প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান

শীর্ষ চার কোম্পানিতে নারী কর্মী এখনো এক-চতুর্থাংশের কম

বণিক বার্তা ডেস্ক

সিলিকন ভ্যালিতে পুরুষ আধিপত্যের বিরুদ্ধে নারীবাদীরা বরাবরই সোচ্চার। তাদের মতে, বিভিন্ন খাতে নারীদের অগ্রগতি হচ্ছে। বাড়ছে অংশগ্রহণ। তবে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোয় নারী কর্মীর সংখ্যা আশানুরূপ বাড়ছে না। এ অভিযোগ বিবেচনায় নিয়ে নামিদামি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহী করে তোলা, প্রতিষ্ঠানকে নারী কর্মিবান্ধব হিসেবে গড়াসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব কারণে বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোয় নারী কর্মীর সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে তা এখনো মোট কর্মীর এক-চতুর্থাংশের কম। অ্যাপল, ফেসবুক, গুগল ও মাইক্রোসফটে কর্মরত নারী কর্মীদের সংখ্যা পর্যালোচনা করে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন ম্যাগাজিন অয়্যার্ড।

চলতি দশকের শুরুতে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে নারীর অংশগ্রহণের প্রশ্নটি বড় পরিসরে আলোচনা হতে শুরু করে। ওই সময় ফেসবুক, গুগলের মতো টেক জায়ান্টরা এ বিষয়ে ভাবতে শুরু করে। ওই সময় অ্যাপলের সিইও টিম কুক প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের কাছে লেখা এক চিঠিতে কর্মী বহরে বৈচিত্র্য আনার বিষয়ে জোর দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের আরো বহু পথ পাড়ি দিতে হবে। শুধু নারী নয়, বরং প্রতিষ্ঠানটিতে কৃষ্ণাঙ্গ, লাতিন ও এশীয়দের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর ওপর জোর দেয়ার কথা জানান তিনি। ২০১৪ সাল থেকে কর্মী বহরে বৈচিত্র্যসংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে শুরু করে শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো।

অ্যাপলের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত মোট কর্মীর ৮০ শতাংশই ছিল পুরুষ। সাকল্যে ২০ শতাংশ নারী কাজ করত অ্যাপলে। পরে নারী কর্মীর সংখ্যা বাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে অ্যাপলে কর্মরত কর্মীর ৭৭ শতাংশ পুরুষ, ২৩ শতাংশ নারী। কর্মী বহরে বৈচিত্র্য আনতে এশীয়দের প্রাধান্য দিচ্ছে অ্যাপল। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে এশীয় বংশোদ্ভূত কর্মী ছিল ২৩ শতাংশ। বর্তমানে তা ৩৫ শতাংশ উন্নীত হয়েছে। অন্যদিকে অ্যাপলে কর্মরত কৃষ্ণাঙ্গদের হার ৬ শতাংশে অপরিবর্তিত রয়েছে।

নারী কর্মী নিয়োগে সবচেয়ে ভালো করেছে জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক। ২০১৪ সালে ফেসবুকে কর্মরত মোট কর্মীর মাত্র ১৫ শতাংশ ছিল নারী। ৮৫ শতাংশ ছিল পুরুষ। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত নারী কর্মীর হার ৮ শতাংশ বেড়ে ২৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পুরুষ কর্মীর হার কমে দাঁড়িয়েছে ৭৭ শতাংশে। ফেসবুকে কর্মী হিসেবে এশীয়দের অংশগ্রহণ ২০১৪ সালে ছিল ৪১ শতাংশ। বর্তমানে তা ৫২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। টেক জায়ান্টদের মধ্যে ফেসবুকেই সবচেয়ে বেশি এশীয় কাজ করেন।

অনেকটা একই চিত্র দেখা গেছে টেক জায়ান্ট গুগলেও। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত মোট কর্মীর ৮৩ শতাংশই ছিল পুরুষ। সাকল্যে ১৭ শতাংশ নারী কাজ করত গুগলে। পরে নারী কর্মীর সংখ্যা ২৩ শতাংশে উন্নীত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিপরীতে পুরুষ কর্মীর সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৭৭ শতাংশে। ২০১৪ সালে মোট কর্মীর ৩৪ শতাংশ এশীয়দের নিয়োগ দিয়েছিল গুগল। বর্তমানে এ হার আরো বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ শতাংশে। অন্যদিকে ২০১৪ সালে মাইক্রোসফটের মোট কর্মীর ১৭ শতাংশ ছিলেন নারীরা। পুরুষ কর্মীর হার ছিল ৮৩ শতাংশ। বর্তমানে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত কর্মীর ২০ শতাংশ নারী, ৮০ শতাংশ পুরুষ। বর্তমানে মাইক্রোসফটে এশীয় বংশোদ্ভূত কর্মীর হার ৩৯ শতাংশ। ২০১৪ সালে এ হার ছিল ৩৫ শতাংশ।

চারটি শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি নারী কর্মী কর্মরত রয়েছেন অ্যাপল, ফেসবুক ও গুগলে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানেই নারীর সংখ্যা মোট কর্মীর এক-চতুর্থাংশ অতিক্রম করেনি। সামগ্রিক বিচারে সিলিকন ভ্যালিতে নারী কর্মীর সংখ্যা সাকল্যে এক-পঞ্চমাংশ। টেক নির্বাহী হিসেবে কর্মরত রয়েছে ২১ শতাংশ নারী।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কাপুর ক্যাপিটালসের অংশীদার ফ্রেডা ক্লেইন বলেন, প্রযুক্তি খাতে নারীদের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ ধীরে হলেও বাড়ছে। তবে এখনো অনেক পথ বাকি। টেক বিদ্যায় পারদর্শী প্রায় ২০ শতাংশ নারী এখনো বেকার। তাদের কাজে যুক্ত করতে হবে। প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনে নারীদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন