বিশ্বে বাংলাদেশই প্রথম বিচারিক নিরীক্ষা শুরু করেছে : জাতিসংঘে শুনানিতে আইনমন্ত্রী

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বাংলাদেশই বিশ্বে প্রথম দেশ যারা বিচারিক নিরীক্ষা বা জুডিশিয়াল অডিট শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনে নির্যাতন বিরোধ কমিটি ‘ইউএন কমিটি এগেইনস্ট টর্চার’-এর ১৭৭১তম বৈঠকে বাংলাদেশ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে এ তথ্য দেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জে সাত খুন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপরাধের বিষয়ে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। বিচারিক আদালত এ মামলায় ১৬ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদস্যসহ ২৬ অভিযুক্তকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের সক্ষমতা রয়েছে। এটিও কমিটিকে অবগত করতে চাই যে, অভিযুক্তদের একজন সরকারের মন্ত্রীর জামাতা, যা তার বিরুদ্ধে বিচারে কোনো বাধা তৈরি করেনি। এতে তাকেও মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে তিনি বলেন, সংবিধানে পরিষ্কারভাবে নির্বাহী ও বিচার বিভাগকে আলাদা করার কথা বলা হয়েছে। ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়। আর সেই সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্প এবং ৬৪ জেলায় বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের মাধ্যমে বর্তমান সরকার বিচার বিভাগকে আলাদা করার শুধু চেষ্টা করছে না, সেই সঙ্গে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনে নির্যাতন বিরোধ কমিটি ‘ইউএন কমিটি এগেইনস্ট টর্চার’-এর ১৭৭১তম বৈঠকে বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশের কাছে যে তথ্য জানতে চেয়েছে তার বেশির ভাগই জোগাড় করা হয়েছে। তবে কিছু সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে যে তথ্যগুলো চাওয়া হয়েছে, তা আমাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে জোগাড় করতে হবে।

বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং এর ইতিহাস তুলে ধরে জাতিসংঘের শুনানিতে তিনি বলেন, দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র আবারো প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে। এরপর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বিচারহীনতার সংস্কৃতি বদলে দেন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন এবং মানবাধিকারকে প্রচার ও সুরক্ষা করেন। আবারো ২০০১ সালের পর উন্নয়নের এ ধারা থমকে গিয়েছিল, যা আবারো প্রতিষ্ঠা হয়েছে, যখন শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসেন। এরপর থেকে বিচারিক ও আইনি ব্যবস্থাতে সরকার বড় ধরনের সংস্কার করেছে।

শুনানিতে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ব্যাখ্যা ও আগের সরকারের এর ব্যবহারের বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, গত ১০ বছরে ক্ষমতাসীন সরকার একবারের জন্যও বিশেষ ক্ষমতা আইন ব্যবহার করেনি।

বিচারের আগে বন্দি থাকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জামিনের বিষয়ে বাংলাদেশে আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ক্ষেত্রবিশেষে জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং স্বাধীনতার পর থেকে বিচার বিভাগ এটি ব্যবহার করে আসছেন। তবে এটাও সত্যি, বাংলাদেশে যে পরিমাণ মামলা জট রয়েছে, তার ফলে নির্ধারিত ১৮০ দিনের মধ্যে জামিনের বিষয়টি কিছু ক্ষেত্রে বিলম্বিত হয়। তবে নতুন আদালত গঠন এবং বিচারক নিয়োগের মাধ্যমে এ সমস্যা দূর করা হচ্ছে।

কারাগারে অতিরিক্ত বন্দি থাকা নিয়ে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জার্মান সহযোগিতায় অতিরিক্ত বন্দি থাকার বিষয়ে সমাধানে কাজ করছে। এটি সমাধানে সরকার এরই মধ্যে ১৩টি জেলায় নতুন কারাগার স্থাপন করছে। যাতে ১৬ হাজার ৩০৮ জন বন্দির থাকার জায়গা হবে। এছাড়া আরো পাঁচটি কারাগার তৈরি করে ৯ হাজার ৯৩০ জন বন্দিকে থাকার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

শুনানিতে বিচারিক নিরীক্ষা নিয়ে আনিসুল হক বলেন, একমাত্র বর্তমান সরকারই প্রথমবারের মতো বিচারিক নিরীক্ষার সূচনা করেছে। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশই বিশ্বে প্রথম দেশ যারা বিচারিক নিরীক্ষা শুরু করেছে।

দ্রুত সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার নিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, বিশেষ এ আইনটি ১৯৭১ সালে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যার মত অপরাধ করেছিল সেই দোষীদের শাস্তি দেয়ার জন্য করা হয়েছিল। আর তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে আমাদের ৩৮ বছরের বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছে। আমরা এটি আইনসম্মতভাবেই করেছি।

বন্দি থাকা অবস্থায় নির্যাতন বন্ধে আইন সংস্কারে সরকারের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কিনা? এ বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘আমার সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো, হ্যাঁ।’

নির্যাতনবিরোধী আইন দুর্নীতি দমন কমিশন এবং কারা কর্তৃপক্ষের ওপর প্রয়োগ করা যাবে কিনা? এ বিষয়ে তিনি বলেন, হ্যাঁ, এটি দুর্নীতি দমন কমিশন এবং কারা কর্তৃপক্ষের ওপর প্রয়োগ করা যাবে। এ আইনটির ব্যবহার সুনির্দিষ্ট কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধতা নেই। যে-ই নির্যাতন করবে তার ওপরই এ আইন প্রয়োগ করা যাবে, তা সে সরকারি হোক বা বেসরকারি হোক।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন