাফেয়ার্স ডিভিশনের সিনিয়র সেক্রেটারি মোহাম্মদ শহীদুল হক।

অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন পিআরআই নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। সূচনা বক্তব্য রাখেন আইএফসি বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের কান্ট্রি ম্যানেজার। প্রতিবেদনটির ওপর পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন আইএফসির সিনিয়র ইকোনমিস্ট ড. এম মাশরুর রিয়াজ ও আইএফসির সিনিয়র প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিস্ট মিয়া রহমত আলী। ডেজিগনেটেড প্যানেলিস্টদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের প্রোগ্রাম লিডার ড. ইউতাকা ইয়োশিনো ও পিআরআই ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদ। প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু নিয়ে মত প্রকাশ করেন হেড অব ডিএফআইডি বাংলাদেশ ও বিশ্ব ব্যাংকের প্র্যাকটিস ম্যানেজার রলফ্ বেহরনড।

প্রতিবেদন নিয়ে পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের শুরুতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রশংসা করে বলা হয়, এক দশক ধরে অন্তর্ভুক্তিমূলক শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি ৬ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে রেখেছে বাংলাদেশ। বাণিজ্য ও জিডিপি অনুপাত ১৯৯০ সালে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ থাকলেও ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩৮ শতাংশ। জিডিপিতে ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের অবদান ১৩ থেকে ১৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে ১৯৮১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে।

বাংলাদেশের অগ্রগতির পথকে আরো প্রশস্ত করতে বেসরকারি বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রেজেন্টেশনে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের চেয়েও কম। জিডিপিতে এফডিআইয়ের অংশ মাত্র ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, যেখানে ভিয়েতনামে এই অংশ ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। অবকাঠামো খাতে ৩৬০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ তারতম্য রয়েছে। ৭২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন জ্বালানি খাতে, ৩৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন পানি খাতে এবং ৯১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন পরিবহন খাতে।

বাংলাদেশের কর্মসংস্থান পরিস্থিতি নিয়ে পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে উল্লেখ করা হয়, দেশের ১০ কোটি ৩০ লাখ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ কোটি ২৮ লাখ কর্মসংস্থানে নিয়োজিত। যদিও প্রতি বছর শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে ২২ লাখ মানুষ। রফতানিমুখী অর্থনীতি হলেও বাংলাদেশের রফতানি খাতের উন্নয়নে ও এ খাতে বৈচিত্র্যময় করার অগ্রগতি সীমিত বলে বর্তমানে ভ্যালু চেইন বা সরবরাহ ব্যবস্থায় অংশীদারিত্বের হার ৩৮ শতাংশ উল্লেখ করা হয় উপস্থাপনায়।

স্টাডির প্রেক্ষিতে গতকাল বেশকিছু নীতি সুপারিশও করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে আছে সরকার পক্ষ থেকে ব্যবসা (জিটুবি) সংক্রান্ত সেবার স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) নির্ধারণ। আইসিটিভিত্তিক সমন্বিত জিটুবি সেবা কাঠামো উন্নয়ন, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি উন্নয়ন, ঝুঁকিভিত্তিক অনুমোদন ও পরিদর্শন ব্যবস্থা উন্নয়ন, নীতিনির্ধারিত কাঠামো-সংক্রান্ত বিষয়গুলোর অনলাইন তথ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যমান কাঠামোর হালনাগাদ পর্যালোচনা এবং সহজীকরণ, নীতিনির্ধারণী সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো উন্নয়ন, সৃজনশীল ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, প্রমাণভিত্তিক নীতিনির্ধারণী পদ্ধতি, বেসরকারি খাতের প্রতিক্রিয়া জানানোর ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নিয়ন্ত্রক পরিষেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বিষয়টিকে একীভূত করা।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন